হাঁপানি ও সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজ়িজ়) অতি বিষম বস্তু। যাঁরা ভোগেন, তাঁরা এর যন্ত্রণা বিলক্ষণ জানেন। আর যাঁরা অল্প ঠান্ডাতেই হাঁচি-কাশি-শ্বাসকষ্টে অস্থির হয়ে ওঠেন, তাঁরা মুঠো মুঠো ওষুধ খেয়ে সাময়িক স্বস্তি পেয়ে ভাবেন, অর্ধেক রোগ বুঝি সেরেই গেল! শ্বাসের রোগকে মোটেও খাটো করে দেখা উচিত নয়। এর অভিঘাত থেকে নিস্তার নেই, একে শুধু বশে রাখা সম্ভব। আর হাঁপানি বা সিওপিডিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইনহেলারকেই একমাত্র হাতিয়ার করে ফেলেন অনেকে। জরুরি অবস্থায় বিপদ এড়াতে ইনহেলার যে জরুরি, তাতে সন্দেহ নেই। তবে সব সময়েই যদি ইনহেলারের প্রয়োগ হতে থাকে তা হলে ফুসফুসের অবস্থা বেহাল হয়ে যাবে অচিরেই। হাঁপানি তো সারবেই না, উল্টে কার্বন-ডাই অক্সাইড ঢুকবে ফুসফুসে।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, ইনহেলার থেকে যে পরিমাণ কার্বন ও গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্মগন হয়, তা গাড়ি থেকে বেরনো কার্বন-দূষণের সমান। ‘জামা’ জার্নালে এই গবেষণার খবর প্রকাশিতও হয়েছে। গবেষকেরা দাবি করেছেন, ইনহেলারের উপর অধিক নির্ভরতা লাভের চেয়ে ক্ষতিই করছে বেশি। ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল অবধি করা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রতি বছর ইনহেলারের কারণে প্রায় ২০ লক্ষ মেট্রিক টন কার্বন পরিবেশে মেশে। শুধু কার্বন নয়, আরও কিছু গ্রিন হাউস গ্যাসও নির্গত হয় ইনহেলার থেকে, যা পরিবেশ দূষণের কারণ হয়ে ওঠে।
হাঁপানির জন্য সাধারণত তিন রকম ইনহেলার ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর মিটারড্ ডোজ় ইনহেলার (এমডিআই)। দেখা গিয়েছে, এই জাতীয় ইনহেলার থেকে কার্বন নিঃসরণ বেশি হয়। এগুলি পাম্প করলে হাইড্রোফ্লুরোঅ্যালকেন বার হয়, যা এক ধরনের হাইড্রোকার্বন। এগুলি পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী। তা ছাড়া হাঁপানির রোগীরা ড্রাই পাউডার ইনহেলার ও সফ্ট মিস্ট ইনহেলার ব্যবহার করেন, যা তুলনায় কম ক্ষতিকারক হলেও কার্বন নিঃসরণ ঘটায়।
আরও পড়ুন:
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক উইলিয়াম ফেল্ডম্যান জানিয়েছেন, যখন তখন ইনহেলারের ব্যবহার বিপজ্জনক হতে পারে। কী ধরনের ইনহেলার ব্যবহার করছেন, তার ব্র্যান্ড কী, কার্যকারিতা কী, কখন ও কী ভাবে ব্যবহার করতে হবে, তা জেনে রাখা জরুরি। দোকান থেকে যে কোনও ইনহেলার কিনে ব্যবহার করতে শুরু করলে রোগ নিরাময়ের বদলে তা আরও মারাত্মক আকার নেবে। তাই ইনহেলারের ব্যবহার কমিয়ে প্রাকৃতিক উপায়েই হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা উচিত বলেই মনে করছেন গবেষকেরা।
ইনহেলারের বিকল্প কী?
ইনহেলারের বদলে শ্বাসের ব্যায়ামে ভরসা রাখতে পারেন। পাশাপাশি, খাওয়াদাওয়ায় নজর দিতে হবে।
১) প্রত্যেক দিন অল্প সময় বার করে ব্রিদিং এক্সারসাইজ় করা জরুরি। এই ধরনের ব্যায়াম নিয়মিত অভ্যাস করলে ফুসফুসে বাতাস প্রবেশ এবং নির্গমনের পরিমাণ বাড়ে। ফলে ফুসফুসের শক্তিও বাড়ে।
২) ম্যাটে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। এ বার হাতের তালু মেঝের উপর ভর দিয়ে পাঁজরের দুই পাশে রাখুন। এর পর কোমর থেকে পা পর্যন্ত মাটিতে রেখে হাতের তালুর উপর ভর দিয়ে বাকি শরীরটা ধীরে ধীরে উপরের দিতে তুলুন। এর পর মাথা বেঁকিয়ে উপরের দিকে তাকান। এই ভঙ্গিতে ২০-৩০ সেকেন্ড থাকার পর পূর্বের অবস্থায় ফিরে যান। প্রথম দিকে এই আসন তিন বার করুন। একে বলা হয় ভুজঙ্গাসন। নিয়মিত করলে উপকার পাবেন।
৩) তুলসিপাতার রস সিওপিডির রোগীদের জন্য খুবই ভাল। প্রতি দিন অল্প করে তুলসির রস খেলে সর্দি-কাশি, কফ জমতে পারবে না। তুলসিপাতা ফুটিয়ে চা করেও খেতে পারেন। আমলকি খাওয়া খুবই ভাল। আমলকির রসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। আমলকি খেলে ফুসফুস থেকে দূষিত পদার্থ বা টক্সিন বেরিয়ে যায়।
৪) হাঁপানির রোগীদের জন্য প্রাণায়াম খুব উপকারী। কপালভাতি রোজ অভ্যাস করতে পারেন। আরামদায়ক কোনও একটি আসনের ভঙ্গিতে বসুন, তা পদ্মাসন, বজ্রাসন বা সুখাসনও হতে পারে। স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে শ্বাস নিন। শ্বাস ছাড়ার সময় পেটের পেশির উপর চাপ দিতে হবে। দ্রুত শ্বাস নিতে ও ছাড়তে হয়। সবে সবে শুরু করলে প্রতি দশ বারে একটি সেট করুন।