কেন্দ্রের কাছে আবেদন ফাইল চিত্র
আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু ও শিখ শরণার্থীদের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে (সিএএ)ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার দাবি জানাল শিরোমণি অকালি দল। পঞ্জাবের ভোটের মুখে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে বিজেপিও। সে ক্ষেত্রে সিএএ-তে কিছু সংশোধনী নিয়ে আসার প্রয়োজন হবে।
অকালি নেতা ও দিল্লি শিখ গুরুদ্বার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মনজিন্দর এস সিরসা আজ সিএএ-তে নাগরিকত্ব দেওয়ার সময়সীমা ২০১৪ থেকে বাড়িয়ে ২০২১ করার জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। যাতে আফগানিস্তান থেকে আসা শরণার্থীরা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানাতে পারেন। কাবুল থেকে পালিয়ে আসার সময়ে শিখ নেতারা আজ ভারতে নিয়ে এসেছেন তিনটি গ্রন্থ সাহিব। শিখদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ রাখা হয়েছে দিল্লির নিউ মহাবীর নগরের গুরু অর্জুন দেবজী গুরুদ্বারে। কাবুল থেকে শরণার্থীদের উদ্ধার অভিযানকে ‘অপারেশন দেবী শক্তি’ নাম দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
গত ১৫ অগস্ট কাবুল দখল করে তালিবান। তারপর থেকে আফগানিস্তানে কর্মরত ভারতীয় ও সে দেশের শিখ ও হিন্দু নাগরিকদের পালিয়ে আসা অব্যাহত রয়েছে। আজও একটি বিমানে ৭৮ জন কাবুল থেকে ভারতে এসেছেন। এঁদের মধ্যে ২৫ জন ভারতীয়। শিখ শরণার্থী ৪৪ জন। যারা আফগানিস্তানের নাগরিক। কিন্তু তালিবান ক্ষমতায় ফেরায় ভারতে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু ও শিখ শরণার্থীদের সিএএ-র মাধ্যমে নাগরিকত্ব দিতে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন সিরসা। বছর ঘুরলেই পঞ্জাবে নির্বাচন। সে কথা মাথায় রেখেই প্রাক্তন শরিক অকালির দাবি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে মোদী সরকার। কৃষি আইনের কারণে পঞ্জাবের কৃষকদের বড় অংশ বিজেপির উপর ক্ষুব্ধ। এই পরিস্থিতিতে দল ভাবছে, শরণার্থী শিখদের নাগরিকত্ব দিলে সেই ক্ষতে অনেকটা মেরামতি হতে পারে।
সূত্রের মতে, এই কারণে পঞ্জাবের ভোটের আগে সিএএ সংশোধনের কথা ভাবছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলের এক নেতার ব্যাখ্যা, আইন সংশোধন করে আফগানিস্তান থেকে আসা শরণার্থী শিখদের নাগরিকত্ব দেওয়া হলে প্রতিবাদ করতে পারবে না কোনও দলই। যার ফলে বিজেপির রাজনৈতিক সুবিধা মিলবে। তবে আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে আসা মুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রশ্ন বিশ বাঁও জলে। আফগান মুসলিমদের নাগরিকত্ব দিতে আপত্তি রয়েছে বিজেপির একাংশের। তাঁদের মতে, এমন সিদ্ধান্ত নিলে বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী, মায়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার দাবি উঠবে।
দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসে নাগরিকত্ব আইনে সংশোধনী আনে কেন্দ্র। নতুন আইনে বলা হয়, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে ধর্মীয় অত্যাচারের শিকার হয়ে ছ’টি ধর্মাবলম্বী (হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, পার্সি, জৈন ও খ্রিস্টান) ব্যক্তিরা যদি ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতে আশ্রয় নিয়ে থাকেন, কেন্দ্র তাদের এ দেশের নাগরিকত্ব প্রদান করবে। ধর্মের ভিত্তিতে হওয়া আইনে সে সময়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিল কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধী দলগুলি। শুরু হয়েছিল প্রতিবাদ-আন্দোলন। সেই সময়ে এনডিএ-র শরিক হয়েও ওই আইনের বিরোধিতা করেছিল অকালি। যুক্তি ছিল, সিএএ-র মাধ্যমে ধর্মীয় ভেদাভেদ করা হচ্ছে। আফগানিস্তানের ঘটনার পর অবশ্য সেই অকালির পক্ষ থেকেই সিরসা নাগরিকত্ব দেওয়ার সময়সীমা ২০২১ করার দাবি তুলেছেন। অকালির অবস্থান পরিবর্তন নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। দলের তথ্যপ্রযুক্তি শাখার প্রধান অমিত মালবীয়ের কথায়, ‘‘দেরিতে হলেও বিরোধীরা বুঝতে পারছেন, কেন মানবিক ওই আইনের প্রয়োজন ছিল। অথচ, পঞ্জাব বিধানসভায় কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অকালি সিএএ বিরোধী প্রস্তাব পাশ করেছিল।’’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ পুরীর কথায়, কেন সিএএ প্রয়োজন, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আফগানিস্তান সমস্যা।
এ দিকে, কাবুল থেকে পালিয়ে আসা অব্যাহত রয়েছে। বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, সে দেশের শিখ ও হিন্দুদের উদ্ধার করতে কেন্দ্র যে অভিযান চালাচ্ছে, তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন দেবী শক্তি’। এ নিয়ে আজ পর্যন্ত কাবুল থেকে ৮০০ জনকে উড়িয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। আজকের দলটি তাঁদের সঙ্গে তিনটি গ্রন্থ সাহিব নিয়ে আসেন। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গ্রহণ করতে দিল্লি বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ পুরী ও ভি মুরলীধরণ ও বিজেপি মুখপাত্র আর পি সিংহ। তাঁদের বিমানের দরজা থেকে মাথায় করে গ্রন্থ সাহিব নিয়ে আসতে দেখা যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy