রাতে ঘর অন্ধকার করে বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়ার সময়টা একান্তই নিজের। দিনভর পরিশ্রম, দুশ্চিন্তা, সংসার ও পেশাগত দায়িত্ব সামলে ওই সময়টাকেই বড় আপন বলে মনে হয়। আর নিজের সময় মানেই নিজের পছন্দের কিছু কাজ। একটা সময়ে রাতে শুয়ে বই পড়ার অভ্যাসই ছিল অনেকের। অথবা ঘুমোনোর আগে সারাদিনের ছোট ছোট স্মৃতিগুলি ডায়েরির পাতায় ধরে রাখাও নেশা ছিল। সময় বদলের সঙ্গে সঙ্গে পছন্দগুলিও বদলে গিয়েছে। এক টুকরো সময়ে তখন বিছানার নিশ্চিন্ত আরামে হাতে মোবাইলই তুলে নিচ্ছেন বেশির ভাগ মানুষ। স্ক্রল করলেই গোটা বিশ্বের নানা খবর চলে আসছে হাতের মুঠোয়। অদ্ভুত ভিডিয়ো দেখা বা ভাইরাল খবর পড়া ইদানীং নেশার পর্যায়ে চলে গিয়েছে। আর এই নেশাই সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মন ভাল করতে ডিজিটাল ডিভাইসের প্রতি এমন অমোঘ আকর্ষণই শারীরিক ও মানসিক বিপর্যয় ডেকে আনছে নীরবে।
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ নিয়ে বিশ্ব জুড়েই হইচই চলছে। ডিটক্স অর্থ টক্সিন ছেঁটে ফেলা। মোবাইল, ল্যাপটপ, ট্যাবের মতো বিদ্যুতিন যন্ত্রপাতিগুলি থেকে মোহ ত্যাগ করার নামই ‘ডিজিটাল ডিটক্স’। এই পথ খুব সহজ নয়। অবসর সময়ে হাতে মোবাইল উঠে আসবেই। তাই এই নেশা কাটাতে বিকল্প এমন কিছু উপায় বার করতে হবে, যা মোবাইলের মোহ কাটাতে পারে সহজেই। কী কী সেই উপায়?
ফিরিয়ে আনুন বই পড়ার অভ্যাস
শুরুতে সমস্যা হবে। তবে টানা কিছুদিন পছন্দের বইগুলি ফের বার করে উল্টেপাল্টে দেখুন। আবারও পড়ার ইচ্ছা জেগে উঠবে। বই কেনা শুরু করুন। এতে পড়ার ইচ্ছাও বাড়বে। অনলাইনে শুধু জামাকাপড় না দেখে, কী কী নতুন বই প্রকাশিত হচ্ছে তার খোঁজ রাখাও শুরু করুন।
আরও পড়ুন:
সারা দিনের স্মৃতি
ডায়েরি লেখার অভ্যাস শুরু করতে পারেন। সারা দিন কী কী কাজ হল, কার সঙ্গে পরিচয় ঘটল, ছোট ছোট স্মৃতিগুলি লিপিবদ্ধ করে রাখুন। এতে স্মৃতির পাতাও সতেজ থাকবে, লেখার অভ্যাসও তৈরি হবে। লেখার জন্য পড়তে হবে। কোনও বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি সে সম্পর্কে নিজের উপলব্ধিও লিখে ফেলুন। আজ যদি দু’কথা দিয়ে লেখা শুরু হয়, কাল চার কথায় প্রকাশ করা কঠিন নয়।
মন স্থির রাখতে ধ্যান
রাতে শুয়ে মোবাইল ব্যবহার করলে ঘুমের হরমোন মেলাটোনিনের ক্ষরণ কমে যায়। ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। ঘুম না এলে ফের মোবাইলেই চোখ যায়। এই মোহ কাটাতে তাই স্থির হয়ে বসে চোখ বন্ধ রেখে কিছু ক্ষণ ধ্যান করার চেষ্টা করুন। মন বসবে না প্রথম প্রথম। হাবিজাবি চিন্তা উঁকিঝুঁকি দেবে। সে সব নিয়েই শান্ত হয়ে বসতে হবে। ওই সময়ে মোবাইল বন্ধ রাখা বা নোটিফিকেশন বন্ধ করে দেওয়া জরুরি।
পছন্দের সুরে কাটবে হতাশা
নিয়মিত গান শুনলে মন এবং মস্তিষ্কের ভিতরে ‘সুখী’ হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে শরীরের তো বটেই, মনের অসুখবিসুখও কাছ ঘেঁষতে পারে না। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার চাবিকাঠিও আছে গানের মধ্যে। গানের সুরে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস উদ্দীপিত হয়, কর্টিসল নামে ‘স্ট্রেস হরমোন’-এর ক্ষরণ কমে যায়। অতিরিক্ত উৎকণ্ঠাও বশে আসে।