স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণে দেশবাসীকে স্থূলত্বের সমস্যা নিয়ে সচেতন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মোদী বলেন, ‘‘আগামী কয়েক বছরে ওবেসিটি ভারতের জন্য বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। দেশে স্থূলত্বের সমস্যা দিন দিন বাড়ছে, ছোট থেকে বড়, সবাই স্থূলত্বের সমস্যায় ভুগছেন। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের। কারণ, স্থূলত্ব ডায়াবিটিস এবং হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়!’’
কী ভাবে এই সমস্যার সঙ্গে লড়াই করবেন, নিজের ভাষণে সেই পথও বাতলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিটি ভারতীয় পরিবার যদি রোজের ব্যবহৃত তেলের পরিমাণ ১০ শতাংশ কমিয়ে আনতে পারে, তা হলে দেশের স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা অনেকটাই কমবে।’’
মোদী বলছেন তেল খাওয়া কমাতে। তবে এক জন সুস্থ মানুষের জন্য ঠিক কতটা তেল খাওয়া নিরাপদ, সেই প্রশ্ন আসতেই পারে মনে। পুষ্টিবিদ ঋতু সমাদ্দার বলছেন, ‘‘এক জন সুস্থ মানুষের দিনে ২০-২৫ মিলিলিটার তেল লাগে। অর্থাৎ, ৩০ দিনে ৭৫০ থেকে ৯০০ মিলিলিটার তেল এক জনের প্রয়োজন। কিন্তু ভারতে সাধারণত এক জন সাধারণ নাগরিক মাসে এক লিটারের বেশি তেল খান। যদি ডায়াবিটিস বা হার্টের রোগী হন, তবে তাঁদের এক মাসে ৫০০ মিলিলিটারের বেশি তেল খাওয়া উচিত নয়।’’ আর যেটা খাওয়া উচিত নয় তা হল, বাইরের ভাজাভুজি খাবার বা প্যাকেটজাত খাবারের তেল। ঋতু বলছেন, ‘‘ওই সমস্ত তেল অস্বাস্থ্যকর এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার মধ্যে ট্রান্সফ্যাট এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে।’’
কম তেলেও রান্নার স্বাদ বাড়াবেন কী ভাবে?
স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে রান্নায় তেলের ব্যবহার করার কথা ভাবেন অনেকেই। তবে স্বাদের কথা ভেবে আবার দু’পা পিছিয়ে যান তাঁরাই। হাজার চেষ্টা করেও রান্নায় তেলের ব্যবহার কমাতে পারছেন না? জেনে নিন কম তেলে রান্না করার দারুণ কিছু পদ্ধতি।
চামচের ব্যবহার: রান্নায় অতিরিক্ত তেল দিলেই যে তার স্বাদ বেড়ে যায়, এমন কিন্তু নয়। যে বোতলে তেল রাখা থাকে, সেখান থেকেই সরাসরি তেল নিয়ে রান্নায় ব্যবহার করা হয়। এই অভ্যাস কিন্তু একেবারেই ভাল নয়। এ ক্ষেত্রে রান্নায় তেল অনেক ক্ষেত্রেই বেশি পড়ে যায়। তাই চামচে মেপে তেল ব্যবহার করাই ভাল। ডুবো তেলে রান্না না করে, অল্প তেলে ঢেকে রান্না করুন।
বেকিং: মুরগি হোক কিংবা মাছ, অনেকেই এখন বেক করে খান। বিশেষত, যাঁরা ডায়েট করছেন। কষিয়ে রান্না করতে গেলে অনেকটা বেশি তেল লাগে। তাই তেলের ব্যবহার এড়াতে মশলা মাখিয়ে মাছ, মাংস বেক করে নিতেই পারেন। নামমাত্র তেল কিংবা মাখনেই বেক করা যায়।
ভাপে রান্না করুন: যে কোনও সবজি ভাজার আগে ভাপিয়ে নিন। এতে রান্না করতে যেমন কম সময় লাগে, তেমনই কিন্তু তেলও খুব কম লাগে। বজায় থাকে পুষ্টিগুণও। মাছ, ডিম, পনির কিংবা মুরগির বিভিন্ন পদও ভাপেই রান্না করা যায়। এই পদ্ধতিতে রান্না করলে তেলের সাশ্রয় হয়।
আগে থেকে মশলা মাখিয়ে রাখুন: রান্নার বেশ কিছু ক্ষণ আগে মাছ, মাংস কিংবা পনিরে মশলা মাখিয়ে রেখে দিন। এতে রান্নার স্বাদও বাড়ে আর তেলও কম লাগে। এ ক্ষেত্রে মশলা মাখানোর সময় দইয়ের ব্যবহার করতে পারেন। দই ব্যবহার করলে রান্নায় খুব বেশি তেল না দিলেও চলে।
ননস্টিকের ব্যবহার: এতে তেল খুব কম লাগে। আর রান্না তলায় লেগেও যায় না। এই কড়াইতে অল্প তেলে ঢাকা দিয়ে রান্না করলে চটজলদি রান্না করা যায়। সেই খাবারের স্বাদও কিন্তু দারুণ হয়। রোজকার রান্নার ক্ষেত্রে তাই ননস্টিক কড়াইতেই ভরসা রাখতে পারেন। মাছ ভাজা থেকে পাঁঠার মাংস, এ বার থেকে সব রান্নাই ননস্টিক কড়াইয়ে অল্প তেলে বানিয়ে ফেলুন। এ ছাড়া অল্প তেলে রান্নার জন্য এয়ার ফ্রায়ারও ব্যবহার করতে পারেন।