Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Exercise

বয়সকালে পা, কোমরের ব্যথার দাওয়াই হতে পারে ছোটবেলার শাস্তি, কেমন সেই ব্যায়াম?

ছোটবেলায় পড়া না পারলে কান ধরে এক পায়ে দাঁড়িয়েও তো থেকেছেন নিশ্চয়ই? ব্যথা কমাতে ছোটবেলার সেই শাস্তি আবার বুড়ো বয়সে পেতে হবে?

Symbolic image of standing one leg

এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা কি শুধুই শাস্তি? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৩ ১২:৫৩
Share: Save:

কোকিলের ডাকে ঘুম ভাঙলেও বিছানা ছাড়তে গিয়ে দাঁড়কাকের গলার স্বর মনে পড়ে যাচ্ছে। কারণ, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা। তার উপর যদি বাত বা অস্থিসন্ধির সমস্যা থাকে, তবে তো কথাই নেই। বয়স্কদের মধ্যে অনেকেই আবার কারণ-অকারণে পড়ে যান। চিকিৎসকেরা বলেন, বয়সকালে হাঁটু, কোমর, পা— এই সংক্রান্ত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত শরীরচর্চা করা জরুরি। কিন্তু প্রতিদিন ব্যায়ামের জন্য এত সময় দেওয়াও তো সকলের পক্ষে সম্ভব হয় না। প্রশিক্ষকরা বলছেন, শরীরে নমনীয়তা ধরে রাখতে গেলে খুব বেশি পরিশ্রম কিন্তু করতে হয় না। দৈনন্দিন কিছু কাজ দিয়েই অনেক ব্যথার মুখে নুন ঢেলে দেওয়া যায়। যেমন মাটিতে বসে আনাজ কাটা, ঘর মোছা, শিলে বাটা। আবার ছোটবেলায় পড়া না পারলে কান ধরে এক পায়ে দাঁড়িয়েও তো থেকেছেন নিশ্চয়ই? এই বয়সে এসে আর কান ধরে নয়, শুধু এক পায়ে দাঁড়িয়েই অনেক সমস্যার সমাধান করা যায়।

আগে ঠাকুরমা-দিদিমারা দিনের অনেকটা সময় মাটিতে বসে কাজ করতেন। ঘটনাচক্রে তাঁরা অনেক বেশি পরিশ্রমী এবং ফিটও ছিলেন। শুনতে খারাপ লাগলেও এ কথা সত্যি যে, এ প্রজন্মের মানুষের সঙ্গে মাটির যোগ কম। তার উপর প্রযুক্তির নির্ভরশীলতা তো আছেই। এখন প্রশ্ন হল, সারা দিন ঘরে-বাইরে নানা কাজের মধ্যে আলাদা করে মাটিতে বসবেন কখন? চেয়ার বা সোফায় বসে পছন্দের সিনেমা বা মেগা না দেখে এই সময়টুকুও কিন্তু কাজে লাগিয়ে ফেলতে পারেন সামান্য কিছু ব্যায়াম করে। আবার রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে, ছুরি দিয়ে সব্জি কাটার বদলে মাটিতে বসে বঁটি দিয়ে আনাজ কাটতে পারেন। তবে মাটিতে বসারও বিভিন্ন ধরন আছে।

One of the Sitting Posture

চেয়ার বা সোফায় বসে পছন্দের সিনেমা বা মেগা না দেখে মাটিতে বসে করে ফেলতে পারেন সামান্য কিছু ব্যায়াম। ছবি- সংগৃহীত

কোন কোন ভঙ্গিতে ফিরে পাবেন পায়ের জোর, বজায় থাকবে ভারসাম্য?

১) মাটিতে বসা

সারা দিনে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট মাটিতে বসার অভ্যাস করতে পারলে নিতম্বের অস্থিসন্ধির নমনীয়তা বাড়ে। একটানা চেয়ারে বসে থেকে মেরুদণ্ডের নানা রকম সমস্যা হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে মাটিতে বসা অভ্যাস করতে হবে।

বাবু হয়ে বসা

এই ভাবে বসতে খুব একটা কষ্ট করতে হয় না। মাটিতে পা মুড়ে ‘বাবু’ হয়ে বা পদ্মাসনে বসা অভ্যাস করতে হবে।

৯০/৯০

মাটিতে বসে একটি পা ৯০ ডিগ্রি কোণে ঘুরিয়ে নিতম্বের কাছাকাছি নিয়ে আসুন। অন্য পা ৯০ ডিগ্রি কোণে ঘুরিয়ে সামনে এনে রাখুন। এই ভাবে মিনিট পাঁচেক বসার পর আবার পায়ের অবস্থান পরিবর্তন করুন।

