স্বাস্থ্যসচেতন হওয়া মানেই কি ‘চলো নিয়মমতে’? অবশ্যই নিয়মশৃঙ্খলা প্রয়োজন, তা বলে বিচ্যুতি কি ঘটতে নেই? কৃচ্ছ্বসাধন করতে করতে এক সময়ে মনমেজাজের উপর প্রভাব পড়তে পারে। আর তখন কারও কারও খাবারের প্রতি অনীহা তৈরি হয়। কেউ বা ডায়েটের পথ থেকেই সরে দাঁড়ান। মন এবং ইচ্ছাকেও যে গুরুত্ব দেওয়া দরকার, তা সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক পুষ্টিবিদই স্বীকার করেন।
ধরা যাক, আপনি ডায়েটে আছেন। আপনার সামনে এমন এক খাবার দেওয়া হয়েছে, যা আপনার বড়ই পছন্দের। আপনি খেলেন না। সরিয়ে রাখলেন। এ দিকে মন ভার হয়ে গেল। সারা দিন সেই খাবারটির দিকে মন পড়ে রইল। তাতে খাবারের ইচ্ছা আরও কয়েক গুণ বেড়ে গেল। আর ডায়েটের পরোয়া না করে খেয়েই ফেললেন। আপনি ভাবলেন, এক দিনে কী এমন ক্ষতি হবে! এমন ভাবেই একাধিক দিন ডায়েটের দফারফা হয়ে যায়। দু’টি পরিস্থিতির কোনওটিই কিন্তু উপকারী নয়। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন নতুন কোনও কার্যকর কৌশল।
এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে মুম্বইয়ের পুষ্টিবিদ খ্যাতি রূপানী শেখালেন ‘৩ বাইট রুল’, অর্থাৎ ‘তিনটি কামড়ের নিয়ম’। খাওয়ার ইচ্ছে পূরণ করার পাশাপাশি ডায়েট অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য এই নিয়ম বেশ কার্যকরী।
স্বাস্থ্যকর নিয়মে খাবার খাওয়ার কৌশল। ছবি: সংগৃহীত।
‘৩ বাইট রুল’ বা ‘তিনটি কামড়ের নিয়ম’ কী?
এই নিয়ম অনুযায়ী, পছন্দের খাবার পুরোটা না খেয়ে তিনটি মাত্র ছোট কামড় দিতে হবে। পুষ্টিবিদের মতে, প্রথম কামড়ে স্বাদ বোঝা যায়, দ্বিতীয় কামড়ে রস আস্বাদন হয়, তৃতীয়তে মন তৃপ্ত হয়। এর পর লোভ সংবরণ করা সহজ হয়ে পড়ে। বেশি খাওয়ারও দরকার পড়ে না। তিনটি ছোট কামড়েই শখ মিটবে, কিন্তু ক্যালোরিও বাড়বে না। তিনটি কামড় নিতে হবে ধীরে ধীরে। যাতে প্রতিটি গ্রাসে তৃপ্তির অনুভূতি ভাল মতো ধরা পড়ে।
যদি চামচ দিয়ে খেতে হয়, তা হলে মাথায় রাখতে হবে, টেবিল চামচের বদলে নিতে হবে চা চামচ, যাতে প্রতিটি গ্রাস ছোট হয়। তিন নম্বর চামচের পর মস্তিষ্কে বার্তা পৌঁছোয়, মন তৃপ্ত হয়েছে, আর খাওয়ার দরকার নেই।
এর ফলে সচেতন ভাবে খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়, যাকে বলা হয় ‘ইনটুইটিভ ইটিং’। প্রিয় মিষ্টি বা স্ন্যাকস এড়িয়ে না গিয়েও রস আস্বাদন করা যায়। ‘ইনটুইটিভ ইটিং’য়ের মূলমন্ত্রই হল, শরীর ও মন বুঝে পদক্ষেপ করা। এক একটি গ্রাসের পর শরীরের কী দাবি, সেটি বুঝে তার পর পরের গ্রাস নেওয়া। ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়, হজমের ক্ষমতাও বাড়ে।