অল্পেই ক্লান্তি, আচমকাই বাড়ছে ওজন। অকালে ঝরছে চুল, শুকনো খসখসে ত্বক। সেই সঙ্গে বুক ধড়ফড়, অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যাচ্ছে হৃৎস্পন্দন। ছোটখাটো শারীরিক সমস্যাগুলি আমরা প্রায়ই এড়িয়ে যাই। অথচ প্রতিটা লক্ষণের পিছনে লুকিয়ে থাকতে পারে থাইরয়েডজনিত সমস্যা। সময় থাকতে থাইরয়েডের চিকিৎসা না করালে বাড়াবাড়ি হতে পারে। তাই লক্ষণ চিনে নিয়ে আগে থেকেই জীবনযাপনে বদল আনতে হবে।
থাইরয়েড একটি গ্রন্থি, যা আমাদের গলায় শ্বাসনালির সামনের দিকে থাকে। এই গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন শরীরের বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন, বিপাকক্রিয়া, শিশুদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা, বুদ্ধির বিকাশ, বয়ঃসন্ধির লক্ষণ, মহিলাদের ক্ষেত্রে ঋতুচক্র, সন্তানধারণ—এগুলি নির্ভর করে থাইরয়েড গ্রন্থির থেকে নিঃসৃত হরমোনের উপরে। থাইরয়েড হরমোন দু’প্রকার টি-৩ ও টি-৪। আমাদের শরীরের রক্তে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় এই হরমোন থাকে। কোনও কারণে এই হরমোনগুলি বেড়ে গেলে বা কমে গেলে তখন বলা হয় থাইরয়েড হয়েছে। রক্তে থাইরয়েড নিঃসৃত হরমোনের পরিমাণ যদি বেড়ে যায়, তখন তাকে বলে ‘হাইপারথাইরয়েডিজ়ম’ এবং হরমোনের পরিমাণ কমে গেলে বলা হয় ‘হাইপোথাইরয়েডিজ়ম’। সম্প্রতি যোগ প্রশিক্ষক হানসা যোগেন্দ্র জানিয়েছেন কী ভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে হাইপোথাইরয়েডিজ়ম’-এর সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
১) ‘হাইপোথাইরয়েডিজ়ম’-এর ক্ষেত্রে ডায়েট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাওয়াদাওয়ায় বিশেষ নজর দিতে হবে। সুষম খাবার খেতে হবে। সবুজ সব্জি, শাকপাতা, দানাশস্য যেমন, ঢেঁকি ছাঁটা চাল, ডালিয়া, ওট্স খেতে পারেন। রোজের খাবারের সঙ্গে পরিমিত মাত্রায় সূর্যমুখীর বীজ বা তিল রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক। এগুলি সিলেনিয়ামের ভাল উৎস। সিলেনিয়াম টি-৩ ও টি-৪ হরমোন উৎপাদনে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন:
২) চিনি আর প্রক্রিয়াজাত খাবার শরীরে প্রদাহ তৈরি করে। শরীরে প্রদাহ বাড়লে টি-৩ ও টি-৪ হরমোনের কার্যকারিতা কমতে শুরু করে। ‘হাইপোথাইরয়েডিজ়ম’-এর সমস্যা প্রাকৃতিক উপায় নিয়ন্ত্রণে রাখতে সবার আগে ডায়েট থেকে চিনি আর প্রক্রিয়াজাত খাবার বাতিল করুন। এর পাশাপাশি, ডায়েট থেকে গ্লুটেন বাদ দিতে পারলে আরও ভাল হয়। গ্লুটেন আসলে এক ধরনের প্রোটিন। গম, রাই, বার্লি-সহ বিভিন্ন খাবারে এই প্রোটিন থাকে। কোনও খাবার বেক করার সময়ে ফেঁপে উঠতে সাহায্য করে এই গ্লুটেন। রুটি, পাউরুটি, পাস্তা, কেক, চিপ্স, সস, বিয়ার— এই সব খাবারে সাধারণত প্রচুর পরিমাণে গ্লুটেন থাকে।
৩) নিয়মিত ব্যায়াম করা ভীষণ জরুরি। স্ট্রেচিংয়ের পাশাপাশি যোগাসন করলেও শরীরে হরমোনের ভারসাম্য ঠিক থাকে। ‘হাইপোথাইরয়েডিজ়ম’-এর ক্ষেত্রে সর্বাঙ্গাসন, হলাসন আর ভুজাঙ্গাসন খুব ভাল কাজ দেয়। এই সব আসন থাইরয়েড গ্রন্থিতে রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, সেখানে পর্যাপ্ত মাত্রায় অক্সিজ়েন আর উপকারী পুষ্টিগুণ পৌঁছায়। ফলে থাইরয়েড গ্রন্থি ভাল কাজ করে। এ ছাড়া উজ্জয়িনী প্রাণায়াম করলেও থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা বাড়ে।