বাইরে খোলা হাওয়ায় হাঁটহাঁটি করা ভাল, না কি ঘরের ভিতের? এই নিয়ে নানা মত রয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেন, প্রকৃতির মাঝে আধ ঘণ্টা হাঁটলেও, শরীরের উপকার হয়। তবে যদি একান্তই সুযোগ না থাকে, তা হলে ঘরের ভিতরে হাঁটাও ভাল। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ঘরের ভিতরে ৩০ মিনিট হাঁটলে যা উপকার হবে তার দ্বিগুণ উপকার হবে বাইরে গিয়ে অন্তত ১৫ মিনিট হাঁটাহাঁটি করলে। এ দেশের ‘ইকোফিজিয়োলজি’ জার্নালে এই নিয়ে একটি গবেষণাপত্রও প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকেরা একটি সমীক্ষা চালিয়েছেন ৭৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে। তাঁদের দু’টি দলে ভাগ করে, এক দলকে খোলা হাওয়ায় প্রকৃতির মাঝে ৬০০ মিটার হাঁটতে বলা হয়। অন্য দলটিকে ঘরের ভিতরে ট্রেডমিলে হাঁটতে বলা হয়। দু’টি দলই ১৫-২০ মিনিট ধরে হাঁটে। সাত দিন ধরে এই পরীক্ষাটি চালিয়ে দু'টি দলের ছেলেমেয়েদেরই নানা রকম স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা যায়, যে দলটি বাইরে হেঁটেছে, তাদের হৃৎস্পন্দরের হার ভাল, শ্বাস-প্রশ্বাসের গতিও স্বাভাবিক, হজম ক্ষমতা অনেক উন্নত এবং মানসিক স্বাস্থ্যও খুব ভাল। আর যে দলটি ঘরের ভিতরে ট্রেডমিলে হেঁটেছে, তাদের শরীর ঠিক থাকলেও, মানসিক ভাবে অনেকেই উদ্বেগে ভুগছেন। হজমের সমস্যা রয়েছে অনেকের, ঘুমের সমস্যাও রয়েছে।
গবেষকেরা দাবি করেছেন, প্রকৃতির মাঝে শরীরচর্চা করলে বা হাঁটলে ‘হ্যাপি’ হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে, যা শরীরের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যও ভাল রাখে। প্রকৃতির মাঝে যত থাকা যাবে ও প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখা যাবে, শব্দ শোনা যাবে, ততই মানসিক চাপ, উদ্বেগ কমবে। বৃষ্টির শব্দ, পাখির ডাক, গাছপালার শব্দ শুনলে মানসিক ক্লান্তি অনেক কেটে যায়। দুশ্চিন্তা, নেতিবাচক চিন্তাভাবনা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। মনের চাপ কমলেই ভাল লাগার অনুভূতি হবে। অনিদ্রাজনিত সমস্যা, অবসাদ থেকেও রেহাই পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন:
বাইরে হাঁটারও নিয়ম আছে। নিঃশ্বাস- প্রশ্বাসের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলুন পদক্ষেপ। শ্বাস নেওয়ার সময় ৪ পা ফেলুন, শ্বাস ছাড়ার সময় আরও ৪ পা। ধীরে ধীরে শ্বাস- প্রশ্বাসের লয় কমলে প্রতি শ্বাসে পদক্ষেপের সংখ্যা বাড়ান। এই প্রক্রিয়ায় শারীরিক কসরতও হবে, মনঃসংযোগও বাড়বে। হনহনিয়ে হাঁটা নয়, চারপাশ দেখুন। প্রাতর্ভ্রমণ করলে গায়ে-মুখে রোদের স্পর্শের অনুভূতি নিন। এতে একঘেয়েমিও কেটে যাবে।
বাইরে হাঁটার সুফল বেশি হলেও ঘরের ভিতরে হাঁটার যে কোনও উপকারিতাই নেই, তা নয়। যাঁরা বয়সের কারণে বাইরে হাঁটতে পারছেন না অথবা যাঁদের শারীরিক কোনও সমস্যা রয়েছে, তাঁরা ঘরের ভিতরেই হাঁটতে পারেন। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এই নিয়ে একটি সমীক্ষাও চালিয়েছিলেন। তাঁরা জানান, সারা দিনে যদি গুনে গুনে ১০ হাজার পা হাঁটা যায়, তা হলে ওজন তো কমবেই, হার্টও ভাল থাকবে। আচমকা হৃদ্রোগ বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমবে। সে ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম মানলে ভাল। যেমন, এ ঘর থেকে ও ঘর একটু জোরে হাঁটাহাঁটি করলেই দেখা যাবে, ঘাম ঝরছে। প্রাতরাশের মিনিট দশেক পরে হাঁটুন। দুপুরের বা রাতের খাবার খেয়ে ছাদে বা লনে হাঁটতে পারেন। একঘেয়েমি কাটাতে, ঘরের ভিতরেই জ়ুম্বা ব্যায়াম করা যায়। এতে হার্ট ভাল থাকবে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ঘর-গেরস্তালির কাজ করতে করতেও হাঁটা যায়, টিভি দেখার সময়ে সোফায় না বসে বরং হাঁটাহাঁটি করুন। তাতেও লাভ হবে।