Advertisement
E-Paper

দ্বিধাথরথর সিপিএম, ৫ ঘণ্টা পর এল শোকবার্তা

প্রশ্ন উঠছে, কেন এমন অসৌজন্যমূলক আচরণ করল সিপিএম? সোমনাথের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের প্রয়াণে শোকবার্তা তাড়াতাড়ি প্রকাশ করলে দাস ক্যাপিটালের ক’টি পৃষ্ঠা বিবর্ণ হয়ে যেত!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৮ ১৩:২৩
তা হলে কি কোথাও দ্বিধা ছিল সিপিএমের মধ্যে?

তা হলে কি কোথাও দ্বিধা ছিল সিপিএমের মধ্যে?

শেষ পর্যন্ত সীতারাম ইয়েচুরি এলেন। সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পৌঁছলেন সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুরাও। শোকজ্ঞাপন করল পলিটব্যুরো। কিন্তু তত ক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।

ঠিক ১০ বছর আগে দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। বহিষ্কৃত সেই সিপিএম নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় আজ সোমবার প্রয়াত হয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘ চার দশক ধরে তিনি যে দলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন, সেই সিপিএমের পলিটব্যুরোর তরফে এ দিন দুপুর পর্যন্ত কোনও শোকবার্তা প্রকাশ করা হয়নি। পরে বেলা দেড়টা নাগাদ এক শোকবার্তা প্রকাশ করা হয়। তত ক্ষণে কেটে গিয়েছে প্রায় সওয়া পাঁচ ঘণ্টা!

প্রশ্ন উঠছে, কেন এমন অসৌজন্যমূলক আচরণ করল সিপিএম? সোমনাথের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের প্রয়াণে শোকবার্তা তাড়াতাড়ি প্রকাশ করলে দাস ক্যাপিটালের ক’টি পৃষ্ঠা বিবর্ণ হয়ে যেত! তা হলে কি কোথাও দ্বিধা ছিল সিপিএমের মধ্যে?

কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এটাই হল সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সিপিএম দলের ফারাক। এই ফারাকের কারণেই সিপিএমে আর থাকা হয়নি সোমনাথবাবুর। সিপিএম অত্যন্ত নিম্নমানের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে। ওঁদের মধ্যে বিস্তর সঙ্কীর্ণতা রয়েছে। সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় ওই সব সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে ছিলেন। তিনি দলের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। তাই দলের চেয়ে সংবিধানের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা বেশি ছিল। আজ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পরেও সিপিএম নিজেদের সঙ্কীর্ণতার প্রমাণ দিল। সোমনাথবাবুর মৃত্যুসংবাদ পেয়ে আমি সকালেই হাসপাতালে গিয়েছিলাম মরদেহে শ্রদ্ধা জানাতে। সেখানে দেখলাম সব দলের রাজনীতিকরা রয়েছেন, বহু সাধারণ মানুষ ভিড় জমিয়েছেন। কিন্তু সিপিএম নেতাদের মধ্যে মাত্র দু’তিন জনকে দেখতে পেলাম। এতেই বোঝা যায়, সিপিএমের অসৌজন্য কী সাংঘাতিক।’’

বঙ্গ সিপিএম যদিও প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথবাবুর মৃত্যুর ঘণ্টা দুয়েক পর শোকজ্ঞাপন করেছে। পাশাপাশি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও টুইট করেছেন। তবে, সেটাও সোমনাথবাবুর প্রয়াণের খবর আসার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর। দু’ক্ষেত্রেই সোমনাথবাবুকে প্রাক্তন স্পিকার বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সীতারাম যদিও এক ধাপ এগিয়ে ‘সোমনাথদা’ সম্বোধন করে তাঁকে ১০ বারের সাংসদ বলে লিখেছেন। দলের কেন্দ্রীয় কমিটি নিয়ন্ত্রিত টুইটার হ্যান্ডল থেকে সোমনাথের প্রয়াণ প্রসঙ্গে বেলা দেড়টা নাগাদ এক শোকবার্তা প্রকাশ করা হয়। অথচ, গত ৭ অগস্ট প্রয়াত হয়েছিলেন এডিএমকে নেতা এম করুণানিধি। ওই দিন সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ মারা গিয়েছিলেন তিনি। তার ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই সিপিএমের ওই হ্যান্ডলের তরফে টুইট করা হয়। ‘কলাইনার’-এর প্রয়াণে তারা গভীর শোকপ্রকাশ করে। বঙ্গ সিপিএম সেই টুইটই পরের দিন রিটুইট করেছিল। কিন্তু সপ্তাহ ঘুরতেই যখন তাদের প্রাক্তন সহযোদ্ধার মৃত্যু হল, তখন কেন এত ক্ষণ ধরে নীরব সিপিএম? সোমনাথবাবুকে বহিষ্কার করা হয়েছিল বলেই কি দল এমন মৌনী ছিল!

