ভাত খেয়েও ওজন কমাতে পারেন। তবে কম খেয়ে ওজন কমাতে হবে তা নয়। বরং পেট ভরে ভাত খেয়েই ওজম কমবে। এখন কথা হল, কোন ভাত খেয়ে ওজন কমবে তা জানতে হবে। ওজন দ্রুত কমানোর জন্য ভাত খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনা করা জরুরি। সব চালের পুষ্টিগুণ সমান নয়। কিছু চালে ফাইবার বেশি থাকে এবং গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) কম হয়, যা ওজন কমাতে সহায়ক।
কোন চালের ভাত খেলে ওজন কমবে?
ওজন কমাতে হলে এমন চাল বেছে নিতে হবে, যার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। কম জিআই মানে হল, সেই চালের ভাত খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ে, যার ফলে হঠাৎ করে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায় না। এতে দীর্ঘ ক্ষণ পেট ভর্তি থাকে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থের গবেষণা অনুযায়ী ব্রাউন রাইস ও কালো চালের ভাত খেলে ওজন তাড়াতাড়ি কমবে।
ব্রাউন রাইসে ভরপুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। ফাইবার হজম হতে বেশি সময় নেয়, ফলে পেট অনেক ক্ষণ ভরা থাকে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতেও সাহায্য করে। ফাইবার ছাড়াও এতে ম্যাঙ্গানিজ, সেলেনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, এবং বি ভিটামিন রয়েছে। সাদা চালের তুলনায় ব্রাউন রাইসে ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ বেশি থাকে।
আরও পড়ুন:
ব্ল্যাক রাইস বা কালো চালের ভাতও খুব পুষ্টিকর। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্থোসায়ানিন এবং ফাইবার থাকে। এটি হজম হতে সময় নেয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ায়। এই চালের ভাত খেলে ডায়াবিটিসের ঝুঁকি কমে। এতে ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আয়রন এবং প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে।
তবে শুধু ভাত খেলেই যে পুষ্টি হবে, তা নয়। ভাতের সঙ্গে পর্যাপ্ত প্রোটিন (যেমন - মাছ, মুরগি, ডাল, ডিম) এবং প্রচুর পরিমাণে শাকসব্জি খেতে হবে। যদি ব্রাউন বা কালো চাল পাওয়া কঠিন হয়, তাহলে সাদা চালের পরিবর্তে বাসমতী চালের ভাত খাওয়া যেতে পারে। এই চালের জিআই কম, তবে ব্রাউন রাইসের মতো অতটা ফাইবার সমৃদ্ধ নয়।
- পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ: ওজন কমানোর জন্য চালের ধরন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই এর পরিমাণও জরুরি। যেকোনো চালেরই অতিরিক্ত গ্রহণ ওজন বাড়াতে পারে। একবারে অল্প পরিমাণে ভাত খান।
- সুষম খাবার: শুধু ভাত নয়, ভাতের সাথে পর্যাপ্ত প্রোটিন (যেমন - মাছ, মুরগি, ডাল, ডিম) এবং প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি (ফাইবার সমৃদ্ধ) যোগ করুন। এতে পেট ভরা থাকবে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টিও পাওয়া যাবে।
- ঠান্ডা ভাত: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ভাত রান্না করার পর ঠাণ্ডা করলে তাতে রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চ (Resistant Starch) তৈরি হয়, যা হজম হতে বেশি সময় নেয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে আবার গরম করে ভাত খেলে এটি কিছুটা রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চ তৈরি করে।
- সাদা চালের বিকল্প: যদি ব্রাউন, লাল বা কালো চাল পাওয়া কঠিন হয়, তাহলে সাদা চালের পরিবর্তে বাসমতী চাল ব্যবহার করতে পারেন, কারণ এর জিআই তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম। তবে এটি ব্রাউন রাইসের মতো ফাইবার সমৃদ্ধ নয়।
