এক সময়ে জিমে কেবল প্রাপ্তবয়স্করাই যেতেন। কিন্তু এখন অনেক মা-বাবাই ফিটনেসের কথা ভেবে সন্তানকে অল্প বয়সেই জিমে ভর্তি করাচ্ছেন। প্রশ্ন উঠছে বাচ্চাদের জন্য জিমে যাওয়া আদৌ নিরাপদ? ফিটনেস প্রশিক্ষক অরিজিৎ ঘোষাল বলছেন, “ছোটবেলায় অনেক সময়েই বাচ্চারা ভুল ভঙ্গিতে বসে। ঠিক ভাবে পায়ের পাতা ফেলে হাঁটে না। বড় হয়েও সেই অভ্যেস থেকে যায়। ফলে একটা সময়ে কোমরে ব্যথা, শিরদাঁড়ায়, পায়ে সমস্যা হয়। অল্প বয়স থেকেই শারীরচর্চা বাচ্চাকে তার পশ্চার বিষয়ে সচেতন করবে, পেশি-জয়েন্টের জোর বাড়াবে। এতে তাদের বৃদ্ধি ভাল হবে।”
জিমে গেলেও সব ধরনের এক্সারসাইজ় ছোটদের করা উচিত নয়। অরিজিৎ বলছেন, “প্রথমেই বাচ্চাদের সাতটি বেসিক প্যাটার্ন নির্ভুল ভাবে শেখানো জরুরি। স্কোয়াট, বেন্ডিং, পুলিং, লাঞ্জেস, টুইস্ট ইত্যাদি তারা করতে পারে। এতে শারীরিক গঠন, চলাফেরা ঠিক হবে।” ব্যালান্সের ব্যায়ামও ভাল। হিল টু টো ওয়াক, স্টেপ আপ, সাইড স্টেপিং... করানো যায়। এতে ব্যালান্স ও ফ্লেক্সিবিলিটি দুটোই বাড়বে। বাচ্চাদের নিজের শরীরের ওজন ব্যবহার করে ক্যালাসথেনিক্স করার পরামর্শ দিচ্ছেন ফিটনেস বিশারদ গুরুপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। রেজ়িসট্যান্স ব্যান্ড ওয়ার্কআউট, যেমন, বেন্ট ওভার রো, গ্লুট ব্রিজ ইত্যাদিও তারা করতে পারে।
এড়িয়ে চলতে হবে
বাচ্চাদের জ়ুম্বা, এরিয়াল যোগব্যায়াম, পিলাটেস না করানোই ভাল। অরিজিতের মতে, বাচ্চাদের পুশ আপ, চেস্ট প্রেসের মতো পুশ প্যাটার্নের ব্যায়ামও চলবে না। এতে পেশির স্টিফনেস বাড়ে, জয়েন্ট মোবিলাইজ়েশন কমে যায়, স্নায়ুর ক্ষতি হয়। গুরুপ্রসাদ বলছেন, “হাড় ও জয়েন্টের গঠন সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ভারী ওজন তোলা ঠিক না। তবে ওয়েট রেজ়িসট্যান্স ব্যায়াম করা যায়। হাই-ইন্টেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিংও বাচ্চাদের এড়িয়ে যাওয়া উচিত। শারীরিক গঠন সম্পূর্ণ না হওয়ায় এতে হার্ট ও ফুসফুসে অতিরিক্ত চাপ পড়ে ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট হতে পারে।” এ ছাড়াও ডেডলিফ্ট, স্কোয়াট উইথ বারবেল, লেগ প্রেস, ক্রস ফিটের মতো ব্যায়াম ছোটদের জন্য বিপজ্জনক। এতে মেরুদণ্ড ও হাঁটুর উপর চাপ পড়ে। ভুল মুভমেন্টে আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে।
বয়স অনুযায়ী প্রশিক্ষণ
- পাঁচ থেকে সাত বছরের: বাচ্চাদের শরীরের নমনীয়তা, ভারসাম্য বাড়ানো জরুরি। বেসিক মুভমেন্টস, ব্যালান্স ও যোগব্যায়াম করানো যায়।
- আট থেকে বারো বছরে: বাচ্চাদের মধ্যে নির্দেশানুযায়ী কাজ করার ক্ষমতা তৈরি হয়। তাদের শারীরিক ভারসাম্য, নমনীয়তা, গতিশীলতাও বেশি হয়। এ সময় থেকে স্ট্রেংথদেনিং ও স্ট্যামিনা বাড়ানোর এক্সারসাইজ় শুরু করা যেতে পারে। ক্যালাসথেনিক্স এক্সারসাইজ় করাতে পারেন। হালকা পুশ আপ, ওয়াল সিট, জাম্পিং জ্যাক, হাই নিজ়ের মতো কার্ডিয়োও করানো যায়।
- তেরো থেকে ষোলো বছরে: শরীরের গঠন অনেকটাই হয়ে যায়। এ সময় থেকে হালকা ওজন-সহ স্ট্রেংথ ট্রেনিং, কোর স্ট্রেংথ বাড়ানোর ব্যায়াম, ট্রেডমিল, রেজ়িসট্যান্স ব্যান্ড এক্সারসাইজ় করা যায়।
সতর্ক থাকতে
জিমে বাচ্চাদের অবশ্যই অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। ট্রেনারকে বাচ্চার ক্ষমতা এবং সমস্যা বুঝতে হবে। অনেকেরই ছোট থেকে সর্দি-কাশির ধাত, মোশন সিকনেস থাকে। সে ক্ষেত্রে শারীরচর্চায় শ্বাসকষ্ট হতে পারে। দিনে ২০-২৫ মিনিট জিমে কসরত বাচ্চাদের জন্য যথেষ্ট।
চিকিৎসকের পরামর্শ
জেনারেল ফিজ়িশিয়ান সুবীর মণ্ডল বলছেন, “এক এক বয়সে এক একটি অঙ্গ, পেশির গঠন আলাদা হয়। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তাদের বয়স ও শারীরিক গঠনের সময়কাল বুঝে ব্যায়াম করানো জরুরি।” বাচ্চার কার্টিলেজের বৃদ্ধি নির্দিষ্ট একটি বয়স অবধিই হয়। সেই গঠন সম্পূর্ণ হলে বাচ্চার বাড় বন্ধ হয়। ঠিকঠাক ব্যায়াম করলে যত দিন বাচ্চার বাড়ার বয়স থাকে, পুরো সময়টাই সে বাড়তে পারে, জানালেন ডা. মণ্ডল।
অন্য দিকে, ছোটদের খোলা মাঠে খেলাধুলো করতে উৎসাহ দিতে হবে। সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো এবং নিয়মিত খেলাধুলো যেন থাকে তার রোজকার রুটিনে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)