মশার কামড় বাঁচিয়ে রাতের নিশ্চিন্ত ঘুমের ‘গ্যারান্টি’ দিতে পারে মশানাশক যন্ত্র। কিন্তু তা কি মশাকে নাশ করার পাশাপাশি শরীরেরও ক্ষতি করছে? শীতকাল হলে মশা নিয়ে বিশেষ ভাবতে হয় না ঠিকই। জানলা-দরজা বন্ধই থাকে অধিকাংশ সময়ে। কিন্তু এখন গরম পড়েছে। জানলা বন্ধ রাখা যায় না সব সময়ে, ফলে খোলা গবাক্ষপথে নাগাড়ে আগমন হয় মশাদের। রাত বিরেতে তাদের ‘আক্রমণ’ ঠেকাতে মশানাশক তেলের যন্ত্র বা ধূপ কার্যকরী উপায় হতেই পারে। কিন্তু তা শরীরের জন্য কতটা নিরাপদ?
কী রয়েছে মশানাশক তেল বা ধূপে
মশানাশক যন্ত্র বা ধূপ শরীরের জন্য ক্ষতিকর কি না, তা বুঝতে হলে আগে জানতে হবে মশা মারার তেল বা ধূপে কী ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হয়। মুম্বইয়ের ইন্টারনাল মেডিসিনের চিকিৎসক চৈতন্য কুলকার্নি বলছেন, ‘‘মশা মারার জন্য সাধারণ ভাবে যে বৈদ্যুতিক ভেপরাইজ়ার ব্যবহার করা হয়, তাতে অ্যালেথ্রিন বা প্রালেথ্রিন নামের এক ধরনের রাসায়নিক থাকে। যা তৈরি হয় চন্দ্রমল্লিকা জাতীয় গাছে পাওয়া প্রাকৃতিক কীটনাশক পদার্থ থেকে। ওই রাসায়নিক মশা দূরে রাখতে সাহায্য করে ঠিকই, তবে দীর্ঘ ব্যবহারে মানবদেহের ক্ষতি করতে পারে।

রাত বিরেতে তাদের ‘আক্রমণ’ ঠেকিয়ে মশানাশক যন্ত্র বা ধূপ কার্যকরী উপায় হতেই পারে। কিন্তু তা শরীরের জন্য কতখানি নিরাপদ? — ফাইল চিত্র।
বেঙ্গালুরুর ইন্টারনাল মেডিসিনের চিকিৎসক পূজা পিল্লাইও কিছুটা একই কথা বলছেন। তাঁর মতে, ‘‘মশানাশক তেল বা ধূপে ব্যবহৃত রাসায়নিকের ধোঁয়া যদি দীর্ঘ সময় ধরে শরীরে প্রবেশ করে, তবে তা থেকে নানা ধরনের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের এবং শ্বাসের সমস্যা থাকা প্রাপ্তবয়স্কদের এই সমস্যা হতে পারে বেশি।’’
সারা রাত মশার ধূপ বা মশানাশক যন্ত্র জ্বালিয়ে রাখলে কী হতে পারে?
চিকিৎসকেরা বলছেন, যদি ঘরে ঠিকমতো হাওয়া চলাচল না করে, তবে মশানাশক তেল বা ধূপের ধোঁয়া থেকে মাথা ধরা, চোখ জ্বালা, গলায় অস্বস্তি হতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের যদি অ্যাস্থমার সমস্যা থাকে বা প্রাপ্তবয়স্কদের যদি অন্য কোনও অসুখ থাকে তবে সারা রাত মশানাশক তেল জ্বালিয়ে রাখলে তাদের অস্বস্তি বেশি হবে। শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা যেমন হতে পারে, তেমনই নানা ধরনের অ্যালার্জিও হতে পারে। চিকিৎসক কুলকার্নি বলছেন, মশানাশক ধূপের ধোঁয়া থেকে ঘরের বায়ুদূষণ হয়। যে পরিবেশে শ্বাস নেওয়া কয়েকশো সিগারেট খাওয়ারই সমান।

মশানাশক তেল বা ধূপের ধোঁয়া থেকে মাথা ধরা, চোখ জ্বালা, গলায় অস্বস্তি হতে পারে। ছবি: শাটারস্টক।
তবে কী করবেন?
সারারাত যদি মশানাশক তেল বা ধূপ জ্বালতেই হয়, তবে কয়েকটি বিষয়ে সতর্ক হতে বলছেন চিকিৎসকেরা।
১। বিছানা থেকে, বা যেখানে ঘুমোচ্ছেন, সেখান থেকে অন্তত কয়েক ফুট দূরত্বে রাখুন।
২। ঘরের অন্তত একটি জানলা খুলে রাখুন। তাতে ঘরে হাওয়া এবং অক্সিজেন চলাচলের মাত্রা ঠিক থাকবে।
৩। যদি সম্ভব হয়, তবে কয়েক ঘণ্টা জ্বালিয়ে রাখার পরে নিভিয়ে দিন। দরকার হলে ঘুমনোর কয়েক ঘণ্টা আগে জ্বালিয়ে রাখুন। বিছানায় যাওয়ার আগে নিভিয়ে দিন।
বিকল্প ব্যবস্থা কিছু আছে কি?
মশারি, সিট্রোনেলা তেলের মতো প্রাকৃতিক কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক। এ ছাড়া, মশানাশক বৈদ্যুতিক জ়্যাপারও ব্যবহার করতে পারেন বলে জানাচ্ছেন তিনি। কারণ, তাতে কোনও রাসায়নিক থাকে না।