রাত্রে ভাল ঘুম না হলে সারা দিনটাই মাটি! দিনের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সময়ে শরীরচর্চা করলে গভীর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। সম্প্রতি ‘নেচার কমিউনিকেশনস’-এর একটি সমীক্ষা থেকে এ রকমই তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, রাত্রে ঘুমোনোর আগে ৪ ঘণ্টার মধ্যে শরীরচর্চা করলে ঘুম ভাল না-ও হতে পারে। বিশেষ করে এর ফলে ঘুম আসতে সময় লাগে। ঘুমের জন্য সেই বিলম্ব প্রায় ৪৩ মিনিট। জানা যাচ্ছে, ওই চার ঘণ্টার মধ্যে শরীরচর্চা যত কঠিন হবে, ততই দেরি করে ঘুম আসবে। তাই চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ভাল ঘুমের জন্য সন্ধ্যার পর শরীরচর্চা করা উচিত নয়। প্রায় ১৫ হাজার সক্ষম মানুষের উপরে সমীক্ষা চালিয়ে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন:
শরীরচর্চা এবং ঘুমের যোগসূত্র
এক সময়ে শরীরচর্চা এবং ঘুমের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে গবেষকেরা ধন্দে ছিলেন। সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছিল, কর্মঠ ব্যক্তিরা অলস ব্যক্তিদের তুলনায় অনেক ভাল ঘুমোন। কোনও কোনও গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, সকালে শরীরচর্চা করলে রাত্রে ভাল ঘুম হয়। আবার অন্যত্র দাবি করা হয়েছে, দিনের মধ্যে যে কোনও সময়ে শরীরচর্চা করলে রাত্রে ভাল ঘুম হতে পারে। তবে এই ধরনের সমীক্ষাগুলি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অল্প সংখ্যক মানুষের উপরে করা হয়েছিল।
‘নেচার কমিউনিকেশনস’-এর সমীক্ষাটি ফিটনেস ট্র্যাকারের মাধ্যমে করা হয়েছে। প্রতি ক্ষেত্রেই সকলে প্রায় এক বছর ধরে ট্র্যাকারটি ব্যবহার করেছিলেন, যার ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করেছেন গবেষকেরা।
৩৬ মিনিটের বিলম্ব
এই পরীক্ষায় গবেষকেরা জানতে চেয়েছিলেন, দিনের মধ্যে কত দেরিতে শরীরচর্চা করলে তা রাত্রে ঘুমের ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। তারই সঙ্গে শরীরচর্চার ইনটেনসিটির উপরেও জোর দেওয়া হয়েছিল। জানা গিয়েছে, দিনের পরবর্তী ভাগে শরীরচর্চা এবং তার ইনটেনসিটি ঘুমের উপর প্রভাব ফেলে। অর্থাৎ, যদি কেউ ঘুমোনোর ৪ ঘণ্টা আগে দৌড়ন বা ক্রিকেট-ফুটবল খেলেন, সে ক্ষেত্রে সে দিন তাঁর ঘুম ৩৬ মিনিট দেরিতে এসেছে। ক্লান্তি এবং অন্যান্য বিষয়কে মাথায় রেখে কখনও কখনও তা ৮০ মিনিটও হয়েছে।
কী করা উচিত?
গবেষকেরা জানতে পেরেছেন, ঘুমোতে যাওয়ার আগে শরীরচর্চা বা কায়িক পরিশ্রম করলে, ঘুমের আগের মুহূর্তেও অনেকের হৃৎস্পন্দন কম থাকছে। শরীরে ক্লান্তির ছাপ সেখানে স্পষ্ট। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শ, যদি ঘুমোতে যাওয়ার চার ঘণ্টার মধ্যে শরীরচর্চা করতেই হয়, সে ক্ষেত্রে ধ্যান বা যোগাভ্যাস করা যেতে পারে। এর ফলে শরীর অনেকটাই শিথিল থাকে। ফলে সহজেই ঘুম আসে।
শরীরচর্চা না করার থেকে করা ভাল। তাই সন্ধ্যার পর শরীরচর্চা করা যেতেই পারে। চেষ্টা করতে হবে, তা যেন দ্রুত শেষ করে ফেলা যায়। দেরি হলে, সে ক্ষেত্রে জিমে ভারী ব্যয়াম না করে হালকা ব্যায়াম করা যেতে পারে। তবে এই সমীক্ষার কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কারণ ফিটনেস ট্র্যাকারের মাধ্যমে যে সব প্রয়োজনীয় ডেটা সংগ্রহ করা হয়েছে, তা অন্য কোনও মানুষের উপরে সমীক্ষা চালিয়ে পাওয়া তথ্যের থেকে আলাদা হতে পারে।