E-Paper

রান্নার গ্যাস নেই, বাংলার গ্রামে অনেক পরিবারেই উনুন জ্বালাতে এখনও ভরসা কাঠকুটো

কেন্দ্রীয় সরকারের সমীক্ষাও বলছে, দেশে শহরের ৮৯ শতাংশ পরিবার রান্নার গ্যাস ব্যবহার করলেও গ্রামের মাত্র ৪৯.৪ শতাংশ পরিবার রান্নার গ্যাস ব্যবহার করছে।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৩ ০৬:৫৩
Picture of woman.

গ্রামের ৭৬ শতাংশ পরিবারেই রান্না হচ্ছে কাঠকুটো, শুকনো ডালপালা বা খড়কুটো জ্বালিয়ে। ফাইল চিত্র।

রান্নার গ্যাস তো দূরের কথা। পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে চার ভাগের মধ্যে তিন ভাগ পরিবারেই রান্নার উনুন জ্বালাতে এখনও কাঠকুটো, শুকনো ডালপালা বা খড়কুটোই ভরসা। শহরাঞ্চলে প্রায় ৭৬ শতাংশ পরিবারের রান্নাঘরে গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহার হয় ঠিকই। কিন্তু গ্রামে গেলেই ছবিটা উল্টে যায়। গ্রামের ৭৬ শতাংশ পরিবারেই রান্না হচ্ছে কাঠকুটো, শুকনো ডালপালা বা খড়কুটো জ্বালিয়ে। মাত্র ২১ শতাংশের মতো পরিবারই রান্নার গ্যাস ব্যবহার করছে।

প্রায় সাত বছর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উজ্জ্বলা যোজনা চালু করেছিলেন। লক্ষ্য ছিল, গরিব পরিবারের মহিলাদের নিখরচায় রান্নার গ্যাসের সংযোগ দেওয়া। কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান মন্ত্রকের সদ্য প্রকাশিত জাতীয় নমুনা সমীক্ষা বলছে, উজ্জ্বলা যোজনার সাত বছর পরেও গোটা দেশে গ্রামাঞ্চলের অর্ধেকেরও কম পরিবারে রান্নার গ্যাসে রান্নাবান্না হচ্ছে।

এত দিন মহিলাদের ভোট কুড়োতে বিজেপি নেতারা প্রচারে বলেছিলেন, রান্নার উনুনের ধোঁয়া থেকে মহিলাদের শরীরে দিনে ৪০০টি সিগারেটের সমান ধোঁয়া ঢোকে। প্রধানমন্ত্রী তা থেকে মহিলাদের রক্ষা করেছেন। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, রান্নার গ্যাসের সংযোগ নিখরচায় পেলেও মোদী জমানায় এক হাজার টাকা পার করে ফেলা সিলিন্ডার গরিবদের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছে। বাধ্য হয়ে গরিবরা ফের গ্যাসের উনুন ছেড়ে কাঠকুটো জ্বালাচ্ছেন।

কেন্দ্রীয় সরকারের সমীক্ষাও বলছে, দেশে শহরের ৮৯ শতাংশ পরিবার রান্নার গ্যাস ব্যবহার করলেও গ্রামের মাত্র ৪৯.৪ শতাংশ পরিবার রান্নার গ্যাস ব্যবহার করছে। কাঠ, শুকনো ডাল, খড়কুটোয় কাজ চালাচ্ছে শতকরা ৪৬.৭ ভাগ পরিবার। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে ছবিটা আরও করুণ। এ রাজ্যের গ্রামের ৭৬ শতাংশ পরিবারই কাঠ বা খড়কুটোয় রান্না করছেন। কয়লা, ঘুঁটে বা কেরোসিন কেনার সামর্থ্যও তাঁদের নেই।

এই মাপকাঠিতে গোটা দেশে একমাত্র ছত্তীসগঢ়ের অবস্থা পশ্চিমবঙ্গের থেকেও খারাপ। ছত্তীসগঢ়ে গ্রামের ৮৪ শতাংশের বেশি পরিবারে কাঠকুটোয় রান্না হয়। বিহার, ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যের হালও পশ্চিমবঙ্গের থেকে ভাল। প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশা অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে একই জায়গায় রয়েছে।

কেন পশ্চিমবঙ্গের হাল অন্যান্য রাজ্যের থেকে খারাপ?

জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থার এক কর্তা বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে কলকাতা বাদ দিলে গ্রামের মানুষের মাথাপিছু আয় এমনিতেই কম। কোভিডের ধাক্কায় রোজগার কমে যাওয়ার ফলে রাজ্যের গরিব পরিবার আরও বেশি সমস্যায় পড়েছেন। তা ছাড়া বেশ কিছু দিন ধরেই দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে মূল্যবৃদ্ধির হার অধিকাংশ রাজ্যের থেকে বেশি। বিশেষত গ্রামে। ফলে গ্রামের গরিব মানুষের সংসার চালানো আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। দামি এলপিজি সিলিন্ডার ছেড়ে তাঁদের কাঠকুটো জ্বেলেই ভাত রাঁধতে হচ্ছে।’’

এর ফলে অন্য একটি সমস্যাও বাড়ছে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। তা হল, কাঠকুটোয় রান্না করলে হলে মহিলাদেরই ভোরে উঠে তা জোগাড় করতে বের হতে হচ্ছে। ফলে রান্নার ধোঁয়ার সঙ্গে বাড়তি পরিশ্রমের ধকল নিতে হচ্ছে। সংসারের কাজ সামলে বাড়তি রোজগারের জন্য সময়ও কমে যাচ্ছে। সেটা মাথাপিছু আয় কমিয়ে দিচ্ছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Fuel gas village

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy