ভাতের সঙ্গে একটু ডাল না হলে বাঙালির চলে না। বাংলায় যেমন ভাতের পাতে পাতলা মুগ, মুসুর, বিউলি, অড়হর ডাল খাওয়ার চল, অন্যান্য রাজ্যে আবার রুটির সঙ্গে ডাল খাওয়ার রেওয়াজ। ভাত হোত বা রুটি— সঙ্গে ডাল খাওয়া ভাল, বলেন চিকিৎসক থেকে পুষ্টিবিদেরা।
উচ্চ মাত্রার প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন, খনিজ— শরীরের জন্য যা কিছু ভাল, তার প্রায় সবটাই মেলে ডালে। তা ছাড়া, তরল ডাল শরীরে জলের ঘাটতিও কিছুটা হলে মিটিয়ে দেয়। তবে উপকারী হলে কী হবে, কারও কারও আবার ডাল খেলেই পেটের সমস্যা হয়। বদহজম, গ্যাস হয়। সেই ভয়েতে কি ডাল বাদ দেবেন? পুষ্টিবিদেরা বলছেন, একটি উপায় অনুসরণ করলে এমন সমস্যার সমাধান হতে পারে।
কী সেই সমাধান?
রান্নার আগে ডাল ধুয়ে নেওয়াই নিয়ম। এর ফলে ডালে থাকা ধুলোবালি দূর হয়। কিন্তু ডাল ভিজিয়ে রাখেন কি? পুষ্টিবিদ অনন্যা ভৌমিক এবং লিমা মহাজনের কথায়, রান্নার আগে কিছু ক্ষণ ডাল ভিজিয়ে রাখলে অনেক সমস্যারই সমাধান সম্ভব। তা ছাড়া পুষ্টিগুণ শোষণের জন্যও এই ধাপটি জরুরি। পুষ্টিবিদ অনন্যা বলছেন, ‘‘রাতভর ডাল ভিজিয়ে রেখে তার পর রান্না করে খেলে বদহজমের সমস্যা কমানো যেতে পারে। কারণ, এতে বদহজমের কারণ, অলিগোস্যাকারাইডস বাদ চলে যায়।’’
আরও পড়ুন:
অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্টস বাদ যায়
ডালের মধ্যে থাকে ফাইটিক অ্যাসিড, ট্যানিন জাতীয় উপাদান। শরীরের জন্য উপকারী আয়রন, জ়িঙ্ক, ক্যালশিয়াম শোষণে বাধা দেয় এই উপাদানগুলি। এদের বলে অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্টস। ডাল ভিজিয়ে রাখলে অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্টস বাদ যায়। তার ফলে, শরীরের পক্ষে ডালের পুষ্টিগুণ শোষণ করা সহজ হয়ে যায়।
অলিগোস্যাকারাইড
ডালে থাকে অলিগোস্যাকারাইড। এটি এক ধরনের শর্করা। এর জন্য হজমে সমস্যা হয়। পেট ফোলার মতো উপসর্গ দেখা দেয় অনেক সময়। কিন্তু ডাল ভিজিয়ে রাখলে এই ‘কমপ্লেক্স সুগার’টি ভেঙে যায় এবং ধুয়ে যায়। ফলে হজমে অসুবিধা হয় না। পাশাপাশি, ডালে থাকা লেক্টিনও হজমে ও পুষ্টিগুণ শোষণে সহায়ক নয়। বেশ কিছু ক্ষণ ডাল ভেজালে এই উপাদানটির মাত্রাও কমে যায়।
অনন্যা বলছেন, ‘‘আরও কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখলেও ডালের গুণাগুণ বেশি মিলবে, হজমের সমস্যা কমানো যাবে। ডাল দু’তিন দিন ভিজিয়ে রাখলে তা থেকে অঙ্কুর বেরোয়। এই ডাল খাওয়া আরও ভাল।এতে ডালের ফাইটেট্স কমে যায়। এটি এক ধরনের অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্ট। এ ছাড়া উৎসেচকের কার্যকারিতাও এতে বৃদ্ধি পায়। ফলে পুষ্টি শোষণ সহজ হয়। হজমের সমস্যায় যদি ডাল মজিয়ে খাবার বানানো যায়, তা হলে উপকার মিলবে। যেমন ইডলি, দোসার মতো খাবার খেলে প্রোটিন পরিপাকের সমস্যা থাকবে না।’’
কোন ডাল কত ক্ষণ ভেজাবেন?
মুগ ডাল, লাল মুসুর, অড়হর ডাল ভেজাতে হবে ৩০ মিনিট।
খোসা-সহ মুগ, খোসা-সহ বিউলির ডাল, ছোলার ডাল ভিজিয়ে রাখুন ২-৪ ঘণ্টা।
রাজমা, কাঁচা ছোলা, কাবলি ছোলা ভিজিয়ে রাখতে হবে রাতভর।