ডায়াবিটিসের মতোই থাইরয়েডের সমস্যাও এখন ঘরে ঘরে। মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত থাইরক্সিন হরমোনের মাত্রার তারতম্য হলেই বিগড়ে যেতে পারে শরীর। হরমোন বেশি নিঃসরণ হলে এক রকম সমস্যা হয়, মাত্রা কমে গেলে হয় আর এক রকম। থাইরয়েডের মাত্রা বিগড়ে গেলে কেউ যেমন স্থূলত্বের সমস্যায় ভোগেন, তেমনই কারও ওজন কমে যেতেও পারে। দেখা দিতে পারে ক্লান্তি। তৈরি হতে পারে আরও নানা সমস্যা। সময় থাকতে থাইরয়েডের চিকিৎসা না করালে শারীরিক সমস্যা বাড়তে পারে। ঝুঁকি থেকে যায় ক্যানসারেরও। থাইরয়েডের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি, কিন্তু খাওয়াদাওয়ার বিষয়ে সমান্য খেয়াল রাখলেই এই সমস্যার মোকাবিলা করা যেতে পারে। সঠিক খাওয়াদাওয়া যেমন থাইরয়েডের অসুখ বশে রাখতে পারে, তেমনই ভুল খাদ্যাভ্যাস ক্ষতিও করতে পারে।
থাইরয়েডের সমস্যাকে বাড়িয়ে দিতে পারে যে খাবারগুলি:
সয়াবিন: সয়াদানা, সয়াবিন থেকে পাওয়া যায় যে সমস্ত খাবার সেগুলি কিন্তু থাইরয়ডের সমস্যা বা়ডিয়েও দিতে পারে। বিশেষত তা যদি দু’দিন অন্তর খাওয়া হয়। এতে মেলে ফাইটোইস্ট্রোজেন এবং গোইট্রোজেন। প্রোটিনে ভরপুর সয়াবিন উপকারী হলেও, এটি থাইরয়েড হরমোনের নিঃসরণকে প্রভাবিত করতে পারে, এমনকি থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে রাখার ওষুধের শোষণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। ২০১৫ সালে ‘জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল এন্ডোক্রিনোলজি এবং মেটাবলিজম’-এর এক গবেষণাপত্রে প্রকাশ, সয়াবিন থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং আয়োডিনের ঘাটতি তৈরি করতে পারে। সেই কারণে থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে সয়া দুধ, সয়াবিন খেতে হবে পরিমিত পরিমাণে।
গ্লুটেন: থাইরয়েডের কোনও কোনও অসুখের সমস্যা তৈরি করতে পারে গ্লুটেন। ‘নিউট্রিয়েন্টস’ নামক জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র জানাচ্ছে, গ্লুটেন অন্ত্রের স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। তার ফলে থাইরয়েড হরমোনের নিঃসরণেও হেরফের হতে পারে। ময়দার খাবার এড়িয়ে চলাই ভাল।
প্রক্রিয়াজাত খাবার: প্রক্রিয়াজাত খাবারে অতিরিক্ত নুন থাকে। বিশেষত হাইপোথাইরয়েডিজ়মের সমস্যা থাকলে এই ধরনের খাবার হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। থাইরয়েডের রোগীদের অতিরিক্ত নুন খাওয়ার প্রবণতা কার্ডিয়োভাস্কুলার অসুখের কারণ হতে পারে।
ফ্যাটযুক্ত খাবার: উচ্চ ফ্যাটযুক্ত ডায়েটও থাইরয়েড রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। স্বাস্থ্যকর ফ্যাটযুক্ত খাবার পরিমিত পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। তবে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার ফলে যাঁদের ওজন হু হু করে বাড়ছে, তাঁদের সতর্ক হওয়া দরকার। ফ্যাট যুক্ত এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার হরমোনের মাত্রার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
কৃত্রিম শর্করা: মিষ্টি, চিনি জাতীয় খাবার ডায়াবেটিকদের জন্য যেমন ক্ষতিকর, থাইরয়েডের রোগীদের জন্যও তা-ই। ‘এন্ডোক্রিনোলজি অ্যান্ড মেটাবলিজ়ম ক্লিনিকস অফ নর্থ আমেরিকা'র ২০১৮ সালের গবেষণাপত্রে প্রকাশ, চিনি খাওয়ার প্রবণতা বিপাকহারে প্রভাব ফেলতে পারে। থাইরয়েডের সমস্যায় বিষয়টি মাথায় রাখা দরকার। তার কারণ, হরমোনের মাত্রার তারতম্যে এমনিতেই এমন রোগীদের বিপাকহারে সমস্যা দেখা দেয়।
এ ছাড়াও কিছু কিছু ফল, যেমন স্ট্রবেরি, বাদামের মধ্যে চিনেবাদাম, মিলেট জাতীয় খাবার থাইরয়েডের অসুখে মাত্রা জেনে এবং মেনে খেতে হবে।