বেদানা এবং আমলকি— দুটিই উপকারী ফল এবং পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ। অ্যান্থোসায়ানিন এবং পুনিক্যালাজিনস নামক অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে ভরপুর বেদানা। কথায় আছে, বেদানা খেলে শরীরে রক্ত হয়। সে কথাও ভুল নয়, কারণ এতে রয়েছে আয়রনের মতো খনিজ। অন্য দিকে, আমলকি আকারে ছোট হলেও পুষ্টিগুণে টেক্কা দিতে পারে বেদানাকে। ভিটামিন সি, ই, অ্যান্টি—অক্সিড্যান্টে ভরপুর এই ফলও।
আরও পড়ুন:
কিন্তু কথা হল, দুই ফলের রস একসঙ্গে মিশিয়ে খেলে কি বাড়তি উপকার হবে? সচেতন ভাবেই কি তা খাওয়া উচিত? দিল্লির দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদ অঞ্জলি মুখোপাধ্যায় মাঝমধ্যেই সমাজমাধ্যমে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ দেন। তিনি বলছেন, দুই উপকরণ মিশিয়ে নিলে এর পুষ্টিগুণ বেড়ে যেতে পারে কয়েক গুণ।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে: বেদানা এবং আমলকি ভিটামিন সি, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে পূর্ণ। দুই ফলের রস একসঙ্গে মিশলে ভিটামিন, খনিজের মাত্রা বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। শীত জাঁকিয়ে পড়ার আগে মরসুম বদলের সময় অনেকেই জ্বর—সর্দিতে ভোগেন। ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এই সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। বেদানায় ফোলেট রয়েছে, যা লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তা ছাড়া, অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল রাখতেও সাহায্য করে এই ফলে থাকা ফাইবার।
ত্বকের জেল্লা বৃদ্ধি করে: বেদানা এবং আমলকি অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে পূর্ণ। আমাদের শরীরের ক্ষতি করে ফ্রি র্যাডিক্যালস। কম বয়সে, বার্ধক্যের ছাপ পড়ার নেপথ্যে থাকে ক্ষতিকর র্যাডিক্যালস। আমলকির রসে থাকা ভিটামিন সি, ই ত্বকের অন্যতম জরুরি প্রোটিন কোলাজেনের মাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। বেদানায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ত্বকের বর্ম হিসাবে কাজ করে। ফলে নিয়মিত এই রস খেলে চুল এবং ত্বকের জেল্লা বাড়তে বাধ্য।
লিভারের জন্য ভাল: পেটের চিকিৎসক জোসেফ সালহাব এক সাক্ষাৎকারে জানাচ্ছেন, বেদানায় থাকা পলিফেনলস এবং ফ্ল্যাভোনয়েডস লিভারকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়।ফ্রি র্যাডিক্যালস লিভার-সহ অন্য প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে। সেই ক্ষতি রুখতে পারে বেদানার রস।আমলকিতে থাকা বিভিন্ন উপাদান, লিভারে ফ্যাট জমতে বাধা দেয়, বিপাকক্রিয়া ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
হার্ট ভাল রাখে: আমলকির রসে ভিটামিন, খনিজ ছাড়াও নানা উপাদান রয়েছে। লিপিড-প্রোফাইলেন মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে ফলটি কার্যকর। অন্য দিকে, বেদানা রক্তাল্পতা কমাতে সাহায্য করে। কোষে কোষে অক্সিজেন সংবহনে সাহায্য করে বেদানায় থাকা আয়রন। হার্ট ভাল রাখতে দুই ফলের রস ভীষণ কার্যকর।
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা: মস্তিষ্ক যাতে ভাল ভাবে কাজ করে সে জন্য দুই ফলে থাকা উপাদানই কার্যকর। বেদানা প্রদাহ কমাতে এবং মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এই ধরনের ফল অ্যালঝাইমারের মতো স্মৃতিনাশের অসুখ বশে রাখতে সাহায্য করে। স্নায়ুতন্ত্রের কাজে সাহায্য করে আমলকিও।
কী ভাবে বানাবেন?
বেদানা এবং আমলকির রস খাওয়ারও নিয়ম আছে। পুষ্টিবিদ অঞ্জলি মুখোপাধ্যায় বলছেন, এ জন্য লাগবে এক কাপ বেদানা, একটি আমলকি, সামান্য সৈন্ধব নুন এবং চাটমশলা। বেদানা এবং আমলকি রস করে ছেঁকে নিন। নুন এবং চাটমশলা যোগ করে তা খান। নিয়মিত খেলে শরীর সতেজ থাকবে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে।