পুজোর সময়ে হাতের কাছে ডাক্তার-বদ্যি কমই পাবেন। অনেক চিকিৎসক ছুটিতে থাকেন। হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলিতে ঠাঁই না-ও পেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপৎকালীন অবস্থার জন্য ব্যবস্থা নিজেকেই করে রাখতে হবে। ওই সময়ে বাড়িতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে বা আহত হলে যাতে প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু করে নিতে পারেন, তার জন্য সবরকম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে আগে থেকেই। আপৎকালীন অবস্থার জন্য জরুরি পরিষেবার কোন কোন দিকে খেয়াল রাখবেন, তা জেনে রাখা জরুরি।
বাড়িতে হঠাৎ কোনও প্রিয়জন অসুস্থ হতে পারেন। রাতের দিকে তা হলে আরও অসুবিধা। বা রাস্তাঘাটে দুর্ঘটনায় কেউ চোট পেতে পারেন। সেই সময়ের মতো রোগীকে স্থিতিশীল করা খুব জরুরি। তার জন্য প্রাথমিক কিছু নিয়মকানুন জেনে রাখা দরকার।
পরিবহনের ব্যবস্থা
স্থানীয় হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা (যেমন ১০২, ১০৮) এবং আপনার পরিচিত চিকিৎসকের ফোন নম্বর হাতের কাছেই রাখুন। হঠাৎ করে হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হলে যদি সেই সময়ে অ্যাম্বুল্যান্স না পান, তা হলে গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে। বাড়িতে রোগী থাকলে আপৎকালীন অবস্থার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা আগে থেকেই করে রাখুন। স্থানীয় হাসপাতালগুলিতে জরুরি বিভাগের নম্বর এবং কোন বিভাগে কোন চিকিৎসক পুজোর সময়ে থাকতে পারেন, তার খোঁজ আগে থেকে নিয়ে রাখুন।
কেটে বা ছড়ে গেলে
ছোটখাটো কাটায় সমস্যা নেই কিন্তু যে কাটায় রক্তপাত বেশি বিপদ সেখানেই। তখন প্রথমেই দরকার রক্ত বন্ধ করা। চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মতে, ঘরের কাজ বিশেষ করে তরকারি কাটতে গিয়ে কেটে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। সে ক্ষেত্রে প্রথমেই সেই ক্ষতস্থান পরিষ্কার করতে হবে এবং ব্যান্ডেজ দিয়ে কিম্বা গজ বা কাপড় দিয়ে সেই ক্ষতস্থান বাঁধতে হবে। হাতে কেটে গেলে হাত কিছু ক্ষণ উঁচু করে ধরুন। এতে রক্তক্ষরণ কিছু ক্ষণের মধ্যেই বন্ধ হয়ে আসবে। তার পর অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে ওই স্থান পরিষ্কার করে অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম লাগিয়ে ড্রেসিং করুন।
আরও পড়ুন:
পোড়ার ক্ষতর প্রাথমিক চিকিৎসা
গ্যাস, স্টোভ, গরম জল, গরম পাত্র প্রভৃতি থেকে শরীরে ছ্যাঁকা লাগতে পারে বা শরীর ঝলসে যেতে পারে। জ্বালাভাব বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত পোড়া জায়গায় ঠান্ডা জল দিতে হবে অথবা ঠান্ডা জলে চুবিয়ে রাখতে হবে। শরীরে বা পোশাকে আগুন লেগে গেলে কম্বল জাতীয় কিছু দিয়ে আগে আগুন নেভাতে হবে। ক্ষতস্থানে লোশন, মলম লাগাবেন না ভুলেও। রোগীকে যত দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যাবে ক্ষতি তত কম হবে।
জ্বর, বমি, ডায়েরিয়া
এখন খুব ভাইরাল জ্বর হচ্ছে। বাড়ির ছোটদের বা বয়স্কদের জ্বর হলে ও সেই সঙ্গে বমি, ডায়েরিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে প্রাথমিক চিকিৎসা করে নিন। পরে সমস্যা বাড়লে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। শিশুর জ্বর হলে যদি খিঁচুনি না থাকে তাহলে তার শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। থার্মোমিটার না থাকলে, তা কিনে নিন এর মধ্যেই। জ্বর হলে শরীরে স্পঞ্জ করা উচিত। ভেজা নরম কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে শরীর একটানা কয়েক বার আলতো করে মুছে দিলে শরীরের তাপমাত্রা কমে যাবে। জ্বরে হালকা প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া ঠিক হবে না।
