Advertisement
E-Paper

Birju Maharaj: একসঙ্গে আমেরিকা পাড়ি, রাজি করান ভাইয়াই

নয়াদিল্লির কামানি অডিটোরিয়ামের পাশে এখন যেখানে ভারতীয় কলা কেন্দ্র, আগে সেখানে ছিল ফিরোজ শাহ হাটমন্ডস নামে এক কলোনি।

আমজাদ আলি খান

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:০৩

আজ মন ফিরে চলেছে বহু দশক আগের এক সময়ে। সেই ১৯৫৮ সাল, বাবার হাত ধরে দিল্লি আসার দিনে। বিরজু ভাইয়ার সঙ্গে পরিচয়, আলাপ এবং অন্তরঙ্গতা গড়ে ওঠার দিনে। কবেকার সে সব কথা!

নয়াদিল্লির কামানি অডিটোরিয়ামের পাশে এখন যেখানে ভারতীয় কলা কেন্দ্র, আগে সেখানে ছিল ফিরোজ শাহ হাটমন্ডস নামে এক কলোনি। সেখানেই তখন চলত কলা কেন্দ্রের কাজ। সেখানে বিরজু ভাইয়ার চাচাজি শম্ভু মহারাজ কত্থক শেখাতেন। বিরজু মহারাজও ক্লাস নিতেন। সেই তখন থেকেই আমার ওঁর সঙ্গে আলাপ। বয়সে আমার চেয়ে বড়, আর উনি ছিলেন আমার বড় ভাইয়ের মতো। আমি বিরজু ভাইয়া বলেই ডাকা শুরু করি। সেই সম্বোধন আজীবন থেকে গিয়েছে।

আমাদের পারিবারিক যোগসূত্র আরও পুরনো। রামপুরের নবাব হামিদ আলি খানের দরবারের দুই সঙ্গীতশিল্পী (কোর্ট মিউজিশিয়ান) ছিলেন আমার বাবা স্বর্গত হাফিজ আলি খান এবং বিরজু ভাইয়ার বাবা পণ্ডিত আচ্চান মহারাজ। আমাদের আগের প্রজন্মের মেলবন্ধন সেই তখন থেকেই। আচ্চান মহারাজরা ছিলেন তিন ভাই। তিনি নিজে, শম্ভু মহারাজ যাঁর কথা আগেই বলেছি, আর লাচ্চু মহারাজ। যিনি পরবর্তীকালে মুম্বইয়েই থেকে যান। যখন তাঁর সঙ্গে ১৯৫৮ সালে আমার দেখা হয়, তখন থেকেই লাচ্চু মহারাজের মুম্বইয়ে নিয়মিত যাওয়া আসা। মুঘল-ই-আজ়ম ছবির ‘মোহে পনঘট পে’ গানটির সঙ্গে নাচের কোরিওগ্রাফি লাচ্চু মহারাজেরই করা।

লাচ্চু মহারাজ আমাকে বিশেষ স্নেহ করতেন। বলতেন, ‘‘তোমায় আমি মুম্বই নিয়ে যাব, ওখানে সিনেমা অভিনেতা বানিয়ে দেব!’’ তো এ হেন লাচ্চু মহারাজ এক দিন আমার হাত পাকড়ে ধরে বড়ই ভালবেসে কত্থক শেখাতে লেগেছেন! আমি শিখতে চাইছি কি চাইছি না, সে সবের তোয়াক্কা না করেই! হঠাৎ দেখা গেল, দূর থেকে বাবা আসছেন! বাবাকে এঁরা একটু সমীহ করতেন। বাবা এঁদের থেকে বয়সেও বড়। উনি জানতেন বাবা আমার কত্থক শিক্ষাকে অনুমোদন করবেন না। বাবাকে আসতে দেখেই তাই লাচ্চু বললেন, ‘পালাও পালাও, খান সাব আসছেন!’

বিরজু ভাই কত্থক নাচকে অন্য মাত্রা দিয়েছিলেন। উনি তবলা বাজাতেন, গানও গাইতেন। এক কথায় উনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভা। আমরা একসঙ্গে কত রেওয়াজ করেছি ঘণ্টার পর ঘণ্টা। উনি ঘুঙুর পরে তৎকারের প্রদর্শন করতেন, আমি ঝালা বাজাতাম। ১৯৬৩ সালে প্রথম আমরা একসঙ্গে আমেরিকা যাই। সে-ও এক পর্ব! বাবা তো কিছুতেই যেতে দেবেন না। বাবার ভয় ছিল, বিমানে চড়া নিয়ে। নিজে কখনও সেই ভয়ে বিমানে চড়তেন না। বাড়ির সর্বকনিষ্ঠ হিসাবে আমাকে নিয়েও দুশ্চিন্তা ছিল। বিরুজু ভাই-ই বলেকয়ে বাবাকে রাজি করান। আমরা দু’মাস আমেরিকায় সফর করি এশিয়া সোসাইটির আমন্ত্রণে। শর্ত ছিল, আমি ওঁর নাচের সঙ্গে বাজাব। আবার উনি আমার বাজনার সঙ্গে তবলা সঙ্গত করবেন।

এক বার একটি অনুষ্ঠানে ‘এরিনা স্টেজ’-এ বাজাতে হবে। অর্থাৎ, আমাদের ঘিরে গোল করে দর্শকাসন। আমরা তো ভাবছি, কোন দিকে মুখ করে বাজাই! শেষ পর্যন্ত আমরা পিঠোপিঠি বসে বাজিয়েছিলাম। আমি সরোদ, বিরজু ভাইয়া তবলা।

বিরজু ভাইয়ের চলে যাওয়াটা আমার কাছে স্বজনবিয়োগের মতো। আমরা সব সময় আড্ডা মারতাম, হাসি ঠাট্টা করতাম। উনি বড় ভাইয়ের পাশাপাশি তো আমার বন্ধুও ছিলেন। কত ভাল আর চটুল জোক আমরা ভাগ করে হাসাহাসি করেছি! বাবার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে কলকাতায় ১৯৭৩ সালে কলামন্দিরে ১৭দিন ধরে সঙ্গীত সম্মেলন হয়। বিরজু ভাই নেচেছিলেন সেখানে। ওনার নাচের মাধ্যমে এমন এক বিভা ছড়িয়ে পড়ত যে, বড় বড় গাইয়ে-বাজিয়েরাও বসে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখতেন। অনেকেই জানেন না বিরজু ভাইয়ের সরোদের শখের কথা। আমায় কখনও বলেননি, কিন্তু আমার প্রিয় শিষ্যদের সঙ্গে ভাব জমিয়ে তাঁদের কাছ থেকে শিখে নিয়েছিলেন সরোদ। একা একা বাজাতেন।

আমার হৃদয়ে চিরকাল থেকে যাবেন বিরজু ভাইয়া।

অনুলিখন: অগ্নি রায়

Amjad Ali Khan Birju Maharaj
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy