‘সিস্ট’ কথাটা শুনলেই অধিকাংশ মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি হয়। সিস্ট মানেই তা ক্যানসার, এমন ধারণা অনেকেরই আছে। কিন্তু সব সময়ে ‘সিস্ট’ মানেই খারাপ খবর ভেবে নেওয়ার কারণ নেই। মেয়েদের ডিম্বাশয়ে সিস্টের কথা বেশি শোনা গেলেও স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে শরীরের বিভিন্ন জায়গাতেই সিস্ট হতে পারে। তবে সিস্ট হলে সংশ্লিষ্ট অংশে ব্যথা-যন্ত্রণা হতে পারে। ওই অঙ্গের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হতে পারে। সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হল কিডনিতে সিস্ট। এই রোগকে বলে ‘পলিসিস্টিক কিডনি ডিজ়িজ়’ যা কমবয়সিদেরই বেশি ধরা পড়ছে।
হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের গবেষকেরা পলিসিস্টিক কিডনির রোগ নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরেই গবেষণা করছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, কিডনিতে সিস্ট হলে তা খুব দ্রুত সংখ্যায় বেড়ে ছড়াতে থাকে। সিস্ট হল জলভরা থলির মতো। রক্ত বা হলদে রঙের তরল, পুঁজে ভরা থাকে। রক্ত থাকলে হেমারেজিক সিস্ট বলে। কিডনিতে এমন সিস্ট ভরে গেলে কিডনির স্বাভাবিক কাজ করার ক্ষমতা ব্যাহত হয়। তখন ডায়ালিসিস করার প্রয়োজন হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কিডনি অকেজো হতে শুরু করেছে। তখন কিডনি প্রতিস্থাপন করার প্রয়োজন হয়।
আরও পড়ুন:
সিস্ট যদি বিনাইন হয় অর্থাৎ ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান না থাকে, তা হলে রক্ষা। কিন্তু যদি সিস্টের আকার বাড়তে বাড়তে তার ভিতরে কোষের বিভাজন শুরু হয়ে যায়, তা হলে ম্যালিগন্যান্সির লক্ষণ দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে কিডনির ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে। পলিসিস্টিক কিডনির রোগ নির্মূল করতে পারে এমন ওষুধ নেই, অস্ত্রোপচারই ভরসা। তাই এর বিকল্প উপায় হিসেবে অ্যান্ডিবডি থেরাপির কথা ভেবেছেন গবেষকেরা।
আরও পড়ুন:
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া ও হার্ভার্ডের গবেষকেরা নতুন একধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি করেছেন যার নাম ‘ডাইমেরিক ইমিউনোগ্লোবিউলিন এ’ (ডিআইজিএ)। এই অ্যান্ডিবডি দিয়ে চিকিৎসা করলে, শরীরে ছুরিকাঁচি চালানোর প্রয়োজন হবে না বলেই দাবি গবেষকদের। অ্যান্টিবডি ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শরীরে ঢুকিয়ে দিলে তা সরাসরি গিয়ে সিস্টগুলিকে নষ্ট করতে থাকবে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে তুলবে। সিস্ট যদি ধ্বংস হতে শুরু করে, তা হলে সেগুলির বিভাজন বন্ধ হবে। ফলে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকিও থাকবে না।
অ্যান্টিবডি নিয়ে গবেষণা চলছে। গবেষকেরা দেখেছেন শরীরে একবার অ্যান্টিবডি প্রবেশ করালে সেটি কিডনির সিস্টের জায়গায় গিয়েই থামবে। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে কাজ শুরু করবে। শরীরের অন্যান্য সুস্থ কোষগুলির ক্ষতি করবে না। গবেষণাটি সফল হলে আগামী দিনে কিডনির দুরারোগ্য ব্যধিও সারানো সম্ভব হবে বলেই আশা রাখছেন গবেষকেরা।