রক্তে শর্করার মাত্রা এক বার বেড়ে গেলে তা সহজে নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না। অনেক নিয়ম মেনে চলতে হয়। খাওয়াদাওয়ায় চলে আসে নানা রকম বিধিনিষেধ। মিষ্টি তো জীবন থেকে বাদ যায় বটেই, আরও অনেক খাবারের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। নিয়মমাফিক রুটিন মেনে চলার পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধও খেতে হয়। অথচ এত কিছু করা সত্ত্বেও ডায়াবিটিস বশে থাকে না কিছুতেই। ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে নিয়ম করে রক্তের শর্করার মাত্রা পরিমাপ করা ভীষণ জরুরি। রক্তে শর্করা বাড়ছে কি না, তা জানার এখন অনেক পদ্ধতি আছে। বাড়িতেও তা মাপা যায়। ডায়াবিটিসের রোগীদের যদি রক্তে শর্করার মাত্রা ওঠানামা করতে শুরু করে, তা হলে দিনে একাধিক বার তা মাপার দরকার হতে পারে। না হলে, নির্দিষ্ট সময়ে ‘সুগার লেভেল’ মাপলেই চলে।
তবে বাড়িতে সুগার মাপার আগে জানতে হবে কখন এই পরিমাপ করা ভাল, কোন কোন ভুল এড়িয়ে চললে মাপ একেবারে সঠিক আসবে।
চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, ডায়াবিটিসের রোগীদের ক্ষেত্রে দিনের মধ্যে অন্তত ৬ বার রক্তে শর্করার পরিমাণ পরীক্ষা করা উচিত। তবে সবার ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা জরুরি নয়। যাঁদের রক্তে শর্করার মাত্রা আচমকা কমে যায়, অর্থাৎ হাইপোগ্লাইসেমিয়া আছে, অথবা যাঁদের খুব কড়া ডোজ়ে ইনসুলিন নিতে হয়, তাঁদের এই নিয়ম মেনে চলা উচিত। তা হলে ওষুধ বা ইনসুলিনের ডোজ় ঠিক করতে সুবিধা হবে চিকিৎসকেদের।
কখন সুগার মাপবেন?
১) সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। রাতের খাওয়ার সঙ্গে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার ব্যবধান যেন থাকে, সেই বিষয় নজর রাখা জরুরি।
২) এর পর প্রাতরাশ সারার ২ ঘণ্টা পরে ফের মাপতে হবে।
৩) দুপুরে খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে এক বার মেপে নেওয়া জরুরি।
৪) দুপুরের খাওয়ার ২ ঘণ্টা পরে মাপতে হবে।
৫) রাতে খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে মাপুন।
৬) রাতে খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর আরও এক বার।
সারা দিনে কত বার মাপছেন, শর্করার মাত্রা কত থাকছে তার হিসেব একটি খাতায় লিখে রাখুন। কয়েক দিন এই নিয়মে মাপার পর যদি দেখা যায়, রক্তে শর্করার মাত্রা অনেক বেশি ওঠানামা করছে তা হলে সেই ‘রিডিং’ নিয়ে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। অবশ্য দিনে ৬ বার শর্করার মাত্রা পরিমাপ করার এই নিয়ম সকলের জন্য নয়। যাঁদের রক্তে শর্করার মাত্রা মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে,তাঁদের ১৫ দিন অন্তর অথবা মাসে এক বার সকালে খালি পেটে আর দুপুরে খাওয়ার ঘণ্টাদুয়েক পর সুগারের মাত্রা মাপলেই হবে।
পরীক্ষার আগে দেখে নিন, যে স্ট্রিপগুলি ব্যবহার করছেন তার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে কি না। ছবি: সংগৃহীত।
বাড়িতে সুগার মাপার সময় কোন ভুলগুলি এড়িয়ে চলবেন?
১) রক্ত পরীক্ষার আগে হাত ভাল করে সাবান দিয়ে ধুতে হবে। আঙুল থেকে রক্ত নেওয়া হচ্ছে সেটিও স্পিরিট দিয়ে মুছে নেওয়া প্রয়োজন। অথচ এই ধাপটি অনেকেই বাদ দেন। চিকিৎসক সতর্ক করছেন, হাত না ধুয়ে রক্ত পরীক্ষা করলে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।
২) ঠিক মতো আর পরিমাণ মতো রক্ত বার না করলে পরীক্ষার ফল ভুল আসবে। সুচ ফুটিয়ে রক্ত পরীক্ষা করলে যথেষ্ট ব্যথা হয়। অনেকেই আঙুলের একেবারে ডগায় সুচ ফুটিয়ে রক্ত পরীক্ষা করেন। সে ক্ষেত্রে ব্যথা আরও বেশি হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, আঙুলের এক পাশে পরীক্ষা করলে ব্যথা খানিকটা হলেও কম হয়। প্রতি দিন একই আঙুলে পরীক্ষা না করে বিভিন্ন আঙুলে পরীক্ষা করুন।
৩) পরীক্ষার আগে দেখে নিন, যে স্ট্রিপগুলি ব্যবহার করছেন তার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে কি না। স্ট্রিপগুলি রাখার সময় খুব সাবধানতা মেনে চলা জরুরি। খুব বেশি বাতাসের সংস্পর্শে রাখলেই কিন্তু সেগুলি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
৪) অনেক রোগী একই সুচ ৫-৬ বার ব্যবহার করেন। এটি সংক্রমণের সম্ভাবনা বহু গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
৫) যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণের প্রতি যত্নশীল হওয়াও দরকার। ভাল মানের যন্ত্র কেনা, নির্দিষ্ট সময় পর পর তার পরিমাপের নির্ভুলতা পরীক্ষা করা, ব্যাটারির দিকে খেয়াল রাখা, প্রতি বার ব্যবহারের আগে যন্ত্রটি ‘রিসেট’ করার বিষয়ে নজর দিতে হবে। খুব বেশি ঠান্ডা জায়গায় যন্ত্রটি রাখবেন না। সূর্যের তাপ যেন যন্ত্রের উপর না পড়ে, সে দিকেও নজর রাখবেন।