মাছের সঙ্গে বাঙালির সম্পর্কটি চিরন্তন। ভাতের পাতে আর কিছু থাক বা না থাক, এক টুকরো মাছ হলেই যেন খাওয়া সম্পূর্ণ হয় অনেকের। কোলেস্টেরলের ভয়ে যাঁরা পাঁঠার ঝোল খাওয়া ছেড়েছেন, তাঁরা কিন্তু কালোজিরে দেওয়া পাতলা রুইয়ের ঝোল সোনামুখ করেই খেয়ে নেন। হার্টের রোগ থেকে ডায়াবিটিস, রেড মিটে নিষেধাজ্ঞা জারি হলেও মাছে কিন্তু আপত্তি করেন না চিকিৎসকেরা। তাই বাঙালির মাছ যে কোনও অসুখে পথ্য হিসেবেও উপকারে লাগে। সে সর্ষে দিয়ে ভাপা বা রগরগে ঝাল না-ই বা হল, হালকা পাতলা মাছের ঝোল কিন্তু শরীরের জন্য পুষ্টিকরই বটে। ওজন কমাতে যাঁরা মাছ, মাংস, ডিমের মতো প্রোটিন খাবেন বলে ভাবছেন, কিন্তু উচ্চ কোলেস্টেরলের ভয়ে ডিম বা মাংস খেতে পারছেন না, তাঁরা নিশ্চিন্তে মাছের উপর ভরসা রাখতেই পারেন। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, চিকেন বেশি খাওয়া নাকি ক্ষতিকর। বিশেষ করে, গ্রিল্ড চিকেন খেলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি। এতে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। তার চেয়ে মাছ ভাল। বাঙালির পাতের পাঁচ রকম মাছ ওজন কমাতে ও খনিজের ঘাটতি পূরণে বিশেষ ভূমিকা নিতে পারে।
ওজন কমানোর কথা এলেই কর্ড, ম্যাকারেল বা সার্ডিন, টুনার মতো মাছের নাম মনে আসে। এই সব মাছ এখানে সহজলভ্য নয়। কিন্তু বাড়িতে যে সব মাছ রান্না হয়, তাদের অনেকেরই কিন্তু মেদ ঝরানো, খারাপ কোলেস্টেরল কমানো ও ভিটামিন এ, ডি, ই-র ঘাটতি পূরণের ক্ষমতা আছে। সেগুলি কী কী, জেনে নেওয়া যাক।
কোন কোন মাছ খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে
রুই
রোজের রান্নার মাছের মধ্যে রুই থাকেই। আর রুই মাছ কিন্তু প্রোটিন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ। এই মাছ শরীরের প্রদাহ কমাতে পারে, খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমাতে পারে। রুইতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি, ক্যালশিয়াম ও আয়রন থাকে, যা পুষ্টি উপাদানগুলির ঘাটতি মেটাতে পারে। সব্জি দিয়ে রুই মাছের পাতলা ঝোল নিয়মিত খেলে শরীরে বাড়তি ক্যালোরি ঢুকবে না।
আরও পড়ুন:
ইলিশ
অনেকেই ভাবেন, ইলিশ খেলে ওজন বাড়ে। তা কিন্তু একেবারেই নয়। ইলিশ মাছে ভাল পরিমাণে ভিটামিন ডি ও ক্যালশিয়াম থাকে। ইলিশ মাছ প্রদাহনাশক, এতে আয়রনের মাত্রা বেশি। ইলিশ খেলে শরীরের বাড়তি ক্যালোরি ঝরে, হজম ভাল হয়। ইলিশে কিন্তু ভিটামিন সি-ও থাকে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তবে ওজন কমানোর ইচ্ছা থাকলে একগাদা সর্ষেবাটা নয়, কালোজিরে দিয়ে হালকা করে ঝোল খেলেই উপকার হবে।
কাতলা
কাতলা মাছে প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে, যা ওজন কমানোর পক্ষে সহায়ক। চিকিৎসকেরা বলেন, হার্টের স্বাস্থ্যের জন্যও ভাল কাতলা মাছ।
পমফ্রেট
পমফ্রেটে ক্যালোরি খুব কম। এতে প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ভিটামিন ডি, বি১২, এ রয়েছে, যা শরীরের জন্য ভাল। পমফ্রেটে ওমেগা-৩এস ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা হজমক্ষমতা বাড়ায়, মেদ ঝরায়। ওজন কমাতে চাইলে সব্জি দিয়ে বা বেক্ড পমফ্রেট খেতে পারেন। তবে খুব বেশি তেল বা সস্ দিয়ে রান্না করে খেলে হবে না।
বাসা মাছ
বাসা মাছেও ক্যালোরি খুব কম। প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট রয়েছে। তবে বাসা ফ্রাই নয়, বেক করে খেলে উপকার হবে। ‘লো কার্ব’ বা কিটো ডায়েট করছেন যাঁরা, তাঁরাও ডায়েটে রাখতে পারেন বাসা মাছ। এটি খেলে খনিজ উপাদানগুলির ঘাটতি মিটবে, ক্যালোরিও বাড়বে না।