বাতাসে হিমেল হাওয়া। ভোরের দিকে ঠান্ডা লাগছে। আবার রাতের দিকেও তাপমাত্রার পারদ নামছে। আবহাওয়ার এই বদলের সময়ে যেমন দূষণের পাল্লা বাড়ে, তেমনই নানা ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়ার প্রকোপও বাড়ে। তাই মরসুম বদলের সময়ে জ্বর, সর্দিকাশি বা পেটের গোলমাল লেগেই থাকে। সেই সঙ্গে নানা জীবাণুবাহিত অসুখবিসুখও হানা দেয়। এই সময়টাতে নানা রকম সংক্রামক রোগ ফিরে আসে। বেশি আক্রান্ত হয় ছোটরাই। কখনও জ্বর, তো কখনও গলাব্যথা, শুকনো কাশির পাশাপাশি ডায়েরিয়াও ভোগায়। সদ্যোজাত থেকে শুরু করে স্কুলপড়ুয়া, কিশোর-কিশোরী— সর্বত্র ছবিটা একই। চিকিৎসকেরা বলছেন, শিশুর জ্বর বা পেটখারাপ হলে অহেতুক ভয় পাবেন না। মুঠো মুঠো অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ালেই বরং বিপদ বাড়বে। তার চেয়ে নিয়ম মেনে চলতে হবে।
শিশুদের জ্বর, সর্দিকাশি, শ্বাসের সমস্যার মূল কারণ ‘হিউম্যান রেসপিরেটরি সিন্সিটিয়াল ভাইরাস’ বা আরএসভি ভাইরাস। সদ্যোজাত থেকে পাঁচ বছর বয়স অবধি শিশুরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়।
চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মতে, জন্মের এক মাস পর থেকেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি হতে দেখা যায়। সবচেয়ে বেশি ভোগে ৩ থেকে ৬ মাসের শিশুরা। যে সব শিশুদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব দুর্বল অথবা জন্মের পরে হার্ট বা ফুসফুসের কোনও ত্রুটি থাকে, তাদের ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে।
আরও পড়ুন:
পেটের গোলমালও খুব ভোগায় এই সময়টাতে। সেই সঙ্গেই বাড়ে হাঁপানির টান। বাবা-মায়েরা খেয়াল রাখবেন, শিশুর হাঁপানি থাকলে বাড়িতে ধূমপান করা যাবে না। শিশু যে ঘরে আছে, সেখানে ধূপ বা ধুনো জ্বালাবেন না। মশার ধূপ তো একেবারেই নয়। চিকিৎসকের কথায়, দূষিত পরিবেশ হাঁপানির কষ্ট বাড়িয়ে দেয়। ঘরের ভিতরের বাতাস যাতে বিশুদ্ধ থাকে, তা দেখতে হবে। দরকারে ‘এয়ার পিউরিফায়ার’ লাগাতে হবে।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ফিল্টার পরিষ্কার আছে কি না, দেখে নিতে হবে। অপরিষ্কার ফিল্টার থেকে ধুলো, নোংরা বেরিয়ে ঘরের বাতাস আরও বিষিয়ে দেয়। হাঁপানি হলে ইনহেলার দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। হাতের কাছে সব সময়ে ইনহেলার রাখতে হবে। বিশেষ করে রাতের দিকে হাঁপানির টান উঠলে যাতে ইনহেলার কাছেই থাকে, তা দেখে নিতে হবে। তবে কী ধরনের ইনহেলার শিশুর জন্য উপযোগী, তা চিকিৎসকের থেকে জেনে নিতে হবে।
বাবা-মায়েরা কী কী খেয়াল রাখবেন?
তিন দিনের বেশি জ্বর থাকলে সেই সঙ্গে শুকনো কাশি সারতে না চাইলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
খেয়াল করবেন, শিশুর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কি না। যদি দেখেন, শিশু মুখ দিয়ে শ্বাস নিচ্ছে, তা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
শিশুর প্রস্রাব ঠিকমতো হচ্ছে কি না, তা-ও নজরে রাখতে হবে। প্রস্রাব যদি দিনে পাঁচ বারের কম হয়, তা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
খাবার বানানোর সময় যে জল বা পাত্র ব্যবহার করছেন তা যেন খুব পরিচ্ছন্ন হয়। হাত ভাল করে ধুয়ে খাওয়ান শিশুকে। সন্তান নিজের হাতে খেলেও নজর রাখুন, ওর হাত যেন পরিষ্কার থাকে। শিশুকে খুব বেশি ক্ষণ আগে কেটে রাখা ফল দেবেন না। রাস্তার পানীয় ও খাবার থেকে দূরে রাখুন।
অন্তত পাঁচ বছর বয়স অবধি পানীয় জল ফুটিয়ে ঠান্ডা করে খাওয়ান। জল পরিশোধনের ব্যবস্থা থাকলে সেই যন্ত্রটিও নিয়মিত পরিষ্কার করুন। বাড়ির জলের ট্যাঙ্ক নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
জ্বর, সর্দি-কাশি বা পেটখারাপ যা-ই হোক না কেন, নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াবেন না শিশুকে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়ালে হিতে বিপরীত হতে পারে।