সন্তানের বাড়বৃদ্ধির জন্য দুধ খাওয়াতে হবে। সে জন্য চাই গরুর খাঁটি দুধ। আগেকার দিনে তাই অভিভাবকেরা খাটালে গিয়ে বা যে সব বাড়িতে গরু, মোষ পোষা হয় সেখান থেকে দুধ নিয়ে আসতেন।
তবে সেই ছবি বদলে গিয়েছে বহু দিন হল। দুধের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য গরু, মোষকে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় এমন বিষয় নিয়ে চর্চা শুরু হতেই স্বাস্থ্যের কথা ভেবে লোকজন বেছে নিয়েছেন প্যাকেটজাত দুধ। যেখানে থাকে পাস্তুরাইজ়ড দুধ। বিষয়টা কী? দুধ উচ্চ তাপমাত্রায় দীর্ঘ সময় ধরে ফুটিয়ে এতে থাকা রোগজীবাণু নষ্ট করা হয়। দুধ জীবাণুমুক্ত করা এবং তা সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করার যে পদ্ধতিকেই বলা হয় পাস্তুরাইজ়েশন। তার পরে সেটি প্যাকেটবন্দি করে বিক্রি করা হয়।
আরও পড়ুন:
সেই দুধই বাড়িতে আনার পর চলে বার বার ফুটিয়ে নেওয়ার পর্ব। কিন্তু এর কি কোনও দরকার আছে?
পুষ্টিবিদদের অনেকেই এ নিয়ে নানা মত পোষণ করেন। পুষ্টিবিদ অনন্যা ভৌমিক বলছেন, ‘‘পাস্তুরাইজ়ড দুধ সংরক্ষণের আগেই তা জীবাণুমুক্ত করা হয়। ফলে প্যাকেটবন্দি দুধ আবার ফুটিয়ে নেওয়ার সাধারণত কোনও প্রয়োজন হয় না।’’
পুষ্টিবিদ শম্পা সরকার জানাচ্ছেন, পাস্তুরাইজ়েশন পদ্ধতিতেও তফাত থাকে। সাধারণত টেট্রা প্যাকের দুধ ফুটিয়ে খাওয়ার দরকার হয় না। কিন্তু প্যাকেটজাত দুধ কী ভাবে আনা হচ্ছে, ফ্রিজে সঠিক ভাবে রাখা হচ্ছে কি না, তার উপর এর মান নির্ভর করে। সেই কারণে দুধ ফুটিয়ে নেওয়া ভাল।
সাধারণত দুধ জীবাণুমুক্ত করার জন্যই তা ফোটানোর প্রয়োজন হয়। তবে প্রয়োজন ছাড়া তা ফোটানো অর্থহীন মনে করেন পুষ্টিবিদ অনন্যা। একই মত হায়দরাবাদের একটি হাসপাতালের পুষ্টিবিদ জি সুষমার। তিনি বলছেন, দুধ যত ফোটানো হবে, তাতে থাকা ভিটামিনের মাত্রা তত কমবে। অনন্যা জানাচ্ছেন, দুধ ফোটালে স্বল্প মাত্রায় হলেও পুষ্টিগুণ কমে। বি১২, বি১-এর মতো ভিটামিন বার বার ফোটালে কমতে থাকে। তা ছাড়া, প্রোটিন হজমেও এতে সমস্যা হতে পারে। গরম করার ফলে প্রোটিনের অণুতে বদল ঘটে। প্রোটিন ‘ডিনেচার্জড’ হয়ে যায় বা তার প্রকৃতিদত্ত গুণাবলি নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে বার বার ফোটানো দুধ খেলে কারও কারও হজমেরও সমস্যা হতে পারে, শরীরে প্রদাহ হতে পারে। তা ছাড়া দুধ বেশি ফোটালে কখনও কখনও তা বাদামী হয়ে যায়। দুধের প্রোটিন এবং ল্যাক্টোজ় প্রতিক্রিয়া করে। এতে দুধের স্বাদে বদল হয়। পুষ্টিগুণও কমে যায়।
তা হলে কী ভাবে দুধ খাওয়া দরকার?
শম্পার মতে, প্যাকেটজাত দুধ এক বার ফুটিয়ে নিলে রোগজীবাণুর বিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকা যায়। তবে তার মানে এই নয় যে, সেটি দীর্ঘ ক্ষণ ফোটাতে হবে। বরং এক বার ভাল করে গরম করে নিলেই যথেষ্ট। অনন্যাও বলছেন, স্মুদিতে বা সরাসরি ঠান্ডা দুধ খাওয়া যায়। ফ্রিজ থেকে বার করে সেই দুধ না ফুটিয়ে খাওয়া চলে, সমস্যা নেই। তবে এ কথাও মনে করাচ্ছেন তিনি, দুধ ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে সঠিক ভাবে। না হলে জীবাণু বাসা বাঁধতে পারে।
তবে পুষ্টিবিদেরা মনে করাচ্ছেন, পাস্তুরাইজ়ড দুধের জন্য যে নিয়ম কাঁচা দুধে তা খাটে না। সরাসরি গরুর দুধ বা মোষের দুধ সংগ্রহ করলে তা ভাল করে ফুটিয়ে নেওয়া দরকার।