গত কয়েক বছরে বাঙালি হেঁশেলও স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে মাখানা। বিশেষত স্বাস্থ্য সচেতন পরিবারে। হবে না-ই বা কেন? মাখানায় রয়েছে ভাল মানের ফাইবার, যা অন্ত্র ভাল রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও প্রোটিন, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়ামের মতো খনিজ রয়েছে মাখানায়। যেহেতু মাখানায় ম্যাগনেশিয়াম রয়েছে, তাই হার্ট ভাল রাখতেও সাহায্য করে এটি। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে ভরপুর মাখানার গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও কম। তাই ডায়াবেটিকদের জন্য এই খাবার নিরাপদ। কিম্পফেরল নামক এক ধরনের উপাদান থাকায় মখানা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরিও বটে।
ওজন কমাতে, সুস্থ থাকতে, অস্বাস্থ্যকর খাওয়ার প্রবণতা কমাতে তাই মাখানাতেই ভরসা করছে তরুণ প্রজন্ম। কিন্তু পুষ্টিগুণে ভরা মাখানা কি সকলেই খেতে পারে? পুষ্টিবিদ অনন্যা ভৌমিক বলছেন, ‘‘আট থেকে আশি, সকলেই এটি খেতে পারেন। ডায়াবেটিকদের জন্যও মাখানা ভাল।’’ পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, সুস্থ যে কেউ এই খাবার খেতে পারেন। ফাইবার প্রচুর। প্রোটিন মেলে এতে। তবে দুই পুষ্টিবিদই বলছেন, কোনও কোনও ক্ষেত্রে মাখানা বুঝে খাওয়া দরকার। সকলের জন্যই তা সমান ভাল নয়।
কাদের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে?
বেঙ্গালুরুর একটি হাসপাতালের পুষ্টিবিদ এডউইনা রাজ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘কিডনিতে পাথর যাঁদের আগে হয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এ নিয়ে একটু সচেতনতা দরকার। মাখানায় রয়েছে অক্সালেট। যদিও তার মাত্রা খুব বেশি নয়। কিন্তু বেশি পরিমাণ অক্সালেট কিডনিতে পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।’’ অনন্যা বলছেন,‘‘ মাখানায় পটাশিয়াম এবং ক্যালিশায়ম, দুই খনিজই মেলে। তাই কিডনির সমস্যা থাকলে মাখানা বুঝেশুনে খেতে হয়।’’ কিডনির কোনও অসুখ বা স্টোনের ইতহাস থাকলে মাখানা কম খাওয়াই ভাল, মত শম্পার।
কোষ্ঠকাঠিন্য: ফাইবার থাকলেও কারও কারও ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা তৈরি করতে পারে এটি। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা যদি মাখানা থেকে হয়, তা হলে এই খাবার কম খাওয়া বা বাদ দেওয়া ভাল।
অ্যালার্জি: কারও কারও বাদামে অ্যালার্জি থাকে। সে ক্ষেত্রে অনেক সময় মাখানা বাদ দিতে বলা হয়।
শম্পা সতর্ক করছেন, মাখানা উপকারী হলেও, বেশি পরিমাণে ঘি বা মাখন দিয়ে ভাজলে এর ক্যালোরির মাত্রাও বাড়বে। অনেকে এটি দুধ-চিনি দিয়ে পায়েস করে খান খান। ওজন কমাতে চাইলে বা ডায়াবিটিস থাকলে চিনি দিয়ে মাখানা খাওয়ার প্রবণতা ক্ষতিকর হতে পারে। অনন্যার মতে, রক্তচাপ বেশি থাকলে নুন দিয়ে মাখানা নেড়েচেড়ে খাওয়াও ঠিক নয়।
পুষ্টিবিদেরা সতর্ক করছেন, উপকারী হলেও মাখানা পরিমিত খাওয়াই ভাল। বেশি খেলেই উপকার হবে, এমন নয়।