হাঁটার সঙ্গেও কি মনের সম্পর্ক আছে? অন্তত গবেষণা তা-ই বলছে। ‘নেচার’ জার্নালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে হাঁটার গতির সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন গবেষকেরা। নানা বয়সি বহু মানুষের উপর সমীক্ষা চালিয়ে দাবি করা হয়েছে, হাঁটাচলার গতি দেখে কিছুটা হলেও মনের অবস্থা বোঝা যায়। তবে সকলের ক্ষেত্রেই যে তা এক রকম হবে, তা নয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গবেষকদের অনুমান মিলে গিয়েছে।
গবেষণায় কী দাবি করা হয়েছে?
তিন রকম মনের অবস্থা তুলে ধরেছেন গবেষকেরা। তা কী রকম?
১) সব সময়েই খুব তাড়াহুড়োয় বা হন্তদন্ত হয়ে যিনি হাঁটেন, তাঁর মানসিক চাপ বেশি।
২) খুবই ধীরেসুস্থে, অলস ভাবে যিনি হাঁটছেন তিনি হয় হতাশায় ভুগছেন বা অবসাদগ্রস্ত।
৩) কোনও দিকে না তাকিয়ে হাত-পা ছোঁড়াছুঁড়ি করতে করতে হাঁটা বা বারে বারে ধাক্কা খাওয়া অথবা যে কোনও সময়েই হাঁটতে গিয়ে অসাবধানতায় পড়ে যাওয়া থেকে বোঝা যায়, ওই ব্যক্তির উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা খুবই বেশি।
আরও পড়ুন:
সমাজবিজ্ঞানের দুই জার্মান অধ্যাপক মাইরা বিয়ারম্যান ও অ্যানা সিয়েবেন এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করেছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, মনের ভাবগতিকের ছাপ পড়ে হাঁটাচলায়। যিনি সব সময়েই খুব তাড়াতাড়ি হাঁটেন, তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছনোর তাড়া বেশি। তাই তাঁর মনের চাপও বেশি। দেখা গিয়েছে, এমন ব্যক্তি যখন খুব ভিড়ের মধ্যে বা জনবহুল জায়গায় ধীরে হাঁটতে বাধ্য হন, তখন তাঁর ‘স্ট্রেস’ হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। তাঁর মানসিক চাপ বাড়ে এবং তিনি অস্থিরতায় ভোগেন। এমন ব্যক্তি যে কোনও পরিস্থিতিতেই দ্রুত অস্থির হয়ে পড়েন। তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। তাড়াতাড়ি হাঁটা মানেই যে মানসিক চাপ বেশি হবে, তা সব ক্ষেত্রে না-ও হতে পারে। সব কিছুই নির্ভর করে সেই ব্যক্তির মনের অবস্থা, পরিপার্শ্ব ও পরিস্থিতির উপরে।
এ দেশের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’-এর একটি গবেষণাপত্র 'পাবমেড'-এ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানেও একই দাবি করেছেন গবেষকেরা। তাঁরা জানিয়েছেন, যিনি সব সময়েই ধীরেসুস্থে হাঁটেন, যাঁর হাঁটার গতি কখনওই বাড়ে না, তাঁর হতাশা বেশি। অনেকের উপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, এমন মানুষজন অবসাদে ভোগেন বেশি। যার ছাপ পড়ে তাঁদের অভিব্যক্তিতে ও হাঁটাচলায়।
তবে গবেষকেরা এ-ও জানিয়েছেন, হাঁটাচলার গতি দেখে মনের অবস্থার আভাস পাওয়া যায় মাত্র। বিশেষ করে হতাশা, অবসাদ বা মনের কোনও অসুখ চিহ্নিত করতে অনেক ক্ষেত্রেই হাঁটাচলার ধরন পরীক্ষা করেন চিকিৎসকেরা। সকলের ক্ষেত্রে এই তথ্য প্রযোজ্য না-ও হতে পারে।