আট দিন আগেই অহমদাবাদে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারের বিমান। সর্দার বল্লভভাই পটেল বিমানবন্দর থেকে ব্রিটেনের উদ্দেশে উড়ে যাওয়ার কয়েক মিনিট পরেই সেটি ভেঙে পড়ে। বিমানে থাকা ২৪২ জনের মধ্যে ২৪১ জনেরই মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পর থেকেই কমতে শুরু করেছে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানের টিকিট বিক্রি। গত ছ’দিনে টিকিট বিক্রি ৩০-৩৫ শতাংশ কমে গিয়েছে। এমনটাই দাবি রিপোর্টে।
দুর্ঘটনার পর থেকেই এয়ার ইন্ডিয়ার পরিষেবা নিয়ে সমাজমাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দিতে শুরু করেন অনেকে। সমাজমাধ্যমে এ-ও জানাচ্ছিলেন, তাঁরা এতটাই ভীত যে, টিকিট বাতিল করতে বাধ্য হচ্ছেন। সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাস্তবে তা-ই ঘটছে বলে জানিয়েছেন বেসরকারি সংস্থা ‘ব্লু স্টার এয়ার ট্র্যাভেল সার্ভিসেস (ইন্ডিয়া)’-এর কর্ণধার মাধব ওজ়া। তাঁর বক্তব্য, নতুন বুকিংও সে ভাবে হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘নতুন বুকিং ৩০-৩৫ শতাংশ কমে গিয়েছে।’’
শুধু তা-ই নয়, ‘এনডিটিভি প্রফিট’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্ঘটনার পর এয়ার ইন্ডিয়ার ২০ শতাংশেরও বেশি টিকিট বাতিল হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন ভ্রমণ সংস্থা। যদিও ‘ওয়ান্ডারঅন’ নামে আর একটি ভ্রমণ সংস্থার কর্ণধার গোবিন্দ গৌরের দাবি, টিকিট বাতিলের হার ২০ শতাংশ না হলেও তা ৫-৭ শতাংশ হবেই। তিনি এনডিটিভি-কে বলেছেন, ‘‘এয়ার ইন্ডিয়ায় টিকিট বাতিল হচ্ছে। যাত্রীরা অন্য বিমান সংস্থার টিকিট কাটতে চাইছেন।’’
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যাত্রীদের এয়ার ইন্ডিয়া থেকে মুখ ফেরানোর মূলত দু’টি কারণ লক্ষ করা গিয়েছে। এক, উড়ান সংস্থাটির নাম এয়ার ইন্ডিয়া এবং তাদের ‘বোয়িং’ বিমান। দুই, মানুষ ভীষণ ভাবে আতঙ্কিত।
বিভিন্ন ভ্রমণ সংস্থার কর্তা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পর এ রকম ঘটেনি যে, সাধারণ মানুষ তাঁদের বিদেশে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনাই বাতিল করে দিচ্ছেন। এয়ার ইন্ডিয়ায় টিকিট বাতিলের যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা অন্য বিমান সংস্থার ক্ষেত্রেও সেই ভাবে ঘটছে না। তাঁদের মতে, অহমদাবাদের দুর্ঘটনা অবশ্যই সবচেয়ে বড় কারণ। তবে ওই ঘটনার পর বেশ কয়েকটি বিমান বাতিল, যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ার কারণে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানগুলির আবার বিমানবন্দরে ফিরে আসা— এই সব কিছু যাত্রীর মনে বিস্তর প্রভাব ফেলেছে। দাবি, গত ৪৮ ঘণ্টায় এয়ার ইন্ডিয়ার ন’টি বিমান বাতিল হয়েছে। সেগুলির মধ্যে অধিকাংশই বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার।
অথচ ১৪ বছর আগে প্রথম বার আকাশে ওড়া আমেরিকার সংস্থা বোয়িং-এর তৈরি এই বিমানকে সুরক্ষার দিক থেকে ‘সেরা’ বলা হয়। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, অহমদাবাদ কাণ্ডের আগে কখনও এই বিমান এত বড় দুর্ঘটনার কবলে পড়েনি।
অহমদাবাদের দুর্ঘটনার পর টাটা গোষ্ঠীর উড়ান পরিষেবা সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার হাতে থাকা সমস্ত ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৮ এবং ৭৮৭-৯ বিমানের নিরাপত্তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে দেশের অসামরিক বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রক ডিজিসিএ। বর্তমানে এয়ার ইন্ডিয়ার ২৬টি বোয়িং ৭৮৭-৮ এবং সাতটি ৭৮৭-৯ বিমান রয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া বলেছে, ‘‘২৬টি বিমানের নিরাপত্তা খতিয়ে দেখার কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলির নিরাপত্তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’