দীর্ঘ ক্ষণ বসে থাকা

মাটিতে পা ছড়িয়ে বসে পড়ুন। মেরুদণ্ড যেন টান টান থাকে। পায়ের ‘কাফ মাসল’ এবং গোড়ালি যেন মাটি ছুঁয়ে থাকে।

২) সাহায্য ছাড়া মাটি থেকে উঠে দাঁড়ানো

ধরুন, মাটিতে পা মুড়ে পদ্মাসনে বসে রয়েছেন। এ বার কোনও কিছুর সাহায্য ছাড়াই মাটি থেকে সটান উঠে দাঁড়ান তো দেখি। পারছেন না তো? চিন্তা নেই। কয়েকটা দিন অভ্যাস করলেই কিন্তু সহজে তা করতে পারবেন। কার শরীর কত সবল, তা এই ভঙ্গি দেখলেই ধরতে পারা যায়।

Image of Squat Position

নিতম্ব, কোমর বা হাঁটুতে ব্যথা কমাতে স্কোয়াট করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। ছবি- সংগৃহীত

৩) স্কোয়াট

চেয়ারে বসতে গেলেন কিন্তু বসলেন না। হাঁটু মুড়ে শূন্যে ওই ভাবে ঝুলে থাকলেন কিছু ক্ষণ। আগে অনেকেরই ধারণা ছিল, স্কোয়াট করলে বোধ হয় হাঁটুর উপর চাপ পড়ে বেশি। কিন্তু সে ধারণা সঠিক নয়। বরং নিতম্ব, কোমর বা হাঁটুতে ব্যথা কমাতে স্কোয়াট করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরাও।

৪) পাখির মতো করে দাঁড়ানো

এই ব্যায়াম করতে গেলে সঙ্গে রাখতে হবে একটি স্টুল বা বেঞ্চ। পায়ের একটি হাঁটু ভাঁজ করে, এক পাশে শুইয়ে বেঞ্চের উপর রাখুন। যে পা রাখবেন, তার উল্টো দিকের হাত রাখুন পায়ের উপর। এ বার পায়ের পাতা গোল গোল করে ঘোরানো অভ্যাস করুন।

Image of standing one leg

মনে পড়ে ছোটবেলায় শাস্তি দিতে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে বলা হত? ছবি- সংগৃহীত

৫) এক পায়ে দাঁড়ানো

বয়সকালে ব্যালান্স হারিয়ে পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা শোনা যায় প্রায়ই। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অভ্যাস করতে হবে এই ভঙ্গি। এক-একটি পায়ে ২০ সেকেন্ড করে সময় দিলেই হবে। মনে পড়ে ছোটবেলায় শাস্তি দিতে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে বলা হত? অনেকটা সে ভাবেই।

Image of rubing feet and toes

অনেকেই হয়তো জানেন না, পায়ের পাতা এবং গোড়ালিতে বেশ কিছু উদ্দীপক থাকে। ছবি- সংগৃহীত

৬) পা এবং গোড়ালি ঘষা

দীর্ঘ ক্ষণ পায়ে জুতো পরে থাকলে পায়ের তলায় বা গোড়ালিতে থাকা সেন্সরগুলির কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। অনেকেই হয়তো জানেন না, পায়ের পাতা এবং গোড়ালিতে বেশ কিছু উদ্দীপক থাকে। যা দেহের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে মাঝেমধ্যে খালি পায়ে হাঁটা অভ্যাস করতে হবে। কাজের মধ্যেই একটু সময় বার করে নিন। চেয়ারে বসে পায়ের পাতা বা গোড়ালিতে হাত বুলিয়েই কিন্তু এই সমস্যা সারিয়ে ফেলা যায়।

Image of Rolling Ball

পায়ের যে যে অংশে ব্যথা, সেখানে বল চেপে ধরে ঘোরানো অভ্যাস করুন। ছবি- সংগৃহীত

৭) বল ঘোরানো

হাতের মুঠোর জোর বাড়াতে অনেক সময়েই চিকিৎসকেরা হাতে স্পঞ্জের বল নিয়ে ব্যায়াম করতে বলেন। পায়ের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। পায়ের ‘কাফ মাসল’-এর তলায় ওই বলটি রেখে, পা মুড়ে চাপ দিন ৪ সেকেন্ড। আবার অন্য পায়েও একই ভাবে এই ব্যায়াম করুন। মাটির উপর বলটি রেখে, পায়ের পাতার তলায় চাপ দিয়ে গোল গোল করে ঘোরাতে পারেন। পায়ের যে যে অংশে ব্যথা, সেখানে ওই বল চেপে চেপে ঘোরানো অভ্যাস করুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Exercise Mobility body flexibility
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE