মস্তিষ্কের অন্দরে কী ঘটছে তা জানতে খুলি এ ফোঁড়, ও ফোঁড় করার প্রয়োজন নেই। অবসাদের গভীরতা মাপতে জটিল কোনও পরীক্ষা পদ্ধতির মধ্যে দিয়েও যেতে হবে না। মগজের ভিতরে কী ঘটছে, স্মৃতির পাতা কতটা ঝাপসা হয়েছে, কোনও রোগ ঘাপটি মেরে রয়েছে কি না, তা ধরা যাবে কাটাছেঁড়া ছাড়াই। মুশকিল আসান করবে আলট্রাসাউন্ড হেলমেট। মাথায় পরে নিলেই হল।
ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ লন্ডনের গবেষকেরা তৈরি করেছেন, এক বিশেষ ধরনের হেলমেট যাতে বসানো থাকবে অসংখ্য সেন্সর। উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দস্রোত বেরিয়ে মস্তিষ্কের অলিগলিতে ঘুরে বেড়াবে। মগজের কোন অংশে স্নায়ুর বাঁধন আলগা হয়েছে, কোথায় জমছে ধোঁয়াশা, তার সব খবর চলে আসবে গবেষকদের হাতের মুঠোয়। স্মৃতিনাশ বা ডিমেনশিয়া থেকে শুরু করে অবসাদ, পারকিনসন্সের মতো দুরারোগ্য ব্যধির হদিশ দিতে পারবে এই হেলমেট। মস্তিষ্কে টিউমার বাসা বেঁধেছে কি না, সে খবরও দেবে। অথচ কোনও রকম কাটাছেঁড়া করার প্রয়োজন হবে না।
একটা সময় পর্যন্ত মনে করা হত, পারকিনসন্স রোগের কোনও চিকিৎসা নেই। কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সেই ধারণাও বদলাতে শুরু করেছে। ব্রেন পেসমেকার বসিয়ে রোগের তীব্রতা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। তবে মস্তিষ্কের ভিতর পেসমেকার বসানোর প্রক্রিয়া অত সহজ নয়। সে জায়গায় শুধু হেলমেট পরেই যদি সমস্যার সমাধান হয়, তা হলে ক্ষতি কী! দেহের বিভিন্ন পেশির নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে ডোপামিন। মস্তিষ্কের যে কোষগুলি ডোপামিন তৈরি করে, সেই কোষগুলি নষ্ট হলে পারকিনসন্স ডিজ়িজ় হয়। এই রোগ সাধারণ ভাবে কমে না, বরং বাড়তে থাকে। রোগ কতটা ছড়িয়েছে, শব্দতরঙ্গ দিয়ে তা বশে রাখা যায় কি না, সে পরীক্ষাই চলছে।
আরও পড়ুন:
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, মস্তিষ্কের যে অংশ সাধারণ এমআরআই স্ক্যানে ধরা পড়বে না, সেই অংশেও চোখ রাখতে পারবে ওই হেলমেটের সেন্সর। অবসাদে ভোগা রোগীর মস্তিষ্কের ভিতরে কী অদলবদল হচ্ছে, তার খুঁটিনাটি খবর দেবে আলট্রাসাউন্ড হেলমেট। গবেষক এলিনর মার্টিন জানাচ্ছেন, এই পদ্ধতি একটি অভিনব উদ্ভাবন। এর ফলে, গভীর ভাবে মানসিক অবসাদে দীর্ঘ দিন ধরে ভোগা রোগীর অবস্থা ও তাঁকে সারিয়ে তোলার উপায়ের সন্ধান করা যাবে। তবে হেলমেটটি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। তা এখনও গবেষণার স্তরেই আছে। বহু জনের উপর পরীক্ষার পরেই তার কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যাবে।