Advertisement
E-Paper

রোজ যে মাখন খান, তা ‘অতিপ্রক্রিয়াজাত’ বলে জানিয়েছে আইসিএমআর! সাদা মাখন খাবেন কি?

কারখানায় তৈরি খাবারের থেকে বাড়িতে তৈরি খাবার সব সময়েই ভাল। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, হলুদ রঙের কারখানায় তৈরি অতিপ্রক্রিয়াজাত মাখনের বদলে বাড়িতে তৈরি ঘি বা সাদা মাখন খাওয়া যেতে পারে।

টেবল বাটারের তুলনায় বাড়িতে বানানো নুন ছাড়া সাদা মাখন অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর!

টেবল বাটারের তুলনায় বাড়িতে বানানো নুন ছাড়া সাদা মাখন অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর! ছবি : শাটারস্টক।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৭:১১
Share
Save

বাড়িতে সাধারণত যে মাখন খাওয়া হয়, তার রং হালকা হলদেটে। ওই মাখনকে বলা হয়, টেবল বাটার বা ইয়েলো বাটার। টোস্টে তো বটেই, তা ছাড়াও রোজ নানা খাবার— যেমন ওমলেট, স্যুপ, পরোটা, স্যান্ডউইচে অনেকের ওই মাখন খাওয়ার অভ্যাস আছে। কেউ কেউ আবার কফিতে কিংবা বিস্কুটে মাখন দিয়েও খান। কিন্তু হলুদ রঙের ওই মাখনকে কিছু দিন আগেই অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবার বা ‘আল্ট্রা-প্রসেসড ফুড’ হিসাবে গণ্য করা হবে বলে জানিয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)।

‘আল্ট্রা-প্রসেসড ফুড’ কাকে বলে?

সাধারণত যে খাবার প্রচুর পরিমাণে কারখানায় উৎপাদন করা হয়, সেই সব খাবারে এমন কিছু উপাদান থাকে, যা দীর্ঘমেয়াদে শরীরের ক্ষতি করতে পারে। সেই সব উপাদানের মধ্যে অন্যতম হল খাবার দীর্ঘ দিন ভাল রাখার প্রয়োজনীয় রাসায়নিক, বিভিন্ন উপকরণ সহজে মিশিয়ে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক বা ইমালসিফায়ার, এ ছাড়া, কৃত্রিম মিষ্টত্ব আনার উপাদান, গন্ধ এবং রং। চিকিৎসকেরা বলেন, প্রক্রিয়াজাত খাবারে থাকা ওই সমস্ত উপাদান অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খাবারের পুষ্টিগুণ এবং ফাইবার কমিয়ে দেয়। পড়ে থাকে স্নেহপদার্থ, চিনি এবং নুন, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। দোকান থেকে কেনা হলুদ মাখনকেও সেই অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবারের পর্যায়েই ফেলেছে আইসিএমআর।

 হলুদ রঙের মাখনকে  আল্ট্রা-প্রসেসড ফুড হিসাবে গণ্য করা হবে বলে জানিয়েছে আইসিএমআর।

হলুদ রঙের মাখনকে আল্ট্রা-প্রসেসড ফুড হিসাবে গণ্য করা হবে বলে জানিয়েছে আইসিএমআর। ছবি: শাটারস্টক।

তবে কোন মাখন খাবেন?

কারখানায় তৈরি খাবারের থেকে বাড়িতে তৈরি খাবার সব সময়েই ভাল। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, কারখানায় তৈরি অতিপ্রক্রিয়াজাত হলুদ রঙের মাখনের বদলে বাড়িতে তৈরি ঘি বা সাদা মাখন খাওয়া যেতে পারে। গরুর দুধের সর থেকে বাড়িতে ঘি তৈরি করা হয়। সেই ঘি সব সময়েই শরীরের জন্য ভাল। তা ছাড়া সাদা মাখন, যাকে ননীও বলা হয়, তা সচরাচর দুধ মন্থন করে বাড়িতেই তৈরি করা হয়। সেই সাদা মাখনও শরীরের জন্য ভাল বলে জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদেরা।

কী কী গুণ আছে সাদা মাখনে?

শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ভিটামিন, যেমন ভিটামিন এ, ডি, ই, কে সাদা মাখনে মজুত রয়েছে বলে জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদ শিল্পা অরোরা। তিনি বলছেন, ‘‘সাদা মাখনে রয়েছে দুধের থেকেও বেশি ক্যালসিয়াম। রয়েছে এইচডিএল। যাকে ভাল কোলেস্টেরল বলা হয়। যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। তা ছাড়া রয়েছে আয়োডিনও। যে আয়োডিন থাইরয়েডের হরমোনের মধ্যে ভারসম্য বজায় রাখতে এবং বিপাক হার বৃদ্ধি করতে জরুরি।’’

শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ভিটামিন, যেমন ভিটামিন এ, ডি, ই, কে সাদা মাখনে মজুত রয়েছে।

শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ভিটামিন, যেমন ভিটামিন এ, ডি, ই, কে সাদা মাখনে মজুত রয়েছে। ছবি: শাটারস্টক।

পুষ্টিবিদ শ্রুতি ভরদ্বাজও এ ব্যাপারে সহমত। তিনিও মনে করেন, কারখানায় উৎপাদিত টেবল বাটারের তুলনায় বাড়িতে বানানো নুন ছাড়া সাদা মাখন অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। তিনি বলছেন, ‘‘স্যাচুরেটেড ফ্যাট সাদা মাখনেও থাকে, তবে তা হলুদ মাখনের তুলনায় কম। তা ছাড়া সাদা মাখনের স্যাচুরেটেড ফ্যাট ভাল কোলেস্টেরল তৈরি করতেও সাহায্য করে।’’

হজম সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসক পবন রাওয়াল সাদা মাখনের আরও একটি গুণের কথা বলেছেন। তিনি জানাচ্ছেন, সাদা মাখনে ল্যাকটোজ়ের পরিমাণ থাকে অত্যন্ত কম। ফলে যাঁদের দুগ্ধজাত খাবার খেলে হজমের সমস্যা হয়, তাঁদের জন্যও সাদা মাখন উপযোগী।

তবে চিকিৎসক রাওয়াল এবং পুষ্টিবিদ ভরদ্বাজ দু’জনেই জানাচ্ছেন, বাড়িতে তৈরি সাদা মাখন পুষ্টিগুণে ভাল বলে বেশি পরিমাণে খাওয়াও উচিত নয়। যে হেতু সাদা মাখনেও স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে, তাই পরিমাণ বুঝেই খাওয়া উচিত।

বাড়িতে মাখন বানানোর জন্য প্রথমেই প্রয়োজন হবে ফ্যাটযুক্ত দুধের সর।

বাড়িতে মাখন বানানোর জন্য প্রথমেই প্রয়োজন হবে ফ্যাটযুক্ত দুধের সর। ছবি: সংগৃহীত।

বাড়িতে সাদা মাখন বানাবেন কী ভাবে?

বাড়িতে সাদা মাখন বানানোর একটি সহজ উপায় জানিয়েছিলেন রন্ধনশিল্পী তরলা দলাল। বাড়িতে মাখন বানানোর জন্য প্রথমেই প্রয়োজন হবে ফ্যাটযুক্ত দুধের সর। তার জন্য প্রতিদিন ১ লিটার করে ফ্যাট যুক্ত দুধ ফোটাতে হবে। ঠান্ডা হওয়ার পরে সরটা তুলে নিতে হবে। প্রায় দু’সপ্তাহ ওই সর একটি বায়ুনিরোধক কৌটোয় ভরে ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে।

দু’সপ্তাহ পরে যে দিন মাখন বানাবেন সে দিন ফ্রিজ থেকে ওই মালাইয়ের কৌটোটি বার করে ৬ ঘণ্টা ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দিন। তার পরে মাখন বানানোর কাজ শুরু করুন। দু’ সপ্তাহে হিসাব মতো আড়াই কাপ মতো সর জমার কথা।

এ বার একটি উঁচু কানা যুক্ত বাটিতে সর এবং ২ কাপ বরফ দেওয়া জল মিশিয়ে হ্যান্ড ব্লেন্ডার দিয়ে ফেটাতে থাকুন। ৩-৪ মিনিট ফেটানোর পরে (হ্যান্ড ব্লেন্ডার দিয়ে বেশি ক্ষণ ফেটাবেন না, তাতে মাখন ফেটে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে তুলতে অসুবিধা হবে) উপরে যে সাদা স্তরটি ভেসে উঠবে, সেটিই সাদা মাখন। একটি বায়ু নিরোধক পাত্রে ফ্রিজে রেখে দিন। ১-২ মাস পর্যন্ত ওই মাখন খাওয়া যাবে।

White Butter ICMR

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}