হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর খবর প্রায় নৈমিত্তিক। ইদানীং কালে কমবয়সিদের মধ্যে হার্টের অসুখ বেড়ে গিয়েছে। জিম করতে গিয়ে, হাঁটাচলার সময়, রান্না করার সময়, এমনকি নাচতে গিয়েও হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসছে। হার্টের রোগের কারণ অনেক। কমবয়সিদের মধ্যে তা কেন এত বেশি হচ্ছে, সে নিয়েও নানা মত রয়েছে চিকিৎসকদের। কিন্তু আসল কথা হল, হার্টে কী গোলমাল হচ্ছে তা ধরা না পড়ার কারণেই, রোগ এত বেড়ে চলেছে। আর রোগ ধরতে গেলে তার পরীক্ষা করানো জরুরি। যিনি দিব্যি সুস্থ-সবল রয়েছেন, তিনি হঠাৎ করে পরীক্ষা করাতে যাবেনই বা কেন! আর এ দেশের বেশির ভাগ মানুষজনই রোগের লক্ষণ ধরা না পড়া অবধি চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা ভাবেনই না। তা হলে উপায়?
হার্টের রোগ তলে তলে মাথাচাড়া দিচ্ছে কি না, তা নির্ণয় করার অনেকগুলি পরীক্ষা আছে। কিন্তু সেই সব পরীক্ষা যেমন অ্যাঞ্জিয়োগ্রাম, ইলেকট্রোকার্ডিয়োগ্রাম, ইকোকার্ডিয়োগ্রাম, স্ট্রেস টেস্ট, কার্ডিয়াক এমআরআই-এর নাম শুনলেই আতঙ্কে ভোগেন অনেকে। তাই এই সবের চেয়ে আরেকটু সহজ আর একটি কার্ডিয়ো টেস্ট আছে, যার নাম তেমন ভাবে চেনা নয়। সেই পরীক্ষাটি হল ‘সিটি ক্যালশিয়াম স্কোর’ টেস্ট। হার্টে ব্লকেজ হচ্ছে কি না, তা আগাম ধরতে এই পরীক্ষাটি করানো যেতে পারে। বিশেষ করে কমবয়সিদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে এই মেডিক্যাল পরীক্ষাটি।
সিটি ক্যালশিয়াম স্কোর টেস্ট কী?
করোনারি ক্যালশিয়াম স্ক্যানকেই সিটি ক্যালশিয়াম স্কোর টেস্ট বলেন চিকিৎসকেরা। হার্টের ধমনীতে ক্যালশিয়াম জমে ‘প্লাক’ তৈরি হচ্ছে কি না, তা ধরা যায় এই পরীক্ষাটি করালে। হার্টের মাঝে করোনারি আর্টারি নামে দু’টি ছোট ছোট ধমনী থাকে। এরাই হৃদ্যন্ত্রকে সচল রাখতে সাহায্য করে। কোনও কারণে এই করোনারি আর্টারি যদি ব্লক হয়ে যায়, তা হলে যে এলাকায় ওই আর্টারি বা ধমনী রক্তের মাধ্যমে পুষ্টি পৌঁছে দেয়, সেই জায়গার হৃদ্পেশি কাজ করে না। তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়। করোনারি আর্টারি ব্লক হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল ‘ক্যালশিয়াম ডিপোজ়িট’। ধমনীর দেওয়ালে ক্যালশিয়ামের স্তর জমতে থাকলে তখন রক্তচলাচল বাধা পায়। ধমনী সরু ও সঙ্কুচিত হতে থাকে, ফলে হৃদ্স্পন্দনও অনিয়মিত হয়ে যায়।
এই পরীক্ষাটি করলে ধমনীতে ক্যালশিয়াম জমছে কি না, তা বোঝা যায়। সিটি স্ক্যানারে ধমনীর ভিতরে ‘প্লাক’ রয়েছে কি না, তা দেখেন চিকিৎসকেরা। যদি ক্যালশিয়ামের স্তর জমতে শুরু করে, তা হলে তার পরিমাণ কত, সেই ডেটাও পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন:
ডেটা দেখে কী ভাবে বুঝবেন?
স্কোর ০: কোনও সমস্যা নেইস্কোর ১-১০০: সামান্য ঝুঁকি আছে
১০০-৩০০: ক্যালশিয়াম জমা শুরু হয়েছে
৩০০ এর বেশি: ঝুঁকি খুব বেশি
এই বিষয়ে হার্টের চিকিৎসক রাজা নাগ বললেন, “০ থেকে ১০০০ অবধি স্কোর রয়েছে। স্কোর যত বাড়বে, ততই ঝুঁকি বেশি। তবে সিটি ক্যালশিয়াম স্কোর টেস্ট সকলের জন্যই সঠিক হবে কি না, তা বলা যায় না। রোগীর শারীরিক অবস্থা দেখে চিকিৎসকই তা করাতে বলবেন।”
সকলের জন্যই কি পরীক্ষাটি প্রযোজ্য?
১) পরিবারে হার্টের রোগের ইতিহাস থাকলে পরীক্ষাটি করিয়ে রাখা ভাল।
২) বুকে ব্যথা, শ্বাসের সমস্যা, মাঝে মাঝেই অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দিলে পরীক্ষাটি করিয়ে নিতে পারেন।
৩) স্থূলত্ব, ডায়াবিটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল, হাইপারটেনশনের রোগীদের এই পরীক্ষাটি করিয়ে রাখলে ভাল হয়।
৪) অত্যধিক মাত্রায় ধূমপান করলে পরীক্ষাটি করিয়ে রাখলে ভাল।
সিটি ক্যালশিয়াম স্কোর টেস্টের খরচ ১৮৫০ টাকা থেকে শুরু কলকাতায়। তবে কোন ক্লিনিকে টেস্ট হচ্ছে, তার উপর খরচ নির্ভর করবে। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, হার্টের রোগ ধরতে কী কী টেস্ট করাতে হবে তা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই করা উচিত।