‘লো-কার্ব’, ‘লো-ফ্যাট’, ‘কিটো’, ‘হাই প্রোটিন’— এই ধরনের শব্দবন্ধগুলির সঙ্গে নতুন প্রজন্ম ভাল ভাবেই পরিচিত। কারণ, সমাজমাধ্যমে একবার যদি কেউ ফিটনেস সংক্রান্ত কোনও লেখা বা ভিডিয়ো অনুসন্ধান করেন, আগামী কয়েকদিনে তাঁর ফিডে থাকবে শুধু এই সবই।
পুষ্টিবিদ থেকে ফিটনেস প্রশিক্ষকেরা এখন অনেকেই সমাজমাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন, সতর্ক করেন। ফলে গত কয়েক বছরে এমন অনেক শব্দবন্ধ নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে।
বেশিরভাগ মানুষেরই ধারণা, ওজন কমাতে হলে ডায়েটে প্রোটিন বেশি এবং কার্বোহাইড্রেট কম হওয়া দরকার। সেইসঙ্গে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট নিয়েও চর্চা আছে যথেষ্ট। কিন্ত মেদ ঝরাতে হলে কি কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা বাদ দেওয়াই যথেষ্ট না কি, বাদ দেওয়া দরকার ফ্যাট? ডায়েট থেকে কোনটি বাদ গেলে, নির্মেদ লাভ করা সম্ভব? জেনে নেওয়া যাক।
লো-কার্ব ডায়েট: এই প্রকারের ডায়েট থেকে বাদ পড়ে চিনি জাতীয় খাবার, সিরাপ, মিষ্টি, আইসক্রিম। বাদ যাবে ভাত, রুটি, পাস্তা, ময়দার খাবার। অর্থাৎ যে খাবারগুলি খেলে সহজেই শক্তি পায় শরীর, বাদ দেওয়া হয় সেগুলি।বদলে শরীর চালানোর জন্য কখনও তরল খাবার কখনও প্রোটিন নির্ভর ডায়েট নির্দিষ্ট করা হয়।
লো ফ্যাট ডায়েট: এই ধরনের ডায়েটের লক্ষ্যই হল ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় সব খাবার বাদ দেওয়া। বাদ যাবে ফ্যাটযুক্ত বা ক্রিম যুক্ত খাবার। খাওয়া যাবে না ঘি, মাখন, পাঁঠার মাংস ইত্যাদি। পরিবর্তে ফল, সব্জি, দানাশস্য খাওয়ার উপর জোর দেওয়া হয়।
পুষ্টিবিদ অনন্যা ভৌমিক বলছেন, ‘‘পৃথক ডায়েটের উপযোগিতাও ভিন্ন। যেমন কার্বোহাইটড্রেটের মাত্রা কমালে শর্করার মাত্রা বশে রাখা সহজ হয়। বিশেষত টাইপ ২ ডায়াবেটিকদের জন্য তা কার্যকর। যাঁদের পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম আছে কিংবা অ্যালকোহল না খেয়েও যাঁরা ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের জন্যও এমন ডায়েট ভাল। আবার লো-ফ্যাট ডায়েট তাঁদের জন্য ভাল যাঁদের গলব্লাডার অপারেশন হয়েছে, প্যাংক্রিয়াসের সমস্যা রয়েছে, বদহজমের ধাত বা পরিবারে হার্টের অসুখের ইতিহাস আছে।’’
কম কার্বোহাইড্রেট ডায়েটের কার্যকারিতা
• সরল কার্বোহাইড্রেট আছে এমন খাবার দিয়ে প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট জাতীয় খাবারের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া হয় এই ধরনের ডায়েটে। প্রোটিন এবং ফ্যাটযুক্ত খাবারই প্রয়োজনীয় ক্যালোরির জোগান দেয়। এই ধরনের ডায়েট রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এবং তা বশে রাখতে সাহায্য করে। ওজনও কমায়।
• ইনসুলিন সেনসিটিভিটি নিয়ন্ত্রণে রেখে রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখে। ইনসুলিন যাঁদের শরীরে কাজ করে না বা যাঁদের রক্তে শর্করার পরিমাণ বিপদসীমার দোরগোড়ায় তাঁদের জন্য এই ডায়েট বিশেষ কার্যকর।
• কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার শরীরে জল ধরে রাখতে সাহায্য করে। ফলে লো-কার্ব ডায়েটে দ্রুত ওজন কমে।
কম ফ্যাটযুক্ত ডায়েটের কার্যকারিতা
• এক গ্রামে ফ্যাটে ৯ ক্যালোরি থাকে, যা প্রোটিন বা কার্বোহাইড্রেটের প্রায় দ্বিগুণ। সুতরাং ক্যালোরি কমাতে হলে ফ্যাট বাদ দেওয়াই কার্যকরী বিকল্প।
• ফ্যাট কমিয়ে শাকসব্জি, দানাশস্য, ফাইবারযুক্ত খাবার বাড়িয়ে দেওয়া হয় এই ডায়েটে যা রক্তচাপ এবং কোলস্টেরল বশে রাখতে সাহায্য করে। হার্টের স্বাস্থ্য ভাল থাকে এতে। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে। তবে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড বা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট আবার হার্টের জন্য ভাল। তবে তা নিয়ন্ত্রত মাত্রায়।
• কম মাত্রার ডায়েটে ভাত, রুটি বা দৈনন্দিন যে ধরনের খাবার খেতে অভ্যস্ত ভারতীয়েরা, তা খেতে বাধা থাকে না।
মেদ ঝরাতে কোনটি বেছে নেবেন?
২০১৮ এবং ২০২২ সালে ডায়েট সংক্রান্ত গবেষণায় দেখা গিয়েছে, লো কার্ব বা লো ফ্যাট— উভয় প্রকার ডায়েটেই ওজন কমে। ফলাফল প্রায় একই।
তবে পুষ্টিবিদেরা বলছেন, কার জন্য কোনটি ভাল তা নির্ভর করে শরীর, বয়স এবং প্রয়োজনের উপর। কার শরীরে কোনটি সহ্য হবে, সেটাও বোঝা দরকার। পুষ্টিবিদেরা মনে করান, ওজন কমানো লক্ষ্য হলেও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ধীরে চলো নীতি নেওয়াই ভাল। শরীর বুঝে পরিমিত আহার, হাঁটাহাটি বা শরীরচর্চাই লক্ষ্যপূরণের পথে এগিয়ে দিতে পারে।
হঠাৎ করে কার্বোহাইড্রেট বা ফ্যাট জাতীয় খাবার একেবারে বন্ধ করে নিজের মতো ডায়েট করতে যাওয়াও ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ, দু’টি উপাদানের শরীরে নিজস্ব কার্যকারিতা রয়েছে। ফলে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে লম্বা সময়ের ডায়েটে মন দেওয়া উচিত।