Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Suicidal Tendency

Suicidal Tendency: আত্মহত্যা-প্রবণতার লক্ষণ চেনাতে শুরু প্রশিক্ষণ

মনোরোগ চিকিৎসকেরা বলছেন, কেউ বার বার আত্মহত্যার কথা বললে সেটা তাঁর হতাশার মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছনোরই বহিঃপ্রকাশ।

প্রতীকী ছবি।

শান্তনু ঘোষ
শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২২ ০৭:০৮
Share: Save:

কিছু দিন ধরেই চুপচাপ থাকছিলেন বছর পঁচিশের এক যুবক। মাঝেমধ্যেই বলতেন নিজের জীবন শেষ করে দেওয়ার কথা। কিন্তু সতীর্থেরা তা শুনে হাসতেন। অবশেষে এক দিন হস্টেলের ঘর থেকে উদ্ধার হয় ওই যুবকের ঝুলন্ত দেহ।

মনোরোগ চিকিৎসকেরা বলছেন, কেউ বার বার আত্মহত্যার কথা বললে সেটা তাঁর হতাশার মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছনোরই বহিঃপ্রকাশ। কারও আত্মহত্যা-প্রবণতার সেটি একটি বড় লক্ষণ। তাই এমন লক্ষণগুলিকে নজরে রাখতে পারলে চিকিৎসার মাধ্যমে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। দীর্ঘদিন মানসিক অবসাদগ্রস্ত কারও কোন কোন লক্ষণকে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন— সে বিষয়ে ‘গেটকিপার ট্রেনিং ফর সুইসাইড প্রিভেনশন’ নামে একটি কর্মশালা শুরু করছে ‘ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি’ (আইওপি)।

সম্প্রতি আত্মহত্যার প্রবণতা যে বেড়েছে, তা লক্ষ করে এর প্রতিরোধে পদক্ষেপ করে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। মে মাসের গোড়ায় বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে কর্মশালার আয়োজন করার কথা জানায় রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়। এসএসকেএমের ৫০ জন পড়ুয়াকে নিয়ে প্রথম কর্মশালার আয়োজন করে আইওপি। পরে সশস্ত্র সীমা বলের ১০০ জন জওয়ানকে নিয়ে দু’টি পর্বে কর্মশালা করা হয়। আগামী মঙ্গলবার এসএসকেএমের নার্স ও কর্মীদের নিয়ে ফের ওই কর্মশালা করা হবে।

নজরে থাক

• আচমকা অস্বাভাবিক কম কথা বলা, যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া, আড্ডা বা অনুষ্ঠান থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া, ক্লাসে অনুপস্থিতির হার বৃদ্ধি, একা দীর্ঘক্ষণ উদাস ভবে তাকিয়ে থাকা, আচমকা নেশা শুরু করা, অল্প নেশার অভ্যাস থাকলে হঠাৎ তা মারাত্মক বেড়ে যাওয়া, ঘুমের ওষুধ খাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি, কথার মধ্যে বার বার ব্যর্থতা, নিঃসঙ্গতার প্রকাশ, মাঝেমধ্যেই আত্মহত্যার ইচ্ছা প্রকাশ।

• বিশেষ লক্ষণ: দীর্ঘদিন ধরে অবসাদে থাকা এক জন মানুষের রাতারাতি বদলে যাওয়া। কারও সঙ্গে আচমকা সব ঝামেলা মিটিয়ে নেওয়া। পছন্দের জিনিস বা টাকাপয়সা দিয়ে দেওয়া, সকলকে ভালমন্দ কিনে খাওয়ানোর প্রবণতা বেড়ে যাওয়া।

আইওপি-র অধিকর্তা অমিত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এখন কিছু দিন ধরে আত্মহত্যার প্রবণতার কিছু লক্ষণ দেখা যায়। কী সেই লক্ষণ, তা বোঝাতেই তিন ঘণ্টার কর্মশালা শুরু করেছি।’’ এই কর্মশালায় মনোরোগ চিকিৎসক ও মনোবিদেরা স্লাইড-শোয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় বোঝাচ্ছেন। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘‘মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট, সুইসাইড প্রিভেনশনের বিষয়গুলি রয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার উৎকর্ষ কেন্দ্র হল আইওপি। যে কোনও জায়গা থেকে প্রস্তাব এলেই এমন কর্মশালা করতে আমরা প্রস্তুত।’’ প্রাথমিক ভাবে এই কর্মশালা কতটা কার্যকর হচ্ছে, তা বুঝে নিয়ে আগামী দিনে তা আরও ছড়িয়ে দেওয়ার ভাবনা রয়েছে আইওপি কর্তৃপক্ষের।

মনোরোগ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অনেক সময়ে দেখা যায়, পুলিশ, আধা-সামরিক বাহিনী বা সেনাবাহিনীর সদস্যেরা নানা বিষয়ে হতাশায় ভোগেন। পরীক্ষায় ভাল ফল না করা, আশানুরূপ প্লেসমেন্ট না পাওয়ায় মানসিক অবসাদের শিকার হন পড়ুয়ারাও। বিভিন্ন পেশার লোকজনও কর্মক্ষেত্রের চাপ, বেতন ইত্যাদি নিয়ে হতাশায় ভুগতে থাকেন। ফলে ধৈর্যচ্যুতি হলে কেউ কেউ চরম সিদ্ধান্ত নেন। আইওপি-র শিক্ষক-চিকিৎসক তথা ‘ইন্ডিয়ান সাইকায়াট্রিক সোসাইটি’র সুইসাইড প্রিভেনশন সেলের কোঅর্ডিনেটর সুজিত সরখেল জানাচ্ছেন, যে কোনও বাহিনী, শিক্ষাস্থল, কর্মক্ষেত্রে কেউ হতাশায় ভুগলে তা প্রথমেই নজরে আসবে তাঁর ঘনিষ্ঠ সতীর্থ বা সহকর্মীদের। কারণ, কেউই হতাশার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান না।

সুজিত বলেন, ‘‘হতাশা থেকে ব্যক্তিগত আচরণে পরিবর্তন ঘটে। তা লক্ষ করে যদি মনোরোগ চিকিৎসক বা মনোবিদের কাছে নিয়ে যাওয়া যায়, তা হলে উপকার হবে। পরিবারের সদস্যদের উপরেও নজর রাখা প্রয়োজন।’’

চিকিৎসকেরা আরও জানাচ্ছেন, অনেক সময়ে নিজেই গুলি চালিয়ে সেনা জওয়ানের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। ডাক্তারি পড়ুয়াদের ক্ষেত্রেও বেশি ঘুমের বা অন্য ওষুধ জমানোর প্রবণতা লক্ষ করা যায়। তাই কোনও ব্যক্তির মনে হতাশা বাসা বেঁধেছে বোঝা গেলে তাঁর হাতের কাছে আত্মঘাতী হওয়ার জিনিস রাখা উচিত নয়। বরং তাঁকে চোখে-চোখে রাখা প্রয়োজন। মানসিক অবসাদগ্রস্তদের মন খুলে কথা বলার জন্য আইওপি-তে ২৪ ঘণ্টার একটি হেল্পলাইন নম্বর শীঘ্র চালু করার পরিকল্পনাও রয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

Suicidal Tendency Suicide Mental Health Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE