ভরা বর্ষা মানেই জলকাদার বিড়ম্বনার সঙ্গে কিছু অসুখবিসুখের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়া। তার মধ্যে অন্যতম কনজাঙ্কটিভাইটিস। কনজাঙ্কটিভা (চোখের ভিতরের সাদা অংশ) আক্রান্ত হলেই এই অসুখ হয়। সাধারণত, ভাইরাস, ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণে চোখের এই রোগ হয়। তবে কজাঙ্কটিভাইটিস শুধু নয়, এই সময়ে চোখের আরও নানা সংক্রমণজনিত রোগ দেখা দিচ্ছে। খামখেয়ালি আবহাওয়া ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়ার বংশবৃদ্ধির জন্য অনুকূল। তাই এই সময়ে ঘরে ঘরে ভাইরাল জ্বর হচ্ছে, সেই সঙ্গে অ্যালার্জির সংক্রমণ বাড়ছে। দেখা দিচ্ছে নানা ছোঁয়াচে রোগ।
কনজাঙ্কটিভাইটিস থেকে সাবধান
এক সময়ে অনেকেরই ধারণা ছিল, চোখ লাল হয়ে ফুলে ওঠা বা ‘জয়বাংলা’ বুঝি দৃষ্টিনিক্ষেপের মাধ্যমেই ছড়ায়। আদতে তা নয়। তবে এই রোগ ছোঁয়াচে। ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া, ক্ষতিকর ছত্রাকের সংক্রমণেই চোখের মণির চারপাশে লাল রং ধরে। সেই সঙ্গে অনবরত জল পড়া, জ্বালা-যন্ত্রণা, পিচুটি, চুলকানি— সব মিলিয়ে বড় কষ্টকর ব্যাপার! চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই রোগেরই নাম কনজাঙ্কটিভাইটিস, যা প্রতি বর্ষার মরসুমে দাপট দেখাতে শুরু করে।
চক্ষুরোগ চিকিৎসক নিলয়কুমার মজুমদারের মতে, কনজাঙ্কটিভাইটিসের মূল কারণ হল ভাইরাস। ব্যাক্টেরিয়া ঘটিত সংক্রমণও হয়, তবে সংখ্যায় কম। বর্ষার সময়ে বাতাসের জলীয় কণাকে ভর করে ভেসে বেড়ায় অনেক ভাইরাস, যার মধ্যে শক্তিশালী অ্যাডিনো ভাইরাস চোখে সংক্রমণ ঘটায়। কর্নিয়ায় ছোট ছোট দানা তৈরি হয়। যার ফলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়, চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়তে থাকে, আঠালো তরল বার হয়। কনজাঙ্কটিভাইটিস হওয়ার কারণ অনেক। অ্যাডিনো ভাইরাস, হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস (এইচএসভি) কিংবা ভেরিসেলা-জ়োস্টার ভাইরাস (ভিজ়েডভি)-এর সংক্রমণে কনজাঙ্কটিভাইটিস হতে পারে। আবার হেমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা, স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনিয়া বা স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াসের মতো জীবাণু সংক্রমণেও কনজাঙ্কটিভাইটিস হতে পারে।
স্টাই
ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে চোখের পাতায় ফোলা মাংসপিণ্ড তৈরি হয়। ওই অংশে জ্বালা-চুলকানি হয়। চোখ থেকে অনবরত জল পড়তে থাকে। কখনও সেই মাংসপিণ্ড থেকে পুঁজও বার হয়। বাংলায় একে ‘আঞ্জনি’ বলা হয়। এমন হলে দিনে ৩-৪ বার আক্রান্ত স্থানে গরম সেঁক দিলে আরাম পাওয়া যেতে পারে। ব্যথা বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক মলম বা ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
কর্নিয়াল আলসার
ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে কর্নিয়ায় ক্ষত হয়। কর্নিয়া হল চোখের সামনের স্বচ্ছ অংশ, যা আলো প্রবেশ করতে এবং দেখতে সাহায্য করে। সেখানে ঘা বা ক্ষত তৈরি হলে দৃষ্টি ঝাপসা হতে থাকে। অনেক সময় ছত্রাকের সংক্রমণেও এমন হতে পারে। যাঁরা নিয়ম না মেনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কনট্যাক্ট লেন্স পরে থাকেন, তাঁদেরও অনেক সময়ে কর্নিয়াল আলসার হয়। সে ক্ষেত্রে চোখ শুষ্ক হয়ে লাল হয়ে যাবে, আলো পড়লে কষ্ট হবে, কর্নিয়ার উপর সাদা বা ধূসর দাগ দেখা দেবে, দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হতে শুরু করবে। এই রোগ হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে, না হলে চোখের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
বর্ষায় কী ভাবে যত্ন নেবেন চোখের?
১) ধুলোয় নানা ধরনের জীবাণু ঘোরে। তা এসে লাগতে পারে চোখে। ফলে দিনের বেলা পথে বেরোলে রোদচশমা ব্যবহার করা জরুরি।
২) রাস্তার কল থেকে জল দিয়ে চোখ-মুখ ধোবেন না। চোখে জল দিতে হলে আগে হাত পরিষ্কার করে নিন। এবং চোখে দেওয়ার জন্য পরিষ্কার জল ব্যবহার করুন।
৩) বার বার সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। বাইরে বেরোলে স্যানিটাইজ়ার সঙ্গে রাখতে হবে।
৪) নিজের তোয়ালে, বালিশ বা প্রসাধনী অন্য