উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে ২১ জুলাই ইস্তফা দেওয়ার পর থেকে আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি জগদীপ ধনখড়কে। স্বাভাবিক ভাবেই তিনি কোথায়, কী ভাবে সময় কাটাচ্ছেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তো বটেই, জনমানসেও কৌতূহল তৈরি হয়েছে। ইস্তফাপত্রে শারীরিক অসুস্থতার কারণ জানিয়েছিলেন ধনখড়। তাই তাঁর শরীর-স্বাস্থ্য কেমন রয়েছে, তা নিয়েও জল্পনা ছড়ায়। বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় কেন্দ্রের শাসকশিবিরকে। এই আবহে এক ইংরেজি দৈনিকের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সুস্থই রয়েছেন ধনখড়। ওটিটি সিরিজ় দেখে, টেনিস খেলে আর যোগাসন করে অবসর কাটাচ্ছেন তিনি।
ওই প্রতিবেদন অনুসারে, দেশের উপরাষ্ট্রপতি হিসাবে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস থেকে দিল্লির যে বাসভবনে থাকছিলেন তিনি, এখনও সেখানেই রয়েছেন ধনখড়। ইস্তফা দেওয়ার পর বাসভবন লাগোয়া সচিবালয়ে খুব কমই যান বলে জানানো হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। সেখানে এ-ও বলা হয়েছে, নতুন বাংলোয় যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন ধনখড় দম্পতি। ২১ জুলাইয়ের পর থেকে জিনিসপত্র গোছানোর কাজ শুরু করে দিয়েছেন তাঁরা। নতুন বাংলো বরাদ্দ করা হলেই তাঁরা সেখানে উঠে যাবেন বলে জানা গিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতিও সরকারি বাংলো, সরকারি গাড়ি এবং নিরাপত্তারক্ষী পেয়ে থাকেন।
প্রতিবেদন অনুসারে, ধনখড় সরকারি বাসভবনের বাইরে না-বেরোলেও প্রায়ই সড়কপথে রাজস্থানে যাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী সুদেশ ধনখড়। সম্প্রতি তিন বার রাজস্থানে গিয়েছেন তিনি। সরকারি গাড়িতে নয়, পরিবারের নতুন গাড়়ি চেপেই রাজস্থানে গিয়েছেন ধনখড়-ঘরনি। কিন্তু কেন? জানা যাচ্ছে, জয়পুর বিমানবন্দর থেকে মাত্র ১৫ মিনিটের দূরত্বে, নিউ সাঙ্গানের রোড এলাকায় ধনখড়দের মালিকানাধীন জমিতে দু’টি বহুতল আবাসন মাথা তুলছে। এই কাজের দেখভাল করছেন, এমন এক জনকে উদ্ধৃত করে ওই ইংরেজি দৈনিক জানিয়েছে, দু’টি বহুতলই বিভিন্ন অফিসকে ভাড়া দেওয়া হবে। একটি বহুতলে বিভিন্ন সংস্থার অফিস থাকবে, আর একটি বহুতল একটি সংস্থাকে ভাড়া দেওয়া হবে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দু’টি বহুতলের আয়তনই প্রায় ৩৭০০ স্কোয়্যার মিটার। কিছু দিন আগেও একটির সামনে সাইনবোর্ড ছিল। তাতে লেখা ছিল ‘কামনা ফার্মহাউস’। প্রসঙ্গত, কামনা ধনখড় দম্পতির কন্যার নাম। নির্মীয়মাণ বহুতলের সামনে চা বিক্রি করা এক জনকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, আগে লম্বা কনভয় নিয়ে নির্মাণকাজ তদারকি করতে আসতেন ধনখড়ের স্ত্রী। ধনখড় উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর কনভয়ে গাড়ির সংখ্যা কমেছে।
অন্য দিকে, ধনখড়ের সচিবালয়ের এক কর্মীকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে যোগাসন করেন প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি ধনখড়। সন্ধ্যায় প্রায়ই বাসভবনের ভিতরের স্পোর্টস কমপ্লেক্সে টেবিল টেনিস খেলতে দেখা যায় তাঁকে। ধনখড়ের কন্যা কামনা গুরুগ্রামে থাকেন। প্রায় প্রতি দিনই সেখান থেকে মা-বাবার সঙ্গে দেখা করতে তিনি দিল্লি যান।
ধনখড় পেশায় একজন আইনজীবী। রাজনীতিতে আসার পর তাঁর ব্যস্ততা বেড়েছিল। সাংবিধানিক দায়িত্ব পাওয়ার পর সেই ব্যস্ততা আরও বাড়ে। উপরাষ্ট্রপতি হওয়ার পর রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসাবে সংসদের উচ্চ কক্ষের ‘হেডমাস্টার’ ছিলেন তিনিই। যোগ দিতেন বিভিন্ন আলোচনাসভায়। এখন অবশ্য ঢিমেতালেই তাঁর দিন কাটে বলে জানানো হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। আইনজীবী ধনখড়ের সময় কাটে ওটিটি মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং ‘আইনি’ থ্রিলার দেখে।
সম্প্রতি রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, “কেন উনি (ধনখড়়) ইস্তফা দিলেন, তা নিয়ে একটা বড় গল্প রয়েছে। কেন তিনি লুকিয়ে রয়েছেন, এটাও আর একটা গল্পের বিষয়। যিনি রাজ্যসভায় এত কথা বললেন তিনি হঠাৎ চলে গেলেন এবং পুরো চুপ হয়ে গেলেন!” সোমবার অবশ্য একটি সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ‘‘তিনি (ধনখড়) সংবিধান অনুযায়ী দারুণ কাজ করেছেন। স্বাস্থ্যের কারণে পদত্যাগ করেছেন। এই বিষয়ে অতিরিক্ত নাড়াঘাঁটা করে কিছু খুঁজতে না যাওয়াই উচিত। ধনখড় সাহেবের ইস্তফাপত্রে সব বলা আছে। উনি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কারণ জানিয়ে পদত্যাগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী এবং অন্য মন্ত্রীদের ধন্যবাদও জানিয়েছেন।”