দিনভর পরিশ্রম। সন্ধ্যা নামলেই শরীর ও মনে অদ্ভুত এক বদল আসত। সন্ধ্যা ৭টার পর মিশুকে ও চনমনে স্বভাব বদলে গিয়ে একেবারে অন্য মানুষ। তখন কেউ ডাকলেও সাড়া পাবেন না। কারও সঙ্গে কথা বলতেও চরম বিরক্তি লাগত। এমনই জানিয়েছেন টিভি তারকা ও সঞ্চালিকা মিনি মাথুর। পঞ্চাশ পেরিয়েও ফিট মিনি। সৌন্দর্যেও বার্ধক্যের ছাপ পড়েনি। এমন ভাবেই নিজেকে সুস্থ ও সক্রিয় রেখেছেন সঞ্চালিকা। তবে রজোনিবৃত্তি পর্বটা ছিল খুবই কঠিন। মিনি নিজেই জানিয়েছেন, কী ভাবে এক লহমায় বদলে গিয়েছিল তাঁর জীবন।
ঘন ঘন মেজাজ বদল, কারণ ছাড়াই বিরক্তি তখন রোজকার সমস্যা। মিনি জানিয়েছেন, রজোনিবৃত্তির সময়টা যত এগিয়ে আসতে থাকে, ততই শরীর ও মনে নানা রকম বদল আসতে থাকে। ‘হট ফ্লাশ’-এর সমস্যা এতটাই বেড়ে যায় যে, স্বাভাবিক ভাবেই মেজাজ বিগড়ে যেত তাঁর। সন্ধ্যার পর থেকে আর কারও সঙ্গে কথা বলতে বা দেখা করতে ইচ্ছে করত না। মিনি জানিয়েছেন, রাতের খাওয়ার নিমন্ত্রণ প্রায়ই এড়িয়ে যেতেন তিনি। কাছের মানুষদের জানিয়ে রেখেছিলেন, রাতে কোনও পার্টি বা নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যাবেন না তিনি। কারণ, ওই সময়েই তাঁর মানসিক চাপ ও উদ্বেগ চরমে পৌঁছে যেত।
মিনি মাথুরের সমস্যা কি অন্য মহিলাদেরও হয়?
মিনি মাথুর যে সমস্যার কথা জানিয়েছেন, তা প্রায় প্রত্যেক মহিলাকেই ভুগতে হয় ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সে। এই সময়টাই ভারতীয় মহিলাদের রজোনিবৃত্তি পর্ব চলে। চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ওই পর্বে গিয়ে শরীর ও মনে একাধিক বদল আসে। আর এই বদলের কারণ হল হরমোনের তারতম্য। মহিলাদের শরীরের দুই হরমোন ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন ঋতুচক্রের প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। ডিম্বাণু তৈরি ও তার নির্গমনের প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে ইস্ট্রোজেন। ডিম্বাণু জরায়ুর যে অংশে গিয়ে জমা হবে, সেই স্তর অর্থাৎ এন্ডোমেট্রিয়ামের ঘনত্বও নির্ভর করে ইস্ট্রোজেনের উপরে। ঋতুকালীন সময়ে শরীরে অন্যান্য হরমোনের ওঠানামা, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের কাজও করে ওই হরমোন। আর প্রোজেস্টেরনের কাজ হল ডিম্বাণু নিষিক্ত না হলে এন্ডোমেট্রিয়াম স্তরটিকে খসিয়ে ঋতুস্রাব করানো। যখন রজোনিবৃত্তি পর্ব এগিয়ে আসবে, তখন ডিম্বাণু নির্গমনের প্রক্রিয়া বন্ধ হবে। সেই সময়ে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রাও কমবে, ফলে শরীরের অন্যান্য হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রিত হবে না। সেই সঙ্গে তাপমাত্রারও হেরফের হবে। শরীর গরম হয়ে যাবে, নাক-কান-গলার কাছে ঘাম হতে থাকবে। মনে হবে, শরীরের উপর দিয়ে তাপপ্রবাহ হচ্ছে। একেই বলা হয় হট ফ্ল্যাশ।
আরও পড়ুন:
আরও একটা সমস্যা হয় এই পর্বে, তা হল মানসিক চাপ অত্যন্ত বেড়ে যাওয়া। চিন্তভাবনা গুলিয়ে যায় অনেকের, কারও আবার ভুলে যাওয়ার সমস্যা বাড়ে। এরও কারণ ওই ইস্ট্রোজেন হরমোন। এই হরমোনই মস্তিষ্কের রাসায়নিক বার্তাবাহক বা নিউরোট্রান্সমিটারের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে। কাজেই হরমোনের ক্ষরণে তারতম্য হলে অ্যাসিটাইলকোলিন, সেরোটোনিন, ডোপামিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটারগুলির ক্ষরণও এলোমেলো হয়ে যাবে। তখন মেজাজ বদল, ভুলে যাওয়া, প্যানিক অ্যাটাকের মতো সমস্যা দেখা দেবে। এমনকি, সাময়িক ভাবে স্মৃতিনাশও হতে পারে।
চিকিৎসক জানাচ্ছেন, এই পর্বটিতে তাই খুব সাবধানে থাকতে হয়। নিয়ম করে শরীরচর্চা ও সুষম আহারের প্রয়োজন। নেশা করা একেবারেই ছাড়তে হবে, বেশি করে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবার খেতে হবে। শরীর ঠান্ডা রাখতে প্রযাপ্ত জল, তরল খাবার ও ডিটক্স পানীয় পান করতে হবে। রোজ সকালে ও সন্ধ্যায় ১৫ মিনিট করে হাঁটাহাঁটিও প্রয়োজন। এতে বিপাকক্রিয়া ঠিকমতো হবে, শরীরে টক্সিন জমতে পারবে না।