স্বাস্থ্যই সম্পদ। সুস্থ থাকলে, আশেপাশের পৃথিবীও যেন অর্থবহ হয়ে ওঠে। এমনই বিশ্বাস অভিনেত্রী অঙ্কিতা লোখান্ডের। আর তাই জীবনের প্রতিটি দিন সেই উদ্দেশ্যকেই সফল করার চেষ্টা করেন তিনি। মনঃসংযোগ, কিছু ঐতিহ্য পালন আর কঠোর শৃঙ্খলায় ভরা যাপন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিজের স্বাস্থ্য এবং মনের যত্ন নেন তিনি। তাই জীবনের এত ওঠানামার পরেও সংসার ও পেশা সামলে, নৃত্যকলা অভ্যাস করে আনন্দে আছেন তিনি। অনেকের কাছেই উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে অঙ্কিতার দিনযাপন।
সম্প্রতি অঙ্কিতা নিজের দিনলিপি প্রকাশ করলেন অনুরাগীদের জন্য—
সকাল শুরু হয় রুপোর গ্লাসে রাতভর ভেজানো কেশর-জল পান করে। রাতে ২-৩টি কেশর ভিজিয়ে রেখে দেন অঙ্কিতা। তার পর সুর্যের আলোয় সিক্ত হয়ে খালি পায়ে হাঁটেন তিনি। মাটির স্পর্শ দিয়েই সকাল শুরু হয় তাঁর। অঙ্কিতা মনে করেন, জল নাকি সব শুনতে পায়। জলেই তিনি ইতিবাচক শক্তির সন্ধান পান। তাই জলের সঙ্গে কথা বলেন, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রকৃতি আপনাদের কথা শুনতে পায়। তাই সততা, বিশ্বাস ও প্রেমের অনুভূতি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলা উচিত। সে উত্তর দেবে।’’ এই অনুশীলনই নাকি তাঁর গোটা দিনের মেজাজ ও শক্তির উৎস। এর পর স্বামী ভিকি জৈন এবং অঙ্কিতা এক গ্লাস ডিটক্স ওয়াটার পান করেন। তাতে থাকে, মেথির বীজ, দারচিনি, মৌরি, জোয়ান, রসুন, নিজের গাছের অ্যালোভেরা জেল, ত্রিফলা, ব্রাহ্মী, আমলকির গুঁড়ো, অশ্বগন্ধা, কালোজিরের তেল, দেশি গরুর ঘি, লেবুর রস, শিলাজিৎ। সারারাতের ভেজানো বাদামও খান দম্পতি।
অঙ্কিতার ত্বকচর্চার রুটিন মূলত শীতল জলের উপর নির্ভরশীল। ছবি: সংগৃহীত।
রান্নাঘরের উপকরণ ব্যবহার করেই রোজের সৌন্দর্যচর্চার রীতি তৈরি করেছেন অঙ্কিতা। ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ দূর করার উপায়ও তিনি খুঁজে পেয়েছেন প্রকৃতির মাঝেই। রোজ তিনি তিসির বীজ, মেথি বীজ, ভিটামিন ই ক্যাপসুল, অ্যালোভেরা জেল এবং চালের জল মিশিয়ে বরফের ট্রেতে রেখে দেন। প্রতি দিন সকালে সেটি মুখে ঘষে নেন। ঘুম থেকে ওঠার পরেই এই অভ্যাসের ফলে তাঁর ত্বক জলের ছোঁয়া পায়, হাই়ড্রেটেড হয়ে যায় বলে দাবি অঙ্কিতার। টেলি-নায়িকার কথায়, ‘‘আপনি ঘুম থেকে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এগুলি আপনার ত্বককে হাইড্রেট করে। আমি প্রায় ২-৩ মাস ধরে এটি করছি এবং আশ্চর্য ফল পাচ্ছি। বরফের এই কিউবগুলি শীতল এবং পুষ্টিকর। ফলে তাৎক্ষণিক হাইড্রেশন দেওয়ার পাশাপাশি রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং ত্বককে টানটান করে। আমার ত্বকও আমার সঙ্গে সঙ্গে সজাগ হয়ে ওঠে।’’ অঙ্কিতার ত্বকচর্চার রুটিন মূলত শীতল জলের উপর নির্ভরশীল। আর তাই এর পাশাপাশি প্রতি দিন সকালে বরফ জলে মুখ ডুবিয়ে রাখার রীতিও অনুসরণ করেন। অঙ্কিতা যদিও এই রীতির কথা জেনেছেন ইনস্টাগ্রাম থেকেই, কিন্তু নিজের উপর প্রয়োগ করে দেখেছেন, তিনি উপকৃত হচ্ছেন। অভিনেত্রী বরফ জলের মধ্যে শসার টুকরো এবং লেবুর জল মিশিয়ে নেন রোজ। তাঁর মতে, এই শীতল জল স্নায়ু স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে মনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দ্রুত কমে যায়। অঙ্কিতা বলছেন, ‘‘ত্বককে টানটান করা, ফোলা ভাব কমানোর পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তি এনে দেয় এই জল। আমি ১০ বার মুখ ডোবাই এতে। এ থেকে গাঁটে ব্যথা ও প্রদাহজনিত সমস্যা থেকেও মুক্তি মেলে।’’
আরও পড়ুন:
শরীরচর্চা এবং মানসিক সুখকে একত্রিত করার জন্য তিনি বেছে নিয়েছেন নৃত্যকে। অঙ্কিতা যে নাচে অত্যন্ত দক্ষ, সে তথ্য তাঁর সমাজমাধ্যমে চোখ রাখলেই জানা যায়। তাঁর মতে, শরীরচর্চার সবচেয়ে ভাল উপায় হল নাচ করা। সকালে তাই ২৫ মিনিট টানা নৃত্য অনুশীলন করেন অঙ্কিতা। কখনও ফ্রি স্টাইল, কখনও বা জ়ুম্বা, কখনও বা হেঁটেও শরীরচর্চা করেন তিনি। ওজন ঝরানো বা পেশি মজবুত করা তাঁর লক্ষ্য নয়। মানসিক প্রশান্তি, আনন্দই তাঁর কাছে শরীরচর্চার উদ্দেশ্য।
রাতের বেলা একটি বিশেষ পাউডার বানিয়ে খান অঙ্কিতা। হাড় এবং অস্থিসন্ধির স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য জিরে, জোয়ান এবং মৌরী শুকনো খোলায় ভেজে নেন। তার পর গুঁড়ো করে রাতে ঈষদুষ্ণ জলের সঙ্গে পান করেন। এটি নাকি তাঁর হজমের সমস্যা দূর করে, শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বার করে এবং ঘুমের মান উন্নত করে। এ ভাবেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ওষুধের পরিবর্তে ঘরোয়া উপকরণে নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন নেন অঙ্কিতা।