কাজে বেরোতে হবে। তার আগে ঝটিতি স্নান। এ অনেকটা অভ্যাসের মতো। কেউ স্নান করেন সময় নিয়ে, কেউ আবার তাড়াহুড়োয়। কারও কারও কাছে স্নান এখনও ধর্মীয় প্রথার অঙ্গও বটে। যেমন পুজো করতে হবে বা পুজোয় অংশ নিতে হবে, তার আগে স্নান করা হয় পবিত্রতা রক্ষায়।
ভাবনাচিন্তা যেমনই থাকুক না কেন, পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় স্নান করা আবশ্যিক। কিন্তু সাবান মেখে স্নান করলেই কি দিনভর পরিচ্ছন্নতা বজায় থাকে? কত বার কোন সময়েই বা স্নান করা উচিত?
এ নিয়ে নানা জনের নানা মত। কেউ স্নান করেন এক বেলা। কেউ দিনের শেষেই স্নান করা ঠিক বলে ভাবেন। কারও আবার এক অথবা দুই বারে হয় না, স্নান করেন বার বার। কিন্তু এই যে নানা জনের নানা মত, তার মধ্যে ঠিক কোনটি? পরিচ্ছন্নতার নিরিখেই বা কোন সময়ে, কত ক্ষণ স্নান জরুরি?
বেঙ্গালুরুর বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক রুবি সচদেবের কথায়, গরমের দিনে অনেকেই বার দুয়েক স্নান করেন। দু’বার স্নানে স্বস্তি মেলে। শরীর তরতাজা লাগে। তবে এই দু’বার স্নান ত্বকের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে যদি বার বার সাবান ঘষা বা শ্যাম্পু করা হয়। অতিরিক্ত সাবান, শ্যাম্পুর ব্যবহার ত্বকের জন্য ভাল নয়। এতে ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। আবার গরম জলে স্নান আরামদায়ক হলেও তাতে গায়ের চামড়া রুক্ষ হয়ে যেতে পারে। সে কারণে ঘরের তাপমাত্রায় থাকা জলে স্নান করাই যথেষ্ট।
সে তো গেল ত্বকের কথা। কিন্তু সময় এবং পরিচ্ছন্নতা? কোন সময় স্নান করা ভাল? ব্রিটেনের মাইক্রোবায়োলজিস্ট, তথা অধ্যাপক প্রিমরোজ় ফ্রিস্টোনের মত, স্নান করা দরকার সকালে উঠে। তার কারণও রয়েছে। তাঁর কথায়, নোংরা বা ততটা পরিষ্কার নয় এমন বিছানার চাদর থেকেও শরীরে ময়লা এবং ব্যাক্টেরিয়া আসতে পারে। ঘাম, ব্যাক্টেরিয়া, ত্বকে জমা মৃত কোষ পরিষ্কারের জন্যই সকালে উঠে ভাল করে স্নান করা জরুরি। আবার একই ভাবে রাতে স্নানের পক্ষেও মত তাঁর। দিনভর ঘোরাঘুরির ফলে ত্বকে ধুলো-ময়লা জমে। ঘামও হয়। রোগজীবাণুও শরীরের সংস্পর্শে আসে। সে সব পরিষ্কার না করে শুতে যাওয়া মানে বিছানার চাদরে সে সব ছড়িয়ে দেওয়া। চাদর ময়লা করে তোলা। আর তাতে রাতভর ঘুমোনো পরিচ্ছন্নতার জন্য সঠিক নয়।
আরও পড়ুন:
চিকিৎসক রুবি সচদেব বলছেন,‘‘ যাঁরা কাজের সূত্রে বাইরে যান, দিনভর ঘোরাঘুরি করেন, তাঁদের জন্য শোয়ার আগে স্নান করা জরুরি। পরিচ্ছন্নতার জন্যই তা আবশ্যক।’’
তবে শুধু স্নানই যথেষ্ট নয়। মাইক্রোবায়োলজিস্টের মত, নজর দেওয়া প্রয়োজন বিছানার চাদরে। অপরিষ্কার চাদর বা স্বল্প ময়লা বিছানাও স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে। তাই ঘন ঘন চাদর বদলানো এবং কাচা চাদর পাতা জরুরি। বিশেষত গরমের দিনে ঘাম বেশি হলে।
আর কী জরুরি?
ত্বকের রোগের চিকিৎসকদের পরামর্শ, সুগন্ধিবিহীন, মৃদু সাবান বা শ্যাম্পুই মাখা দরকার। অনেকেই স্বাস্থ্যের কথা ভেবে স্নানের সময় অতিরিক্ত সাবান মাখেন। ফেনা হলেই গা পরিষ্কার হবে এমনটাই ভাবনা। অনেকে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল বডি শ্যাম্পুও বেছে নেন। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া তা ব্যবহার করলে ত্বকের ক্ষতিও হতে পারে। ত্বক রুক্ষ হয়ে পড়তে পারে।
ভারসাম্যই পরিচ্ছন্নতার চাবিকাঠি
অতিরিক্ত স্নান নয়, অবার সাবান মাখায় পুরোপুরি অবহেলাও নয়। স্নান এবং পরিষ্কার বিছানা, দুইয়ের মধ্যেই লুকিয়ে পরিচ্ছন্নতার চাবিকাঠি।