আরও পড়ুন
দলের নির্দেশ অমান্য করেছিলেন সংসদীয় দায়িত্ববোধ থেকেই

সিপিএমের একটা সূত্র যদিও বলছে, এ দিন সকালে সোমনাথবাবুর মৃত্যুর পরেই দলীয় নেতারা একে অপরের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন। দলের তরফে আদৌ কোনও বিবৃতি দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে পড়েন শীর্ষ নেতারা। দলের একটা বড় অংশ মনে করেন, সোমনাথের মতো নেতার মৃত্যুতে শোকবার্তা প্রকাশ করা উচিত। কিন্তু অন্য একটা অংশের মত, এত তিক্ততার পরে এ সবের আর কী প্রয়োজন! দলের সঙ্গে তো তাঁর কোনও সম্পর্কই ছিল না। তা হলে দল কেন শোকবার্তা প্রকাশ করবে! যদিও সব দ্বিধা, প্রশ্ন কাটিয়ে এ দিন দুপুরে পলিটব্যুরোর তরফে টুইট করা হয়। সেখানে লেখা হয়, ‘লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার এবং ১০ বারের সাংসদ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে সিপিএম পলিটব্যুরো গভীর দুঃখপ্রকাশ করছে। ভারতীয় সংবিধানের বিশেষত তার গণতান্ত্রিক, ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মর্যাদা রক্ষায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।’

এর আগে এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ টুইট করে শোকবার্তা প্রকাশ করেন সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি লেখেন, ‘আমাদের প্রাক্তন স্পিকার এবং ১০ বারের নির্বাচিত সাংসদ সোমনাথদার মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোকাহত। তাঁর পরিবাবের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাই।’ সিপিএমের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি নিয়ন্ত্রিত টুইটার হ্যান্ডল থেকে এক শোকবার্তা এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ প্রকাশ করা হয়। সেখানে লেখা হয়, ‘লোকসভার প্রাক্তন স্পিকারের মৃত্যুতে আমরা গভীর ভাবে শোকাহত।’’ এর পরেই হ্যাশ ট্যাগে লেখা #সোমনাথচ্যাটার্জী এবং #কলকাতা। সিপিএমের একটি সূত্রের দাবি, এ দিন দলের রাজ্য সদর দফতর আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে একটি বৈঠক ছিল। সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে সেই বৈঠক মুলতুবি করা হয়েছে।

১৯৮৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে যাদবপুর কেন্দ্রে সোমনাথবাবুকে হারিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মমতাই এখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। সোমনাথবাবুর মৃত্যুর খবর পেয়ে এ দিন সকালেই দক্ষিণ কলকাতার যে বেসরকারি হাসপাতালে তিনি মারা গিয়েছেন, সেখানে পৌঁছন মমতা। শেষযাত্রায় সোমনাথকে বিধানসভায় গান স্যালুট জানানো হবে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, বিরোধী রাজনীতির এক কাণ্ডারীকে যদি তাঁর এক কালের প্রতিপক্ষ এ ভাবে সম্মান জানাতে পারেন, তা হলে এক কালের সহযোদ্ধা সোমনাথকে নিয়ে শোকবার্তা জ্ঞাপনের ক্ষেত্রেও এমন দ্বিধাথরথর কেন সিপিএম?

আরও পড়ুন
সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ রাজনৈতিক মহল

কংগ্রেসের এক নেতা যদিও বলছেন, ‘‘এই সোমনাথবাবুকে দল থেকে বার করে দেওয়ার পর আরএসপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রচূড়ন তাঁকে ‘মীরজাফর’ বলেছিলেন। ফরোয়ার্ড ব্লকের দেবব্রত বিশ্বাস বলেছিলেন ‘বুর্জোয়া’। কেরলের পিনারাই বিজয়ন তাঁকে ‘প্রতারক’ বলেছিলেন। এর পর কোন মুখে বামেরা সোমনাথবাবুর প্রয়াণে শোকবার্তা জানাবে!’’

Somnath Chatterjee CPM central committee সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় CPM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy