রক্তচাপ কেন বাড়ছে, তা নিয়ে মনের উপরেও চাপ বাড়ছে দিন দিন। ঘরে ঘরে উচ্চ রক্তচাপের রোগী। বয়স চল্লিশ পেরোলে আর কথাই নেই, রক্তচাপ যেন বশেই থাকছে না। দুশ্চিন্তা, কর্মক্ষেত্রের অতিরিক্ত চাপ, রোজের টানাপড়েনে রক্তচাপ যখন-তখন বেড়ে যেতে পারে। আর তা বিপদসীমা ছাড়িয়ে গেলেই হৃদ্রোগ বা স্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়তে পারে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওষুধ খেতেই হয়, পাশাপাশি, রোজের জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসেও নজর দিতে বলেন চিকিৎসকেরা। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার কী কী সহজ উপায় রয়েছে, তা নিয়ে সম্প্রতি একটি নির্দেশিকা জারি করেছে ‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’ এবং ‘আমেরিকান কলেজ অফ কার্ডিয়োলজি’।
আশি-নব্বই শতাংশ ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ ‘এসেনশিয়াল হাইপারটেনশন’। অর্থাৎ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যা বাড়তে থাকে। প্রাকৃতিক নিয়মেই নির্দিষ্ট বয়সের পরে রক্তচাপ একটু বেশির দিকে থাকে। তবে সেটা নিয়ন্ত্রণসীমা পার করলেই সমস্যা। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী, যে কোনও সুস্থ ব্যক্তির স্বাভাবিক রক্তচাপ হওয়া উচিত ১৩০/৮০। বয়স-লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের জন্যই এটা প্রযোজ্য। সেই মাপ ১৩০-এর বদলে ১৪০ হলেও ঘাবড়ানোর কিছু নেই। কিন্তু তার বেশি হলে চিন্তার বিষয়।
উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে চিন্তা বাড়ে দু’টি পরিস্থিতিতে। তথ্য বলছে, যখন দু’তিন রকম ওষুধ দেওয়ার পরেও রোগীর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসে না, সেই অবস্থাকে বলা হয় রেজ়িস্ট্যান্ট হাইপারটেনশন। আর চিন্তা বা মানসিক চাপ থেকে আচমকাই যদি রক্তচাপের হেরফের হয় তখন তাকে বলে ‘হোয়াইট কোট হাইপারটেনশন’। থাইরয়েড, কোলেস্টেরল বা কিডনির সমস্যায় রক্তচাপ বাড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে কারণ জেনে চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন:
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার নতুন নির্দেশিকা
‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর তথ্য অনুযায়ী, রক্তচাপ কত বেশি ও কী কারণে বেড়েছে তা সঠিক ভাবে নির্ধারণ করে তবেই ওষুধ খেতে হবে। যখন তখন খেয়ালখুশি মতো মুঠো মুঠো প্রেসারের ওষুধ খেলে হিতে বিপরীত হবে।
নুন খাওয়া বন্ধ করা ঠিক নয়, তবে পরিমাণ কমাতে হবে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দিনে ২.৩ গ্রাম সোডিয়াম খাওয়া উচিত। কিন্তু দেশের জলবায়ু বা খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে তাল রেখে মেপে মেপে ওই পরিমাণ সোডিয়াম গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। তাই সে ক্ষেত্রে সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার কম খেলেই হবে। নুনের পরিবর্তে গোলমরিচ, অন্য মশলা সহযোগে খাবার খেতে পারেন।
ডায়েট থেকে ফ্যাটও একেবারে বাদ নয়। কারণ, ভিটামিন এ, কে ও ডি-র আত্তীকরণের জন্য শরীরে ফ্যাট থাকা জরুরি। তবে প্রক্রিয়াজাত খাবার, ভাজাভুজি থেকে যেন ট্রান্স ফ্যাট শরীরে না ঢোকে, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ডায়েটে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ ফলমূল বেশি রাখতে হবে। অ্যালকোহল, কফি ও ধূমপানের মাত্রা কমাতে হবে।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে না রাখলে রক্তচাপ বশে রাখা সম্ভব নয়। তাই নিয়মিত মেডিটেশন, প্রাণায়াম করা জরুরি।