হাঁটুর ব্যথায় কাবু এখন অনেকেই। সে বয়স ত্রিশ হোক, বা ষাট। কিছু ক্ষণ শুয়ে থাকার পর উঠতে গেলে ব্যথা, বসে থেকে দাঁড়াতে গেলে ব্যথা, সিঁড়ি ভাঙতে গেলেও টনটনিয়ে ওঠে হাঁটু। ফলে উৎসবের সন্ধ্যায় ভিড় ঠেলে ঠাকুর দেখতে যেতেও ভয় পান। যাঁরা ঠাকুর দেখতে ভালবাসেন, তাঁরা একবাক্যে স্বীকার করবেন, পুজোয় পায়ে হেঁটে ঘোরাই সবচেয়ে আনন্দের। কিন্তু পায়ে, হাঁটুতে ব্যথা থাকলে সমস্যা। এ দিকে গাড়ি করে ঘুরতে চাইলেও তা কোনও সমাধান নয়। প্যান্ডেল থেকে অনেকটা দূরে গাড়ি রেখে হেঁটে আসা ছাড়া গতি নেই। তাই বলে কি পা বা হাঁটুর ব্যথার জন্য পুজোর সন্ধ্যাগুলো মাটি হবে? একেবারেই নয়। বরং এখন থেকে ব্যথা উপশমের চেষ্টা করুন।
পায়ের ব্যথা উপশমের উপায় আছে
শরীরচর্চায় নজর থাকুক
শরীরচর্চা ছাড়া কোনও ভাবেই পায়ের সমস্যা থেকে মুক্তির পথ নেই। তাই পুজোয় ঠাকুর দেখতে গিয়ে এক দিন হঠাৎ করে হাঁটার বদলে রোজ অল্প অল্প করে শরীরচর্চা করে শরীরকে সচল ও সতেজ রাখুন। তা হলেই আর সমস্যা হবে না।
ওজন থাক নিয়ন্ত্রণে
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস প্রথমে ছোট ছোট অস্থিসন্ধিগুলির ক্ষতি করে। রোগ যত বাড়তে থাকে, কব্জি, হাঁটু, গোড়ালি, কনুই, কাঁধের ব্যথাও বাড়তে থাকে। আর অস্টিয়ো আর্থ্রাইটিসের কারণ অনেক। তার একটি ওজন বৃদ্ধি, এমনটাই জানালেন চিকিৎসক সুব্রত গড়াই। তাঁর মতে, আর্থ্রাইটিস আগে ছিল বয়সজনিত সমস্যা। কিন্তু এখন জীবনযাপনের ধরন, খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চার অভাবের মতো বিভিন্ন কারণে ৩০ থেকে ৫০ বছরেও ব্যথা কাবু করছে। টানা ৭-৮ ঘণ্টা কম্পিউটারে বসে কাজ করেন যাঁরা, শরীরচর্চার ধাত নেই খুব একটা, তাঁরা ভুগছেন হাঁটুর ব্যথায়। তাই সবচেয়ে আগে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে হবে। সে জন্য ভাজাভুজি, প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনি দেওয়া নরম পানীয় খাওয়া বন্ধ করে দিন এখন থেকেই।
আরও পড়ুন:
জুতো বাছাইয়ের বিষয়ে সতর্ক হোন
হাঁটু ভাল রাখতে সঠিক জুতো বাছাই করা ভীষণ জরুরি। খুব বেশি হিল আছে বা ফ্ল্যাট শু পরা উচিত নয়। খুব শক্ত সোলযুক্ত জুতো না পরে নরম আর আর্চ আছে, এমন জুতো পরলেই কিন্তু হাঁটু ভাল থাকবে। ফ্যাশনের জন্য অনেকেই এমন জুতো পরে ফেলেন, যা পরে তাঁরা আদৌ স্বচ্ছন্দ বোধ করেন না। ফ্যাশনের জন্য হাঁটুর সঙ্গে আপস না করাই ভাল।
ব্যথা বাড়লে কী কী করবেন?
অল্প ব্যথা হলে কিছু নির্দিষ্ট ব্যায়াম করে দেখা যায়। হাঁটুর ব্যথা হলে পা লম্বা করে এক বার শক্ত এবং এক বার শিথিল করতে হবে। এমন করলে হাঁটুর হাড়ের শক্তি বেড়ে যায়। ব্যথার প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে হালকা ব্যথানাশক ওষুধ, মলম, স্প্রে দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। তাতেও কাজ না হলে তখন কিছু ইঞ্জেকশন রয়েছে। তবে সেগুলি চিকিৎসকের পরামর্শ মতো নেওয়াই ভাল।
হাঁটুর ব্যথা বাড়লে জিমে গিয়ে ট্রেডমিলে হাঁটা বা দৌড়নোর মতো কাজ করবেন না। ব্যথা কী কারণে হচ্ছে, তা আগে চিহ্নিত করা দরকার। ব্যথা নিয়ে ভারী ব্যায়াম করতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
খেয়াল রাখতে হবে, পায়ে বা হাঁটুর ব্যথা বাড়লে মাটিতে বেশি বসবেন না। একটানা এক জায়গায় বসে টিভি দেখা বা কম্পিউটারে কাজ করাও চলবে না। একটি বালতিতে ঈষদুষ্ণ জলে নুন মিশিয়ে তার মধ্যে মিনিট পনেরো হাঁটু ডুবিয়ে রাখুন। হট ওয়াটার ব্যাগও ব্যবহার করতে পারেন। ব্যথা কমাতে দিনে দুই থেকে তিন বার এই টোটকা মেনে চলুন।