সংঘর্ষবিরতি হলেও পাকিস্তানের সঙ্গে কখনওই সিন্ধু জলচুক্তি পুনর্বহাল করবে না ভারত। এ বার সরাসরি এ কথা জানিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তানকে দেওয়া জল এ বার ভারত তার অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনে ব্যবহার করবে।’’
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের পরে সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করেছিল নয়াদিল্লি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারের সেই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ চেয়ে সক্রিয় হয়েছে পাকিস্তান। পাশাপাশি, সিন্ধু এবং তার দুই উপনদীর জল না পেলে ভারতের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, ‘‘সিন্ধুর জল আটকানো হলে তা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে ধরা হবে।’’
আরও পড়ুন:
সিন্ধু-সংঘাতের এই আবহে শাহের মন্তব্য, ‘‘আমরা একটি খাল খনন করে পাকিস্তানে প্রবাহিত জল রাজস্থানে নিয়ে যাব। পাকিস্তান অন্যায়ভাবে যে জল পাচ্ছে, তা আর পাবে না।’’ প্রসঙ্গত, টানা ন’বছর আলোচনার পরে ১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং তৎকালীন পাক প্রেসিডেন্ট জেনারেল আয়ুব খানের মধ্যে সিন্ধু নদীর জল বণ্টন সংক্রান্ত চুক্তি সই হয়েছিল। পাকিস্তানের করাচি শহরে গিয়ে এই চুক্তিপত্রে সই করেছিলেন পণ্ডিত নেহরু। ওই চুক্তি অনুযায়ী, পূর্ব দিকের তিনটি নদী, অর্থাৎ বিপাশা (বিয়াস), ইরাবতী (রাভি) ও শতদ্রু (সতলুজ়)-র জলের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে ভারতের। অন্য দিকে, পশ্চিমমুখী সিন্ধু (ইন্ডাস), চন্দ্রভাগা (চেনাব) ও বিতস্তার (ঝিলম) জল ব্যবহার করতে পারবে পাকিস্তান।
জলের নিরিখে সিন্ধু এবং তার শাখা ও উপনদী মিলিয়ে ৩০ শতাংশ ভারত ও ৭০ শতাংশ পাকিস্তান পাবে বলে বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তিতে বলা হয়েছিল। তবে পশ্চিমের তিন নদীর জলের উপর অধিকার না থাকলেও চুক্তি অনুযায়ী তা থেকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে বাধা নেই ভারতের। তাই চুক্তি মেনেই ওই নদীগুলির উপর বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের পর সেই বাঁধগুলির স্লুইস গেট বন্ধ করে জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ শুরু করেছে নয়াদিল্লি। যা নিয়ে তীব্র আপত্তি তুলেছে ইসলামাবাদ। এ বার উত্তেজনার সেই আবহেই শাহের ঘোষণা, ‘‘সিন্ধু জলচুক্তি নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আর কোনও আলোচনাতেই বসব না আমরা।’’