৫০ শতাংশের উপর মানুষ দুশ্চিন্তা করছেন বুড়ো হলে কী ভাবে চিকিৎসা খরচ মেটাবেন তা নিয়ে।
চাপ আরও আছে। এই সঞ্চয়ের কোথাও কিন্তু সেই অঙ্ক কাজ করছে না, যেখানে দাঁড়িয়ে একজন সঞ্চয়কারী আগামী দিনের সেই হিসাব করছেন যেখানে মুল্যবৃদ্ধির সমস্যা আছে, আছে হঠাৎ প্রয়োজনের খরচের জন্য কিছুটা টাকা সরিয়ে রাখার হিসাব।
কিন্তু মজার ব্যাপার হল, যখন খরচের ব্যাপারে ‘আজকেই বাঁচি’ এই বোধ নিয়ে ভবিষ্যতের প্রয়োজনকে উড়িয়ে দিচ্ছি আমরা, তখন সেই আমরাই কিন্তু বলছি ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ৫০ শতাংশের উপর মানুষ দুশ্চিন্তা করছেন বুড়ো হলে কী ভাবে চিকিৎসা খরচ মেটাবেন তা নিয়ে। বলছেন, সন্তানদের উপর ভরসা করে লাভ নেই। অথচ এঁরাই কিন্তু জীবনযাপন যে ভাবে করছেন তাতে মনে হতেই পারে যে সন্তানরাই বার্ধক্যের বিমা।
এই দুশ্চিন্তার মূলে কিন্তু আরও একটা বোধ কাজ করছে। সমীক্ষাটি বলছে, অংশগ্রহণকারীরা সন্তানদের ভবিষ্যত্ নিয়ে খুব একটা আশার আলো দেখছেন না। যদিও সন্তানদের শিক্ষায়ই তাঁদের খরচের একটা বড় অংশ যায়। বিশেষ করে যাঁরা ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা মাসিক আয়ের মধ্যে আছেন।
আরও একটা মজার তথ্য উঠে এসেছে এই সমীক্ষায়। যাঁদের একের বেশি আয়ের উৎস তাঁরা কিন্তু অবসর জীবন নিয়ে অনেক নিশ্চিন্তে আছেন। আর যাঁদের সূত্র একটাই তাঁরা কিন্তু আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন আয়ের আরও কিছু সূত্র তৈরি করায়।
আরও পড়ুন: চিনের মানচিত্রে লাদাখ! টুইটারের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয় কেন্দ্র
এখানে একটা কথা মনে হওয়া স্বাভাবিক। চাকুরিজীবী কিন্তু ঘোর অনিশ্চয়তায় বাঁচছেন, দিশাহীন ভাবে। সঞ্চয় করলেও কী ভাবে তা করতে হবে তা নিয়ে কোনও স্পষ্ট ধারণাও তাঁদের নেই। সঞ্চয়ের বাজার কিন্তু খুব সহজ নয়। আমাদের জানা সেই জীবন বিমা আর ব্যাঙ্কের আমানতের বাইরেও কিন্তু আরও অনেক পথ আছে। তার জন্য প্রয়োজন বিশেষজ্ঞের। এতদিন সাধারণ মানুষ সঞ্চয় উপদেষ্টাদের এড়িয়েই চলতেন। অনেকেই জানতেন না যে সঞ্চয়ের জন্যও উপদেষ্টা পাওয়া যায়। ননদের ছেলে ব্যাঙ্কে চাকরি করলেও তিনি এ ব্যাপারে সব নাও জানতে পারেন।কিন্তু এখন অনেকেই খুঁজছেন ভাল উপদেষ্টা।
এই সমীক্ষায় আরও একটা চিন্তার কথা উঠে এসেছে। বেশিরভাগই জানেন, অবসরের পরে নির্ভর করতে হবে চাকুরিজীবনের সঞ্চয়ের উপরেই। কিন্তু এই প্রশ্নটার মুখোমুখি হওয়ার থেকে নিকট ভবিষ্যতের প্রয়োজন নিয়েই বেশি কথা বলতে আগ্রহী তাঁরা! উটপাখির মতোই মুখ আজকের সুখে গুঁজে।
আরও পড়ুন: আগামী সপ্তাহে অম্বালায় আরও তিনটি রাফাল, এপ্রিলে হাসিমারায়
এই আলোচনাকে গুটিয়ে আনলে যা দাঁড়ায় তা কিন্তু খুব একটা স্বস্তির নয়। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই ভারতের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ প্রবীণ নাগরিকের খাতায় নাম লেখাবেন। কিন্তু রান্নাঘরের আঁচ কী ভাবে জ্বলবে তা নিয়ে কোনও স্পষ্ট পরিকল্পনা গড়ে ওঠেনি। যদিও এ নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই, তবুও দিশার খোঁজে একটা বড় অংশ উপদেষ্টার কাছে যাননি। তবে হ্যাঁ, খোঁজ শুরু করেছেন উপদেষ্টার। বড় দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে বোধ ও বাস্তবের মধ্যে। যৌথ পরিবার ভাঙছে। বোধে ছিল সন্তান দেখবে। বাস্তব বলছে উল্টো কথা। কিন্তু যখন এই বাস্তব সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে ততদিনে হয়ত বড় সঞ্চয়ের সময়টা পার হয়ে গিয়েছে।
তাই আগামীতে কী ভাবে টিকবেন তা নিয়ে ভাবার সময় বোধহয় শুরু হওয়া উচিত কর্মজীবনের প্রথম দিন থেকেই। উপদেষ্টার পরামর্শ মেনেই। আর কয়েক বছরের মধ্যেই প্রবীণদের নিয়ে কিন্তু বড় সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে সরকারকেও। অতিমারি হয়ত শেষ হবে। কিন্তু এই সমস্যা থাকবেই। কুড়ে খাবে সামাজিক ঘুণপোকা হয়ে আমাদের সবাইকেই।