ওজন কমানোর জন্য মূলত কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (Low GI) সম্পন্ন চাল বেছে নেওয়া উচিত। কম জিআই মানে হলো সেই খাবার খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ে, যার ফলে হঠাৎ করে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায় না এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে। এর ফলে অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকা যায়।
১. ব্রাউন রাইস (Brown Rice) বা বাদামি চাল: * কেন ভালো: ব্রাউন রাইস হলো অপ্রক্রিয়াজাত চাল, যার বাইরের তুষ, ভুসি এবং অঙ্কুর (bran, germ and endosperm) অক্ষত থাকে। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। ফাইবার হজম হতে বেশি সময় নেয়, ফলে পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে এবং অতিরিক্ত খাওয়া রোধ হয়। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতেও সাহায্য করে। * পুষ্টিগুণ: ফাইবার ছাড়াও এতে ম্যাঙ্গানিজ, সেলেনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, এবং বি ভিটামিন রয়েছে। * তুলনা: সাদা চালের তুলনায় ব্রাউন রাইসে ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ বেশি থাকে।
২. রেড রাইস (Red Rice) বা লাল চাল: * কেন ভালো: লাল চালও অপ্রক্রিয়াজাত চাল। এটি ব্রাউন রাইসের মতোই ফাইবার সমৃদ্ধ এবং এতে অ্যান্থোসায়ানিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা এর লাল রঙের জন্য দায়ী। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের প্রদাহ কমাতে এবং মেটাবলিজম উন্নত করতে সাহায্য করে। * পুষ্টিগুণ: ফাইবার, প্রোটিন, ম্যাঙ্গানিজ এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থ প্রচুর পরিমাণে থাকে। * তুলনা: ওজন কমানোর জন্য লাল চাল এবং ব্রাউন রাইস উভয়ই সমানভাবে উপকারী বলে মনে করেন অনেক পুষ্টিবিদ।
৩. ব্ল্যাক রাইস (Black Rice) বা কালো চাল: * কেন ভালো: ব্ল্যাক রাইসকে "নিষিদ্ধ চাল" (Forbidden Rice) নামেও ডাকা হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্থোসায়ানিন এবং ফাইবার থাকে। এটি হজম হতে সময় নেয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ায়। * পুষ্টিগুণ: ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আয়রন এবং প্রোটিনের ভালো উৎস।
৪. ওয়াইল্ড রাইস (Wild Rice): * কেন ভালো: এটি আসলে চাল নয়, এক ধরণের জলজ ঘাসের বীজ। এতে ফাইবার এবং প্রোটিন প্রচুর পরিমাণে থাকে। এটি লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স সম্পন্ন এবং ওজন কমাতে সহায়ক। * পুষ্টিগুণ: ফাইবার, প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং বি ভিটামিন।
- পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ: ওজন কমানোর জন্য চালের ধরন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই এর পরিমাণও জরুরি। যেকোনো চালেরই অতিরিক্ত গ্রহণ ওজন বাড়াতে পারে। একবারে অল্প পরিমাণে ভাত খান।
- সুষম খাবার: শুধু ভাত নয়, ভাতের সাথে পর্যাপ্ত প্রোটিন (যেমন - মাছ, মুরগি, ডাল, ডিম) এবং প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি (ফাইবার সমৃদ্ধ) যোগ করুন। এতে পেট ভরা থাকবে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টিও পাওয়া যাবে।
- ঠান্ডা ভাত: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ভাত রান্না করার পর ঠাণ্ডা করলে তাতে রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চ (Resistant Starch) তৈরি হয়, যা হজম হতে বেশি সময় নেয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে আবার গরম করে ভাত খেলে এটি কিছুটা রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চ তৈরি করে।
- সাদা চালের বিকল্প: যদি ব্রাউন, লাল বা কালো চাল পাওয়া কঠিন হয়, তাহলে সাদা চালের পরিবর্তে বাসমতী চাল ব্যবহার করতে পারেন, কারণ এর জিআই তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম। তবে এটি ব্রাউন রাইসের মতো ফাইবার সমৃদ্ধ নয়।