বিশ্বজুড়েই উদ্বেগের নাম ডায়াবিটিস। এ এক এমন অসুখ, যেখানে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। আর তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে ধীরে ধীরে বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। ‘ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবিটিস ফেডারেশন’-এর ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, ডায়াবিটিস নিঃশব্দ ঘাতক। ২০২৪ সালে বিশ্বে প্রায় ৩৪ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর কারণ এই অসুখ।
চিকিৎসকেরা বলছেন, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চার অভাব ডায়াবিটিসের প্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। ডায়াবিটিস হলে খাওয়াদাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ জরুরি। আবার কিছু খাবার আছে, যা ডায়াবেটিকদের জন্য ভালও। তেমনই একটি ফল পেয়ারা। ফলটিতে প্রাকৃতিক মিষ্টত্ব থাকলেও বিশেষ রসালো নয়। ফাইবারে পূর্ণ এই ফল রক্তে শর্করার মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখে।
কিন্তু ডাঁসা না কি পরিপক্ব— কোন পেয়ারা মধুমেহ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে? পেয়ারাপাতার জলও কি ডায়াবিটিস কমাতে কার্যকর?
প্রথমেই জানা প্রয়োজন, পেয়ারার পুষ্টিগুণের কথা। ১০০ গ্রাম পেয়ারায় ক্যালোরির পরিমাণ ৬৮, কার্বোহাইড্রেট থাকে ১৪.৩ গ্রাম, প্রোটিন ২.৫৫ গ্রাম, ৫.৪ গ্রাম ডায়েটরি ফাইবার, ২২৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। এ ছাড়াও থাকে ভিটামিন এ, ফোলেট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের মতো ভিটামিন এবং খনিজ। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে পেয়ারা অত্যন্ত কার্যকর।
আরও পড়ুন:
এখ প্রশ্ন হল, কাঁচা বা পাকা দুই রকম পেয়ারাই কি রক্তে শর্করার মাত্রা সমান ভাবে বশে রাখতে পারে। অনেকে লঙ্কা, সর্ষেবাটা দিয়ে চাট বানিয়েও ফলটি খান। সেটিও কি ডায়াবেটিকেরা খাওয়া চলে?
ডায়াবিটিসের চিকিৎসক অভিজ্ঞান মাঝি বলছেন, ‘‘শুধু পেয়ারাই নয়, ফাইবার সমৃদ্ধ যে কোনও ফলই ডায়াবেটিকদের জন্য ভাল। ফাইবার আসলে ছাঁকনির মতো কাজ করে। খাবারে থাকা শর্করাকে কিছুটা হলেও ছেঁকে দেয়, তার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা চট করে বাড়তে পারে না। যে সব খাবার খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ আচমকা বেড়ে যায় না, সেই সব খাবারকে বলা হয় 'লো গ্লাইসেমিক ফুড'। পেয়ারাও তারই মধ্যে একটি। ডাঁসা বা পাকা— দুই ধরনের পেয়ারাই খাওয়া যেতে পারে। তবে খুব বেশি পাকা পেয়ারার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কিঞ্চিৎ বেশি। কারণ এতে রস এবং মিষ্টত্ব দুই-ই বেশি থাকে।’’
অনেকেই পেয়ারার চাট খেতে ভালবাসেন। তাতেও অসুবিধার কিছু দেখছেন না চিকিৎসক। দিল্লির মেডিসিনের চিকিৎসক নরেন্দ্র সিংহের কথায়, তোয়াজ করে খেতে গিয়ে পেয়ারায় বাড়তি নুন, চিনি, তেল মেশালেই বিপত্তি।
সুগার কমাতে অনেকেই পেয়ারপাতার জল ফুটিয়ে খান। সমাজমাধ্যমেও এমন টোটকার কথা পাওয়া যায়। সত্যিই কি পেয়ারাপাতার জল খেলে সুগার বশে থাকে?
চিকিৎসক অভিজ্ঞানের কথায়, ‘‘ডায়াবিটিস কমাতে সাহায্য করে ডায়াবেটিক প্রতিরোধকারী ওষুধ। নিয়ন্ত্রত জীবনযাপনও জরুরি। অনেকেই পেয়ারাপাতার জল বা আরও নানা রকম টোটকা খান। তার ভেষজ গুণাগুণ অবশ্যই আছে। মেথি ভেজানো জলের গুণাগুণ ডায়াবিটিস কমানোর ক্ষেত্রে কিছু কিছু গবেষণায় প্রমাণিত। তবে সমস্ত টোটকা নিয়ে যথেষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়নি। কেউ খেতে চাইলে নিরুৎসাহ করি না, কারণ এগুলি ক্ষতিকর নয়। ’’ তবে নরেন্দ্রের মতে, পেয়ারাপাতায় অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট মেলে, যা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সহায়ক। তা ছাড়া, টাইপ -২ ডায়াবিটিস কমাতেও পেয়ারাপাতার উপকারিতা রয়েছে। অন্ত্র থেকে খাবারের শর্করা শোষণে এবং ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীলতা কমাতে এটি সহায়ক। ডায়াবিটিস কমাতে পেয়ারার উপকারিতা নিয়ে অতীতে গবেষণাও হয়েছে। পাবমেডে প্রকাশিত ২০১৬ সালের একটি গবেষণাপত্র বলছে, খোসা ছাড়া পেয়ারা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে তুলনামূলক বেশি কার্যকর।
পুষ্টিবিদেরা বলছেন, উপকারী হলেও এই ফল খাওয়া দরকার পরিমিত পরিমাণে।