চাকরি এবং ঘর একসঙ্গে সামলে শরীরচর্চা করার জন্য সময় বার করতে পারেন না অনেক কর্মরতা মায়েরাই। হেঁশেলের টুকিটাকি থেকে সন্তানের পড়াশোনা, দুই হাতেই দশভুজা হয়ে উঠলেও নিজের শরীরের খেয়াল রাখার ফুরসত পান না। সব দিক সামলাতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হয় খাওয়াদাওয়ায়। তার ফলে যেটা হয়, বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পুষ্টিগুণের অভাব দেখা দেয়। নানা রকম অসুখবিসুখ বাসা বাঁধতে থাকে। কম বয়সে ডায়াবিটিস, আর্থ্রাইটিসের মতো সমস্যাও দেখা দেয়। তাই এমন কিছু খাবার রোজের খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে, যাতে শত অনিয়মেও শরীরে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হয়।
কর্মরতা মায়েদের রোজের খাওয়াদাওয়া কেমন হবে, সে নিয়ে বিস্তারিত নির্দেশিকা দিয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। সকালের জলখাবার থেকে রাতের খাওয়া— খুঁটিনাটি জেনে নিন।
সকালের জলখাবার
বাইরে গিয়ে কাজ করছেন যে মায়েরা তাঁদের সকালের জলখাবারে অন্তত ৪৭০ ক্যালোরি প্রয়োজন। প্রাতরাশ হতে হবে প্রোটিন সমৃদ্ধ, সঙ্গে সামান্য ফাইবার ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাটও থাকতে হবে।
প্রোটিনের জন্য ডিম সেদ্ধ খেতে পারেন। ডিমে শুধু প্রোটিনই নয়, কিছু পরিমাণে ভিটামিন ডি পাবেন। কোলেস্টেরল একটু বেশি থাকলে ডিমের সাদা অংশ খেতে পারেন। সেদ্ধ ডিম খাওয়াই বেশি ভাল।
স্বাস্থ্যকর ফ্যাটে জন্য কাঠবাদাম খুবই ভাল। ২-৩টি ভেজানো কাঠবাদাম খেতে পারলে উপকার হবে।
মুগ ডালের চিল্লা, দোসা বা ইডলি, ডালিয়া অথবা কিনোয়া খেতে পারেন।
গ্লুটেনে সমস্যা না থাকলে, ওট্স খাওয়া যেতে পারে।
দুপুরের খাওয়া
দুপুরের খাওয়া এমন হবে যা থেকে ৭৪০ ক্যালোরি পাওয়া যায়। এর জন্য অল্প কার্বোহাইড্রেট, প্রোবায়োটিক, মরসুমি সব্জি, ডাল খেতে পারেন। দুপুরের খাওয়ায় সম পরিমাণে থাকতে হবে কার্বোহাইড্রেট-প্রোটিন-ফ্যাট। যে মায়েরা স্তন্যপান করাচ্ছেন, তাঁদের ‘ব্যালান্সড ডায়েট’ মেনে চলতেই হবে। ওজন কমানোর জন্য প্রোটিন ডায়েট, মোনো ডায়েট বা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং ক্ষতিকর হতে পারে।
আরও পড়ুন:
এক কাপ ভাতের সঙ্গে এক কাপ ডাল, সঙ্গে সব্জি।
মাছ খেলে এক পিস(৫০ গ্রাম) মাছের ঝোল সব্জি দিয়ে বা চিকেন (১০০ গ্রামের মতো)দিয়ে স্ট্যু খেতে পারেন।
প্রোবায়োটিকের জন্য রোজ খাওয়ার পরে দই খাওয়া ভাল। বাড়িতে পাতা দই হলে সবচেয়ে ভাল হয়।
দুপুরে খাওয়ার পরে যে কোনও একটি মরসুমি ফল খেতে পারলে ফাইবারের ঘাটতি পূরণ হবে।
বিকেলের স্ন্যাক্স
বিকেলের দিকে খিদে পেলে ভাজাভুজি না খেয়ে মুড়ি মাখা, সেদ্ধ ছোলা, রোস্টেড মাখানা খেতে পারেন। ফ্রুট স্যালাড খাওয়া ভাল। ঘন ঘন চা বা কফি না খেয়ে, সঙ্গে ডিটক্স পানীয় রাখতে পারেন।
রাতের খাওয়া
রাতের খাওয়া হালকা হতে হবে। রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে খাওয়া সেরে ফেললে ভাল হয়।
ভাত বা রুটি খাওয়ার অভ্যাস থাকলে এক কাপ ভাত, সঙ্গে সব্জি খেতে পারেন। না হলে একটি রুটি, ডাল বা সব্জি খেতে পারেন।
রাতে কার্বোহাইড্রেট না খেতে চাইলে এক বাটি সব্জির স্যুপ, চিকেন স্ট্যু খেতে পারেন।
নিরামিষ খেলে অল্প মশলা দিয়ে রান্না পনির বা সয়াবিন খাওয়া যেতে পারে।
রাতে প্রোটিন মেপে খেতে হবে। যদি ডাল, পনির খান তা হলে মাছ-মাংস বা ডিম খাবেন না। আর যদি প্রাণীজ প্রোটিন খান, তা হলে সে দিন ডাল অল্প খাবেন। রাতে কাঁচা স্যালাড না খাওয়াই ভাল।
পরিমাণে রাশ টানতে হবে। একসঙ্গে অনেক খাবার খেয়ে নেওয়া যাবে না। অল্প করে খাবার বারে বারে খেতে পারলে ভাল হয়।