স্বাস্থ্যসংক্রান্ত প্রতিবেদন হোক বা সমাজমাধ্যম— পুষ্টিবিদেরা বার বার বলেন, দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় থাকা দরকার ওমেগা থ্রি এবং সিক্সের মতো ফ্যাটি অ্যাসিড। সেই চাহিদাপূরণ হয় সামুদ্রিক মাছে। কোন মাছে মেলে উচ্চমাত্রার ফ্যাটি অ্যাসিড, গুগলে গিয়ে সার্চ করলেই নাম আসে স্যামন, টুনা, হেরিং-এর। কিন্তু এই সমস্ত মাছ ভারতে তেমন মেলে না। মিললেও সহজলভ্য নয়। বদলে ভারতে পাওয়া যায় এমন কোন মাছ পাতে রাখতে পারেন?
পুষ্টিবিদ অনন্যা ভৌমিক জানাচ্ছেন, ওমেগা থ্রি এবং ওমেগা সিক্স-দুই ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিডই স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল। এই দুই উপাদান চেনা মাছেও মেলে। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রেটিনা, হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখে। সামুদ্রিক বিভিন্ন মাছে মেলে ইপিএ এবং ডিএইচ এ। ডিএইচএ মূলত মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য কার্যকর। আবার ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে, হরমোন সংশ্লেষ এবং প্রজননের জন্যও তা জরুরি।
জরুরি এই ফ্যাটি অ্যাসিডের চাহিদাপূরণ হতে পারে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের মাছ থেকেই। অনন্যা বলছেন, ‘‘বেশ কিছু মাছে ওমেগা থ্রি এবং ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। সেই তালিকায় ইলিশ পমফ্রেট থেকে সুরমাই, কাতলা, রুই, পরিচিত অনেক মাছই আছে।’’
পরিচিত রুই মাছেও মেলে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। ছবি: সংগৃহীত।
কোন মাছে, প্রতি ১০০ গ্রামে কত পরিমাণ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড মেলে?
ইন্ডিয়ান ম্যাকারেল বা বাঙ্গদা (বাংলায় এই মাছ কাজল-গৌরী নামে পরিচিত) ১২০০, ২২০০ মিলিগ্রাম
সার্ডিন বা মথি, পেডভি ১০০০-১৮০০ মিলিগ্রাম
ইলিশ ১৫০০-২০০০ মিলিগ্রাম
টুনা বা কেরা ৬০০-১২০০ মিলিগ্রাম
সুরমাই বা কিং ফিশ ৫০০-১০০০মিলিগ্রাম
পমফ্রেট ৩০০-৭০০ মিলিগ্রাম
রুই ২০০-৪০০ মিলিগ্রাম
কাতলা ১৫০-৩০০ মিলিগ্রাম
তেলাপিয়া ১০০-১৫০ মিলিগ্রাম
কোন মাছের প্রতি ১০০গ্রামে কত পরিমাণ ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড মেলে?
তেলাপিয়া ১২০০-১৮০০ মিলিগ্রাম
কাতলা ৭০০-১০০০ মিলিগ্রাম
রুই ৬০০-৯০০ মিলিগ্রাম
পমফ্রেট ৪০০-৬০০ মিলিগ্রাম
ইলিশ ৩০০-৬০০মিলিগ্রাম
টুনা বা কেরা ৩০০-৬০০মিলিগ্রাম
ইন্ডিয়ান ম্যাকারেল বা বাঙ্গদা ২০০-৪০০ মিলিগ্রাম
সার্ডিন বা মথি, পেডভি ১৫০-৩০০ মিলিগ্রাম
সুরমাই বা কিং ফিশ ২৫০-৪০০ মিলিগ্রাম
তবে পুষ্টিবিদ সতর্ক করছেন, উপকারী বলেই যে কোনও মাছ বা ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি খাওয়া ঠিক নয়। শুধু মাছ নয়, ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড মেলে বিভিন্ন বীজ থেকে নিষ্কাশিত তেলেও। এ ছাড়া মাংস, ডিম এবং বিশেষ কিছু মাছে। অনন্যা বলছেন, শরীরের জন্য ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড অল্পই দরকার হয়। তা ছাড়া, তেল বেশি খেলে শরীরে প্রদাহ হতে পারে।
দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় শুধু মাছ নয়, কার্বোহাইড্রেট, খনিজ, ভিটামিনেরও জোগান থাকা আবশ্যিক। সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজান ব্যালান্সড ডায়েট, যেখানে পুষ্টির ভারসাম্য থাকে। তা ছাড়া, হার্ট, লিভার, কিডনির সমস্যা থাকলেও কোন মাছ কতটা খাওয়া যাবে, তা চিকিৎসকের পরামর্শ সাপেক্ষ।
কী ভাবে খেলে মিলবে পুষ্টিগুণ?
পুষ্টিগুণ পেতে হলে কিন্তু উচ্চ তাপমাত্রায় কড়া করে মাছ ভাজা যাবে না। এতে মাছের গুণাগুণ নষ্ট হবে। তা ছাড়া লঙ্কা, সর্ষে বাটা দিয়ে ঝাল বা ঝোল বদ হজমের সমস্যায় ইন্ধন জোগাতে পারে। বরং এর স্বাস্থ্যগুণ পেতে হলে অল্প তেল-মশলায় মাছটি কম আঁচে ভাপিয়ে খাওয়া ভাল।