পাঁঠার মাংস, মুরগির মাংস, মাছ— বাঙালির রসনার দুনিয়ায় তিনটিই সমান দাপুটে। কিন্তু শরীরের ভিতরে গিয়ে এক একটি এক এক ভাবে কাজ করে। কেউ শরীরে শক্তি বাড়ায়, কেউ হার্টকে সুরক্ষা দেয়, কেউ আবার পেটের স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়। কিন্তু কোনটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভাল, সেটি জেনে নেওয়া প্রয়োজন। এই তিন প্রতিদ্বন্দ্বীর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অবগত হয়ে নেওয়া দরকার।
মটন, চিকেন এবং মাছ— তিনটিই প্রোটিনের উৎস। কিন্তু ক্যালোরি ও ফ্যাটের গঠন ভিন্ন। কোনটিতে কতখানি ক্যালোরি, কতটা ফ্যাট এবং প্রোটিন, কোনটি খেলে হজম ভাল হয়, এই সমস্ত বিষয়ের নিরিখে তুলনামূলক আলোচনা করলেই বোঝা যাবে, আপনার জন্য কোনটি উপযুক্ত এবং কোনটি কতখানি খাওয়া উচিত।
কোনটিতে ক্যালোরি কতখানি?
মাছ: রুই, কাতলা, তেলাপিয়া, বাসার মতো ফ্যাটহীন মাছ যদি ১০০ গ্রাম নেওয়া হয়, তা হলে তাতে ৯০-১৩০ ক্যালোরি থাকে। স্যামন, ইলিশ, ম্যাকারেলের মতো ফ্যাটযুক্ত মাছে থাকে ১৮০-২১০ ক্যালোরি। এই ধরনের মাছে যে ফ্যাট পাওয়া যায়, তা হার্টের জন্য ভাল।
চিকেন: ১০০ গ্রাম মুরগির ব্রেস্টে ১৫০ ক্যালোরি থাকে। চিকেনের পায়ের অংশে ক্যালোরি তুলনামূলক ভাবে একটু বেশি, ১৭০-২০০ ক্যালোরি।
মটন: চিকেন এবং মাছের তুলনায় পাঁঠার মাংসে ক্যালোরি বেশি থাকে। ১০০ গ্রাম মটনে ২৩০-২৬০ ক্যালোরি থাকে। কখনও এর থেকেও বেশি হতে পারে ক্যালোরি। মাংস কী ভাবে কাটা হচ্ছে, তার উপর নির্ভর করে।
ক্যালোরি বেশি বা কমের সঙ্গে খাবারের পুষ্টিগুণকে তুলনা করা যায় না। শরীরে কতখানি শক্তি প্রয়োজন, তা বিচার করে চিকেন, মটন এবং মাছ বেছে নেওয়া উচিত। বিভিন্ন দিনে সে প্রয়োজন ভিন্ন হতে পারে।
মাছের ঝোল। ছবি: সংগৃহীত।
কোনটিতে কতখানি ফ্যাট?
মাছ: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে পরিপূর্ণ মাছ। ফলে হার্টের জন্য মাছ খুবই উপকারী। হার্টের পাশাপাশি মনমেজাজ এবং পাকস্থলীর স্বাস্থ্যকে উন্নত করতেও সাহায্য করে। প্রদাহনাশী বৈশিষ্ট্যেও সমৃদ্ধ মাছ। তা ছা়ড়া রক্তপ্রবাহ উন্নত করা, ট্রাইগ্লিসারাইড কমানোয় অবদান রয়েছে এই স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের।
চিকেন: চিকেনে মাঝারি পরিমাণে ফ্যাট রয়েছে, যা মূলত মোনোআনস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড। কিন্তু হালকা ছালসমেত চিকেন খেলে, তাতে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ অনেকখানি বেড়ে যায়। শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে, ছাল না ছাড়িয়ে চিকেন খাওয়া উচিত নয়।
মটন: স্যাচুরেটেড ফ্যাটে ভর্তি মটন। তবে তার মানেই যে এই মাংস ক্ষতিকারক, তা নয়। স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকার দরুণ পাঁঠার মাংস হজম হয় ধীর গতিতে। মটনে অনেক ক্ষণ পেট ভরা থাকে। কিন্তু যদি প্রায়শই মটন খাওয়া হয়, তা হলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তবে শরীরে প্রচুর শক্তির প্রয়োজন পড়লে বা শীতের সময়ে মটন খাওয়া ভাল।
হার্টের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রাখলে প্রথম স্থানে থাকবে মাছ, তার পর চিকেন, শেষে মটন। তবে শরীর গরম রাখার দরকার পড়লে বা পেট অনেক ক্ষণ ভরিয়ে রাখতে হলে মটনই উপযুক্ত।
মটনের ঝোল। ছবি: ফুডি টার্মিনাল।
প্রোটিন কোনটিতে বেশি?
মাছ: ১০০ গ্রাম মাছে ২০-২৫ গ্রাম প্রোটিন থাকে। চিকেন এবং মটনের তুলনায় কম হলেও পেশি মজবুত করার জন্য মাছ যথেষ্ট কার্যকরী।
চিকেন: ১০০ গ্রাম চিকেনে ২৭-৩১ গ্রাম উচ্চমানের প্রোটিন থাকে। ফ্যাটহীন এই মাংস প্রোটিনের সেরা উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়। যাঁরা জিমে গিয়ে শরীরচর্চা করেন, যাঁদের এখন উঠতি বয়স, তাঁদের জন্য চিকেন সেরা বিকল্প।
মটন: মটনে উপস্থিত প্রোটিন অত্যন্ত শক্তিশালী ও কার্যকর। কিন্তু মটনে উচ্চ পরিমাণে ফ্যাটও রয়েছে। অতিরিক্ত ফ্যাটের কিছু ক্ষতিকারক দিকও রয়েছে।
চিকেনের ঝোল। ছবি: সংগৃহীত।
আপনি যদি এমন খাবার চান, যা প্রোটিনসমৃদ্ধ এবং সহজে হজম হয়, তা হলে চিকেন সবচেয়ে সুবিধাজনক বিকল্প। কিন্তু যদি দীর্ঘমেয়াদে হার্টের সুস্বাস্থ্যের কথা ভাবতে হয়, পাশাপাশি প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ ও মস্তিষ্কের সক্রিয়তা বাড়াতে চান, মাছই সে ক্ষেত্রে সেরা। আর যদি শরীরে শক্তি ও ক্যালোরির দরকার পড়ে, বা দেহকে গরম করার প্রয়োজন হয়, তা হলে মটন খাওয়াই ভাল। তবে পাঁঠার মাংসের ক্ষেত্রে ফ্যাট এবং ক্যালোরির দিক থেকে সচেতন থাকতে হবে। তাই পরিমাপ বুঝে মাঝেমধ্যে খাওয়া উচিত।