জন্মাষ্টমীতে অনেকেই উপোস করেন। এ বারের জন্মাষ্টমীতে রাত থেকে পর দিন সকাল অবধি না খেয়ে থাকবেন অনেকেই। বিশেষ করে বাড়ির মা-ঠাকুরমা বা বয়স্কেরা উপোস করেই পুজো দেবেন। এখন ঘরে ঘরেই সুগার-প্রেশারের রোগী। গ্যাস-অম্বলের সমস্যাও রয়েছে। তার মধ্যেই যদি উপোস করে থাকতে হয়, তা হলে নিয়ম মানতেই হবে। না হলে দিনের শেষে শরীর খারাপ হতে বাধ্য।
জন্মাষ্টমীর পুজো মানে লুচি, তালের বড়া, ক্ষীর বা পায়েস হবেই। উপোস ভেঙেই সেই সব খেলে অম্বলের সমস্যা আরও বাড়বে। আবার পুজোর প্রসাদ না খেয়েও থাকা যাবে না। তা হলে উপায়?
এই বিষয়ে পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তীর পরামর্শ, উপোস করলেও তরল খাবার বেশি পরিমাণে খেতে হবে। নির্জলা উপোস না করাই ভাল, বিশেষ করে যদি অম্বলের ধাত থাকে অথবা রক্তচাপের ওষুধ খান। উপোস করলে ভারী খাবার খাওয়া যাবে না, ডাবের জল, লস্যি, লেবুর জল খেতে হবে।
দিন শুরু হোক ডিটক্স পানীয় দিয়ে
উপোস করুন, তবে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে জল ও ডিটক্স পানীয় খান, তা হলে সমস্যা কম হবে, সকালে ঈষদুষ্ণ জলে সামান্য সৈন্ধব লবণ ও আধখানা লেবুর রস দিয়ে খেলে শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বেরিয়ে যাবে। অম্বলের ধাত থাকলে লেবুর রসের বদলে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
আরও পড়ুন:
দিনভর খেতে হবে তরল খাবার
উপোস করলেও শরীরে জলের অভাব যেন না ঘটে। ফলের রস, ঘোল, শরবতের মতো তরল সারা দিন ধরে খেতে হবে। ডাবের জল বা বেলের পানা খেলে ভাল। উপোস করলেও ওষুধ বাদ দেওয়া যাবে না। রোজের যা যা ওষুধ খান, তা খেতেই হবে। উপোস করলে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা দেখা দেয়, তা হল ডিহাইড্রেশন। শুধু জলের ঘাটতিতে নয়, ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বিগড়ে গেলেও তা হতে পারে। সেই সঙ্গে শরীরে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই শরীর ঠিক রাখতে পর্যাপ্ত তরল খাবার খেতেই হবে।
উপোস ভাঙার পরে কী খাবেন?
পুষ্টিবিদের পরামর্শ, উপোস ভাঙার পর খিদে মরে গেলেও একেবারে খালি পেটে শুতে যাবেন না। সারা দিনের ধকলের পর কিছু না কিছু অবশ্যই মুখে দিয়ে শুতে যান। উপোসের পর ভাজাভুজি, বেশি তেলমশলা দেওয়া খাবার খাবেন না। জন্মাষ্টমীর দিন লুচি, তালের বড়া, পায়েস বাড়িতে হবেই। এই সব বেশি পরিমাণে খেতে শুরু করলে ক্যালোরির মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। সারা দিন উপোসের কারণে বিপাকক্রিয়ার হার কম থাকবে, তার উপরে ভাজাভুজি বা ভারী খাবার খেলে বদহজমের সমস্যা দেখা দেবে।
এমন কিছু খেয়ে উপোস ভাঙুন, যাতে শর্করার পরিমাণ বেশি। খেজুর, কলা জাতীয় ফল খেয়ে উপোস ভাঙতে পারেন। এই জাতীয় ফল রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে শক্তি জোগায়। এ ছাড়া খাবারের তালিকায় নারকেল, কাজুবাদাম, কাঠবাদাম, আখরোটও রাখতে পারেন।
ফল খেলে আপেল, কলা, নাশপাতি, বেদানা, পেয়ারা জাতীয় ফল খেতে পারেন। টক জাতীয় ফল না খাওয়াই ভাল।
লুচি খেতে হলে একটা খান। তালের বড়া একটি বা দু’টি, পায়েস খেলে এক চামচ— এই ভাবে পরিমিত খান।
সাবুও খেতে পারেন। সাবুর সঙ্গে কলা ও কিছু ফল মিশিয়ে নিন। তা হলে শরীরের আর্দ্রতা বজায় থাকবে। এখন অনেকেই ওট্স খান। উপোস ভাঙার পর খেতে পারেন ওট্স-ক্ষীর। প্যানে সামান্য ঘি দিয়ে ওটস, দুধ এবং শুকনো ফল দিয়ে বানিয়ে ফেলুন ক্ষীর। অথবা কলা, দই, আখরোট ও মধু মিশিয়ে স্মুদি বানিয়ে খেতে পারেন।