Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মোদীকে নিরামিষ রান্না করে খাওয়াতে পারেন অভিজিৎ

অর্থনীতিতে ঝিমুনির ফলে গাড়ি শিল্পের মতো ক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ কর্মীর চাকরি যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

তৃপ্ত: দিল্লির অনুষ্ঠানে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার। ছবি: প্রেম সিংহ

তৃপ্ত: দিল্লির অনুষ্ঠানে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার। ছবি: প্রেম সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:২৮
Share: Save:

রসুন ও পেঁয়াজ ছাড়া একেবারে বাঙালি নিরামিষ রান্না। নরেন্দ্র মোদী বস্টনে গেলে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে তেমন পদ রান্না করে খাওয়াতে পারেন বলে জানালেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আগামিকাল সকালে সাক্ষাতের আগে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের মত, এ দেশে কাজ হারানো কর্মীদের পরের চাকরি পাওয়া পর্যন্ত আর্থিক সাহায্য দিতে তহবিল তৈরি প্রয়োজন।

অর্থনীতিতে ঝিমুনির ফলে গাড়ি শিল্পের মতো ক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ কর্মীর চাকরি যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আবার শিল্প মহল চাইছে, মোদী সরকার দ্রুত শ্রম আইনের সংস্কার করুক, যাতে শিল্প ক্ষেত্রে যখন যেমন প্রয়োজন, তখন তেমন কর্মী নিয়োগ করা যেতে পারে। আজ দিল্লিতে তাঁর নতুন বই প্রকাশ অনুষ্ঠানের পরে এক আলাপচারিতায় অভিজিৎ বলেন, এমন তহবিল তৈরি প্রয়োজন, যা থেকে কাজ হারানো শ্রমিকদের পরের চাকরি পাওয়া না পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। ওই টাকায় কাজ হারানো শ্রমিকদের প্রশিক্ষণেরও বন্দোবস্ত হবে। তবে যে শিল্প সংস্থা ছাঁটাই করছে, তাদের উপরে এর

পুরো দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়ার পক্ষে তিনি নন।

দারিদ্র দূরীকরণ নিয়ে গবেষণা অভিজিৎকে নোবেল এনে দিয়েছে। প্রশ্ন ছিল, এ দেশে দারিদ্র দূরীকরণের একটি লক্ষ্য স্থির করতে হলে তা কোনটা হওয়া দরকার? অভিজিতের জবাব, শিক্ষার মান বাড়ানো। তাঁর কথায়, ‘‘আমি সহজাত প্রবণতা থেকে শিক্ষার মান বাড়ানো নিয়ে চিন্তা করি।’’ নোবেল-জয়ী এস্থার দুফলোও একই চিন্তা করেন বলে জানিয়ে অভিজিতের সরস মন্তব্য, ‘‘এমনি এমনিই আমাদের বিয়েটা হয়নি।’’

মোদী সরকারের মন্ত্রী পীযূষ গয়াল ইতিমধ্যেই অভিজিৎকে ‘বাম ঘেঁষা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। আজ অবশ্য এ দেশের রাজনীতিতে নিজের অবস্থান ‘লেফট-অব-দ্য-সেন্টার’-এ বলেই জানিয়েছেন অভিজিৎ। তা বলে এ দেশে ভোট দিতে হলে কাকে ভোট দেবেন, তা খোলসা করতে চাননি। গোঁড়া বাম ধারণার সমালোচনা করে তাঁর যুক্তি, বাজার অর্থনীতিতে সকলের কল্যাণ হয় না ঠিকই। কিন্তু তা সরকারের খারাপ কাজের থেকে ভাল। তাঁর মতে, ‘‘বামেরা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে তাদের ছাড়া যাবে না। ভিন্ন মত জানানোর অধিকারের পক্ষে দাঁড়ানোও জরুরি।’’ বর্তমানে মার্কিন নাগরিক অভিজিৎ অবশ্য আমেরিকার রাজনীতিতে নিজেকে ‘লেফট ডেমোক্র্যাট’ বলেই মনে করেন। আমেরিকার ভোটের আগে অভিজিতের ‘স্বীকারোক্তি’, ম্যাসাচুসেটসের ডেমোক্র্যাট সেনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন এখন তাঁর ‘সুইট স্পট’-এ রয়েছেন।

অভিজিৎ জানান, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে গিয়ে মোদী সরকার নিজেকে অদ্ভূত অবস্থানে নিয়ে গিয়েছে। চাষিদের সহায়ক মূল্য বাড়ানো হচ্ছে না। অথচ চাষিরা সঙ্কটে পড়লে ‘পিএম-কিষাণ’ প্রকল্পে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। সরকারের আয় বাড়াতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে অভিজিতের যুক্তি, আজকে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেচে দিলে আগামিকাল তো আর বেচার কিছু থাকবে না। কাজেই এটা দীর্ঘমেয়াদি সমাধান

নয়। রাজকোষ ঘাটতি কমিয়ে সরকারের আয় বাড়াতে ফের কর্পোরেট কর বাড়ানোর পক্ষেই রায় দিচ্ছেন অভিজিৎ।

তবে মোদী সরকারের ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পের প্রশংসা করে তিনি বলেন, পকেট থেকে চিকিৎসার খরচ দিতে হলে মানুষকে ঘটিবাটি বেচতে হয়। অবশ্য আয়ুষ্মান ভারতে যে যথেষ্ট জালিয়াতির সম্ভাবনা রয়েছে, তা মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্নের মুখে আজ নিজেকে ফের পেশাদার অর্থনীতিবিদ হিসেবে পরিচয় দিয়ে অভিজিতের যুক্তি, ‘‘আমি তো গুজরাতে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও কাজ করেছিলাম। পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও কাজ করেছি।’’

কোনটা বেশি মজার ছিল? মুচকি হেসে অভিজিতের জবাব, ‘‘কিছু প্রশ্নের জবাব না দেওয়ার অধিকার আমার রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Abhijit Banerjee Bengali Food Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE