ভারতে প্রায় প্রতিটি পরিবারেই খুঁজলে অন্তত এমন এক জন পাওয়া যাবে, যাঁর রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক নয় এবং তার জন্য নিয়মিত ওষুধও খান। গত কয়েক বছর ধরে ডায়াবিটিস দ্রুত গতিতে বেড়েই চলেছে। এতটাই এই বৃদ্ধি যে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিশেষ করে কমবয়সিদের মধ্যে ডায়াবিটিসের প্রবণতা নিয়ে সতর্ক হতে বলেছেন মোদী। কারণ, ডায়াবিটিস এমন একটি রোগ, যার কোনও স্থায়ী প্রতিকার নেই। জীবনযাপনে বদল এনে, ওষুধের মাধ্যমে এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় মাত্র। আর নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে তা শরীরকে অবনতির পথে টেনে নিয়ে যেতে থাকে।
ডায়াবিটিস শরীরে ডেকে আনে হাজার রোগ। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি হয়। যাঁরা ডায়াবিটিসে আক্রান্ত তাঁদের আরও বড় অসুখের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য সতর্ক থাকতে হবে। চিকিৎসক নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, বড় রোগের আশঙ্কা কমাতে ডায়াবেটিকদের বছরে অন্তত এক বার কিছু নিয়মিত পরীক্ষা করানো জরুরি। কী কী পরীক্ষা রয়েছে সেই তালিকায়?
রেটিনার পরীক্ষা: ডায়াবিটিস থাকলে রেটিনা গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যা ডেকে আনে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির মতো রোগ। ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে রেটিনার রক্তবাহী সরু ধমনীগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে এক প্রকার ফ্লুইডের ক্ষরণ শুরু হয়। দৃষ্টিশক্তি কমতে শুরু করে। পরবর্তী পর্যায়ে ধমনীতে রক্ত চলাচলের সমস্যা আরও বেড়ে যায়। ফলে রেটিনার সব অংশে ঠিক মতো অক্সিজেন পৌঁছতে পারে না। চোখে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এই সমস্যা অন্ধত্বও ডেকে আনে। তাই ডায়াবিটিস থাকলে বছরে অনন্ত এক বার চক্ষু পরীক্ষা করিয়ে দেখে নিতে হবে রেটিনা ঠিক আছে কি না।
ইকো, ইসিজি: ডায়াবিটিসের রোগীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হার্টের পরীক্ষা করান না। ডায়াবিটিস রোগীদেরই হার্টে ব্লক, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেলিয়োরের মতো সমস্যা বেশি হয়। ডায়াবিটিস-জনিত হার্টের অসুখের নাম ‘ডায়াবিটিক কার্ডিয়োমায়োপ্যাথি’। তাই আগে থেকেই সাবধান হওয়া জরুরি। বছরে অনন্ত এক বার ইসিজি করানো জরুরি। এবং প্রয়োজনে ইকো করাতে হবে।
লিভার ফাংশন টেস্ট: এমনিতে জীবনযাপন সংক্রান্ত বিবিধ সমস্যার জন্য লিভারের নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন কমবয়সিরাও। বিশেষ করে নন অ্যালকোহোলিক ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় ভোগেন বহু মানুষ। ডায়াবিটিস থেকেও লিভারের ক্ষতি হতে পারে, তার জন্য বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। ডায়াবিটিস রোগীদের বছরে অনন্ত এক বার তাই লিভার ফাংশন টেস্ট করানো জরুরি। এর পাশাপাশি আলট্রাসাউন্ড করিয়ে দেখে নেওয়া জরুরি লিভারের আশপাশে ফ্যাট জমেছে কি না।
আরও পড়ুন:
ইউরিন টেস্ট: ডায়াবিটিসের রোগীদের মূত্রনালিতে সংক্রমণের ঝুঁকিও বেশি থাকে। তাই নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর ইউরিনের রুটিন ডেস্ট ডায়াবেটিকদের জন্য করানো ভীষণ জরুরি।
ইজিএফআর টেস্ট: কিডনির অসুখ ধরা পড়ে অনেক দেরিতে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, দুটি কিডনিই ৮০-৯০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর আমরা বুঝতে পারি। ওজন কমে যাওয়া, খিদে না পাওয়া, ক্লান্তি, গোড়ালি ফোলা, প্রস্রাবে রক্ত, অনিদ্রা, চুলকানি, পেশিতে খিঁচুনি এবং মাথাব্যথার মতো লক্ষণগুলিকে কখনওই অবহেলা করা উচিত নয়। একটা বয়সের পর থেকেই নিয়মিত কিডনির যাবতীয় পরীক্ষা করানো উচিত। ডায়াবিটিসের সমস্যা থাকলে বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে রোগীদের। কিডনির কার্যকারিতা ঠিকঠাক আছে কি না তা যাচাই করার জন্য তাঁদের বছরে এক বার ইজিএফআর টেস্ট করানো জরুরি।