নিয়মের তোয়াক্কা না-করেই ভারত এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পশুপাখি সংগ্রহ করে নিয়ে আসা হয়েছে! এমনই অভিযোগ উঠেছে গুজরাতে মুকেশ অম্বানীদের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র ‘বনতারা’র বিরুদ্ধে। এই অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখতে সোমবার বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করেছে সুপ্রিম কোর্ট। তদন্তকারী দলের মাথায় রয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জাস্তি চেলমেশ্বর। তা ছাড়াও উত্তরাখণ্ড এবং তেলঙ্গানা হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাঘবেন্দ্র চৌহান রয়েছেন এই দলে। সিট-এর অন্য দুই সদস্যের এক জন আইপিএস আধিকারিক, অন্য জন আইআরএস আধিকারিক।
‘বনতারা’-র বিরুদ্ধে মামলাকারীদের অভিযোগ, সেখানে থাকা পশুপাখিদের যথাযথ ভাবে পরিচর্যা করা হচ্ছে না। পশুপাখি নিয়ে আসার ক্ষেত্রে আর্থিক অনিয়ম হয়েছে বলেও অভিযোগ তাঁদের। তা ছাড়া ভারতের কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের নিয়ম এবং বিরল প্রাণীদের সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্তরে যে মান্য বিধি রয়েছে, তা লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে দাবি মামলাকারীদের। মামলাকারীরা নিজেদের দাবির সমর্থনে বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন তুলে ধরেন।
এই পরিস্থিতিতে অম্বানীদের ওই বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ কেন্দ্রে কী ভাবে কাজ হচ্ছে, সেখানে ভারত সরকারের বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইন মানা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখে সিট-কে রিপোর্ট দিতে বলেছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পঙ্কজ মিথল এবং পিবি ভরালের বেঞ্চ। ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে সিট-কে। ‘বনতারা’র বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তারা জলের অপব্যবহার করছে। সেই বিষয়টিও সিট-কে খতিয়ে দেখতে বলেছে শীর্ষ আদালত।
আরও পড়ুন:
সিট গঠনের পর এই বিষয়ে মুখ খুলেছেন ‘বনতারা’ কর্তৃপক্ষ। একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, “বনতারা স্বচ্ছতা এবং আইন মেনে চলার বিষয়ে দায়বদ্ধ। আমাদের লক্ষ্যই হল প্রাণীদের উদ্ধার করে তাদের পুনর্বাসন দেওয়া এবং যত্ন নেওয়া। আমরা বিশেষ তদন্তকারী দলের সঙ্গে সম্পূর্ণ ভাবে সহযোগিতা করে চলব এবং আমাদের কাজ গুরুত্ব সহকারে পালন করব।” বিষয়টি নিয়ে জল্পনা তৈরি না-করার আর্জিও জানানো হয়েছে তাঁদের তরফে।
গুজরাতের জামনগরে অবস্থিত ‘বনতারা’ দু’হাজারেরও বেশি প্রজাতির প্রাণীর আশ্রয়স্থল। দেড় লক্ষেরও বেশি প্রাণী রয়েছে বনতারায়, যার মধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার করা এবং বিপন্ন প্রাণীরাও রয়েছে। গত মার্চে এটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বনতারার বন্যপ্রাণী হাসপাতাল এবং পশুচিকিৎসা কেন্দ্রগুলিতে প্রাণীদের শুশ্রূষার জন্য এমআরআই, সিটি স্ক্যান, আইসিইউ-এর ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে বন্যপ্রাণীদের জন্য অ্যানাস্থেশিয়া, কার্ডিয়োলজি, নেফ্রোলজি, এন্ডোস্কোপি, দন্তচিকিৎসার ব্যবস্থা। এই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রটির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন মুকেশের কনিষ্ঠ পুত্র অনন্ত অম্বানী।