জ্বর হলে প্রচুর পরিমাণে জল ও তরল খাবার খেতে হবে। স্বাস্থ্যকর, খোলামেলা, শুষ্ক পরিবেশে আলোবাতাস বেশি আসে এমন ঘরে রোগীকে রাখতে হবে।
অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে সাবধান
পরিবারে কারও যদি অ্যালার্জির সমস্যা থাকে, তা হলে সাবধান হতে হবে। বিশেষ করে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস থাকলে যখন তখন তা বেড়ে যেতে পারে। তাই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে ঘরে ওষুধ মজুত করে রাখুন। ইনহেলার রাখতে ভুলবেন না।
আরও পড়ুন:
হাড় ভাঙলে
বাড়িতে বা রাস্তায় পড়ে গিয়ে বা আঘাত লেগে হাত- পা ভাঙার ঘটনা ঘটে। তখন চেষ্টা করতে হবে রোগীর ভাঙা অংশটিকে নাড়াচাড়া না-করে যতটা সম্ভব স্থির রাখা। অনেকে অযথা হাত দিয়ে মুচকে হাড়জোড়ার চেষ্টা করেন। এটা মারাত্মক। ওই অংশে কোনও ব্যথার মলম ঘষে লাগানো যাবে না। রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
আচমকা শ্বাসকষ্ট হলে
ধুলোধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট হলে ভেজা তোয়ালে, রুমাল বা কাপড়ের টুকরো দিয়ে রোগীর মুখ ও নাক বেঁধে দিতে হবে। শ্বাসকষ্ট বিভিন্ন কারণে হতে পারে তাই রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত। হাঁপানি বা সিওপিডি থাকলে সেই মতো ওষুধ ও ইনহেলার আগে থেকে রেখে দিতে হবে হাতের কাছে। পালস অক্সিমিটার ঘরে রেখে দিতে পারেন। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা অনেকটা কমে গেলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
নাক দিয়ে রক্তপাত
প্রথমেই নাকের ভিতরকে আর্দ্র করে তোলার চেষ্টা করুন। এমন বিপদে নাকে ঠান্ডা জল টানুন প্রথমেই। এতে অনেক সময়ই রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে বিপদ কেটে যায়। কেন রক্ত বেরচ্ছে তা দেখতে গিয়ে অহেতুক নাকে হাত দেবেন না বা কিছু দিয়ে খোঁচাবেন না। বাড়িতে রক্তচাপ মাপার যন্ত্র থাকলে তাতে রক্তচাপের মাত্রা দেখে নিন। রক্তচাপ উপরের দিকে দেখতে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কোনও ওষুধ নিজে নিজে খেতে যাবেন না। রক্তপাতের সময় জলই সেরা নিরাময়ের উপায়। এর বাইরে কোনও মলম বা ক্রিম নাকের মধ্যে দেবেন না।
শিশুর নাক দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকলে আরও বেশি সাবধান হতে হবে। যে নাসারন্ধ্র থেকে রক্ত পড়ছে, সেটিকে পরিষ্কার রুমাল বা টিস্যু দিয়ে বেশ কিছু ক্ষণ, অন্তত মিনিট পনেরো চেপে ধরে থাকুন। শিশুকে বলুন অন্য নাসারন্ধ্র বা মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে। ওই অবস্থায় শিশুর মাথা যেন পিছনে হেলে না থাকে অথবা শিশুকে শোয়ানো যাবে না। ওই অবস্থায় শিশুর মাথা যেন পিছনে হেলে না থাকে অথবা শিশুকে শোয়ানো যাবে না। স্যালাইন ড্রপ বারে বারে অন্তত দিনে ৫ থেকে ৬ বার দিতে হবে।
হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে
ডায়াবিটিসের রোগীদের এমন সমস্যা হতে পারে। রক্তে শর্করার মাত্রা আচমকা কমে গেলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। নিয়মিত এবং নিয়ম মতো ওষুধ না খাওয়া বা ইনসুলিনের ডোজ বেশি হলেও এমন সমস্যা হতে পারে। হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে বুক ধড়ফড় করবে, প্রচণ্ড ঘাম হবে, রোগী দুর্বল হয়ে পড়বেন। সে ক্ষেত্রে আতঙ্কে না ভুগে চিনির জল বা গ্লুকোজের জল খাইয়ে দিতে হবে খুব দ্রুত। এর পরেও পরিস্থিতি আয়ত্তে না এলে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।