Advertisement
E-Paper

লোকসভা নির্বাচনে ধাক্কা! কিন্তু পরের চার বিধানসভা ভোটে ৩-১ জয়, মোদীর রথচক্র-গতি আবার দুর্বার

রাজধানীতে শেষ ‘গেরুয়া ঝড়’ উঠেছিল ১৯৯৮ সালে। দিল্লির প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হন সুষমা স্বরাজ। তার আগে ১৯৯৬ সালে ১৬১টি আসন জিতে লোকসভায় সবচেয়ে বড় দল হয়ে উঠেছিল বিজেপি।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:১৪
BJP

ভোটের ফলের পর বিজেপির সদর দফতরে উচ্ছ্বাস। ছবি: এএফপি।

লোকসভা ভোটকে ‘সূচক’ ধরে নরেন্দ্র মোদীর ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করতে শুরু করেছিল বিরোধী শিবির। দেখা গেল, লোকসভা ভোটের পর দেশের চারটি বিধানসভা ভোটে মোদীর ‘স্কোরকার্ড’ বরং উন্নত। ঝাড়খণ্ডকে ব্যতিক্রম ধরলে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা এবং শনিবারের দিল্লি মোদী তথা বিজেপিকে ৩-১ ফলাফলে এগিয়ে রাখল।

২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে অনেকটাই খারাপ ফল হয়েছিল বিজেপির। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতাও পাননি মোদী। ‘অব কি বার, চারশো পার’ স্লোগান দিয়ে একক ভাবে মাত্রই ২৪০টি আসন পেয়েছিল মোদী-শাহের দল। শেষ পর্যন্ত ৩০০ আসনের গণ্ডি টপকাতে পারেনি তাদের নেতৃত্বাধীন এনডিএ। শরিকদের সহযোগিতা নিয়ে কেন্দ্রে সরকার গঠন করতে হয়েছিল বিজেপিকে। বিরোধী শিবিরের আশাবাদী অংশ তাকে বিজেপির পক্ষে ‘অশনি সঙ্কেত’ বলেই মনে করেছিলেন। তাঁদের ভবিষ্যদ্বাণী ছিল, অতঃপর দেশের যে ক’টি বিধানসভা ভোট হবে, সব ক’টিতে হারবে বিজেপি। একধাপ এগিয়ে সদ্য-পরাজিত অরবিন্দ কেজরীওয়াল বলেছিলেন, ‘‘আমাদের হারাতে হলে মোদীজিকে পুনর্জন্ম নিতে হবে!’’

পুনর্জন্মই হল বিজেপির। হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র এবং রাজধানী দিল্লিতে। শেষটিতে দীর্ঘ ২৭ বছর পরে।

লোকসভায় ধাক্কার পরে পদ্মশিবিরের কাছে প্রথম ‘অক্সিজেন’ ছিল হরিয়ানা বিধানসভা ভোটের ফল। কান ঘেঁষে জয় পেলেও জয় তো বটে। কৃষক আন্দোলনের আঁচ, বিনেশ ফোগাটের ‘বঞ্চনা’, বিজেপি নেতা তথা সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে হরিয়ানার মহিলা কুস্তিগিরদের তোলা যৌন হেনস্থার অভিযোগ, চুক্তিভিত্তিক সেনা নিয়োগের ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প ঘিরে ক্ষোভের ছায়ার ‘প্রতিফলন’ হরিয়ানার বিধানসভা ভোটে দেখা যায়নি। টানা এক দশক ক্ষমতায় থাকার পরেও ‘প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া’-র মোকাবিলা করে হরিয়ানায় নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পেয়েছিল বিজেপি। ৯০টি আসনের মধ্যে তারা পেয়েছিল ৪৮টি আসন।

গত বছর নভেম্বরে ভোট হয়েছিল মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ডে। দেশের ‘ধনীতম’ রাজ্য মহারাষ্ট্রের ভোটপ্রচারে ‘এক হ্যায় তো সেফ হ্যায়’ (একজোট থাকলে নিরাপদে থাকা যাবে) স্লোগান তুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। শেষ পর্যন্ত জুটির জোরেই ‘ছন্নছাড়া’ বিরোধী জোটকে পরাস্ত করেছিল বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ। ২৮৮ আসনের মহারাষ্ট্র বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জাদুসংখ্যা ছিল ১৪৫। বিজেপি নেতৃত্বাধীন ‘মহাজুটি’র প্রাপ্তি ছিল ২৩৫টি আসন। বিজেপি পেয়েছিল ১৩২টি আসন। কিন্তু ‘বড় জয়’ পেয়েছিল বিজেপি তথা এনডিএ।

কিন্তু ঝাড়খণ্ডে থমকাতে হয়েছিল বিজেপিকে। লোকসভা ভোটে আদিবাসী প্রভাবিত যে রাজ্যে ১৪টি আসনের মধ্যে ৯টি আসনে জিতেছিল তারা, সেখানে হেমন্ত সোরেনের জেএমএমে ভাঙন ধরিয়ে চম্পই সোরেনকে দলে টেনে, বিদ্রোহী বাবুলাল মরান্ডিকে ফিরিয়ে এবং সুদেশ মাহাতোর আজসুর (অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়ন) সঙ্গে জোট গড়েও সুবিধা করতে পারেনি বিজেপি। কিন্তু ভোটের ফলাফল বলেছিল, আদিবাসীরা রয়েছেন হেমন্তের সঙ্গেই। বিজেপির বিরুদ্ধে তাঁর তোলা ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’র অভিযোগকে মান্যতা দিয়েছে আদিবাসী সমাজ। ঝাড়খন্ড বিধানসভার মোট আসন ৮১টি। সরকারে দরকার ৪১টি আসন। হেমন্তের জোট পেয়েছিল ৫৬টি আসন। বিজেপি জোট পেয়েছিল ২৪টি আসন। তার মধ্যে বিজেপি পেয়েছিল ২১টি।

অতঃপর দিল্লি। ৭০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে শনিবার সন্ধ্যার মধ্যেই ৪৪টিতে জয়ী ঘোষিত বিজেপি। মাত্র ২১টি আসন পেয়েছে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আম আদমি পার্টি (আপ)। রাজধানীতে শেষ বার বিজেপি জিতেছিল ১৯৯৮ সালে। দিল্লির প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হন সুষমা স্বরাজ। তার আগে ১৯৯৬ সালে ১৬১টি আসন জিতে লোকসভায় সবচেয়ে বড় দল হয়ে উঠেছিল বিজেপি। ২০২৫ সালে দীর্ঘ ২৭ বছর পরে আবার রাজধানীর মসনদের দখল নিয়েছে পদ্মশিবির।

ফলাফলে ধারা স্পষ্ট হতেই প্রধানমন্ত্রী মোদী দুপুরে বলে দিয়েছেন, ‘‘এই জয় উন্নয়নের জয়, সুশাসনের জয়।’’ তাঁর প্রতিশ্রুতি, ‘‘দিল্লির সার্বিক উন্নয়ন ও দিল্লিবাসীর জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য চেষ্টার কোনও কসুর করব না। এটাই আমাদের গ্যারান্টি। উন্নত ভারত গঠনে দিল্লি যাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তা নিশ্চিত করব।’’ বস্তুত, প্রায় তিন দশক পর দিল্লিজয় নতুন করে চাঙ্গা করেছে বিজেপিকে। নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীকেও।

ঠিকই বলেছিলেন কেজরীওয়াল। পুনর্জন্মই বটে।

Delhi Assembly Election 2025 Assembly Election Election Result BJP Narendra Modi AAP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy